সকল অহঙ্কার হে আমার

“আমাদের সময়ে আমরা এইসব স্টলওয়ার্টদের পেয়েছি আর নিংড়ে নিয়েছি। যতটা পারা যায় শিখে নিতাম। ওঁরাও খুব ভালবেসে শেখাতেন, দরকারে বকাঝকাও করতেন। এখন আর আমি কাকে কী শেখাব? আজকাল তো সবাই সব জানে।”

সেদিন যথাসময়ে অফিসে ঢুকে দেখি, অনেক দেরি করে ফেলেছি। নিউজরুম আলো করে বসে আছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

তখন ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ তে কাজ করি। কলকাতা সংস্করণের অধুনা প্রয়াত রেসিডেন্ট এডিটর সুমিত সেন সৌমিত্রবাবুর স্নেহভাজন ছিলেন বলে শুনেছি। সেই সুবাদেই টাইমসের অফিসে আসা। আসবেন জানতাম না। যখন পৌঁছেছি, তখন তাঁর প্রায় ফেরার সময় হয়ে গেছে। ভাগ্যিস আমার মত আরো অনেকেরই আশ মেটেনি সেদিন। তাই কিছুদিন পরেই আরেকবার তিনি আসবেন বলে কথা হল।

সে দিন আসতে আসতে আরো বছর খানেক কি দেড়েক। আগেরবার এসে শুনেছি গটগট করে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেছিলেন। এবার একতলাতেই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ঐ মানুষটিকে আগে কয়েকবার রবীন্দ্র সদন, বিমানবন্দর ইত্যাদি জায়গায় বহুদূর থেকে দেখেছি। দু হাত দূরত্ব থেকে সেদিন দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আড্ডার মেজাজে কথা হল, অনেকে অনেক প্রশ্ন করলেন, আমারও অনেক কথা জিজ্ঞেস করার ছিল। কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজই বেরোল না। বেরোবে কী করে? কেবল আমার কান তো তাঁর কথা শুনছিল না, আমার প্রতিটি রোমকূপ শুনছিল।

তিনি যা যা বললেন তার মধ্যে অনেক কথা বহুবার বহু জায়গায় বলেছেন বা লিখেছেন। আজকের কাগজগুলোতেও সেসব বিলক্ষণ পাওয়া যাবে। যা আমাকে সবচেয়ে চমৎকৃত করেছিল, সেটা বলি। কারণ সেগুলো আর কোথাও পড়েছি বা শুনেছি বলে মনে পড়ছে না।

বলছিলেন অগ্রজ শিল্পীদের কথা। শিশির ভাদুড়ি, অহীন্দ্র চৌধুরী থেকে ছবি বিশ্বাসে এসে দীর্ঘক্ষণ বললেন। সত্যি কথা বলতে, নিজের অভিনয় নিয়ে যা বললেন সেগুলো সবই নানাজনের প্রশ্নের উত্তরে। তার চেয়ে অনেক বেশি কথা বললেন ছবি বিশ্বাসের সম্বন্ধে। কেবল ছবি বিশ্বাসের অভিনয় প্রতিভা নয়, বললেন তাঁর অসম্ভব পরিশ্রম করার ক্ষমতা নিয়েও। ছবি বিশ্বাসের জীবনের শেষ দিকে কোন এক ছবিতে দুজনের একটা দীর্ঘ দৃশ্য ছিল।

“লম্বা সিন, আর সংলাপগুলোও খুব লম্বা লম্বা। আমি বারবার ভুল করছি আর শট এন জি হয়ে যাচ্ছে। ছবিদার তখন শরীরটা এমনিই বেশ খারাপ। ঐ সিনটাতে আবার সুট বুট পরা, অথচ তখন অসম্ভব গরম। শট ওকে হচ্ছে না বলে ফ্যান চালানোও যাচ্ছে না। ফলে ওঁর আরো শরীর খারাপ লাগছে, ক্রমশ রেগে যাচ্ছেন। শেষে পরিচালক বললেন ‘আমরা একটু ব্রেক নিই, আপনারা একটু রেস্ট নিয়ে নিন। তারপর আবার চেষ্টা করা যাবে।’ আমি ছবিদার সাথে বসে সারেন্ডার করলাম। বললাম ‘দেখছেন তো পারছি না। দিন না বাবা একটু দেখিয়ে?’ উনি সেই বিখ্যাত গম্ভীর গলায় বললেন ‘বুঝতে পেরেছ তাহলে’? তারপর তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন ‘তুমি আমার ডায়লগ বলো, আমি তোমার ডায়লগ বলছি।’ তারপর অতবড় সিন গোটাটা রিহার্সাল করালেন, মুভমেন্টগুলোও শুধরে দিলেন। তারপর নিজের নিজের ডায়লগ বলিয়ে আবার করালেন। শেষে ডিরেক্টরকে ডেকে এনে শট নেওয়ালেন, শট ওকে হল।

আমি অবাক হয়ে গেলাম শরীরের ঐ অবস্থাতেও ওরকম উদ্যম দেখে। তাছাড়া আমার একটা অহঙ্কার ছিল, আমার সংলাপ সবসময় মুখস্থ থাকে। সেই অহঙ্কারটাও চুরমার হয়ে গেল। কারণ দেখলাম ছবিদার শুধু নিজের নয়, আমার ডায়লগও হুবহু মুখস্থ। বরং আমি দু এক জায়গায় ভুল করে ফেলেছিলাম, উনি ধমকালেন ‘কী যে করো তোমরা! ডায়লগ মুখস্থ রাখতে পারো না?”

প্রবাদপ্রতিম অভিনেতার মুখে এই গল্পটা শুনে আশ্চর্য লেগেছিল, কিভাবে আমাদের সামনে নিজের ত্রুটিগুলো অকপটে বললেন! অগ্রজ অভিনেতার কাছ থেকে কত শিখেছেন সেটাও কেমন সবিস্তারে বললেন! অথচ কত সহজ ছিল “আমি এই, আমি তাই, আমি সেই” বলা। সেরকম বলার মত যথেষ্ট কীর্তি তো তাঁর ছিলই। অবশ্য হয়ত আমরা এই প্রজন্মের লোক বলেই আমাদের এত অবাক লাগে। সৌমিত্রবাবু তো বললেনই “আমাদের সময়ে আমরা এইসব স্টলওয়ার্টদের পেয়েছি আর নিংড়ে নিয়েছি। যতটা পারা যায় শিখে নিতাম। ওঁরাও খুব ভালবেসে শেখাতেন, দরকারে বকাঝকাও করতেন। এখন আর আমি কাকে কী শেখাব? আজকাল তো সবাই সব জানে।”

“নিজেরে করিতে গৌরব দান নিজেরে কেবলি করি অপমান” কথাটা আমরা ভুলে গেছি। তাই কলকাতার ফিল্মোৎসবে সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, তপন সিংহ, উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বা মাধবী মুখোপাধ্যায়ের কাট আউট ঝোলে না। ঝোলে আয়োজক প্রধান মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীরা অবশ্য আকাশ থেকে পড়েন না, আমাদের মধ্যে থেকেই উঠে আসেন। আমরা সবাই তো এখন আত্মরতিপ্রবণ। নইলে কোন বিখ্যাত মানুষ মারা গেলে সাংবাদিকরা কেন স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখবেন, “অমুক সালে যখন আমি তমুক এক্সক্লুসিভটা করে অমুক প্রোমোশনটা পেয়েছি…”? কেনই বা আসবে মৃত মানুষটি কবে কী কারণে লেখকের প্রশংসা করেছিলেন?

হে বাঙাল, ভুলিও না

এই মহাকাব্যিক ট্র‍্যাজেডিকে ১৯৮৯ এ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিপদের সাথে এক যোগে ব্যবহার করে যারা, তারা যে আসলে বাঙালদের যন্ত্রণারই লঘুকরণ করে

স্বাধীনতার আগে পূর্ববঙ্গে (অধুনা বাংলাদেশ) বসত ছিল এমন হিন্দু — চলতি কথায় বাঙাল। আমি এবং আমার বাবা আর মায়ের পরিবারগুলো যেমন। আমার স্ত্রীর বাবা, মায়ের পরিবারও। ভারতে হিন্দুত্ববাদের রমরমা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিয়ে আলাদা করে চর্চা অনেক বেড়ে গেছে। নতুন নাগরিকত্ব আইন এবং এন আর সি র আবহেও এদের নিয়ে ক্রমবর্ধমান চর্চা।

“হিন্দু খতরে মে হ্যায়” প্রমাণ করতে কিছুদিন হল কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সাথে এক নিঃশ্বাসে আমাদের কথা বলা হচ্ছে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের হত্যা ও উচ্ছেদ ঘটেছিল স্বাধীন দেশের একটি প্রদেশের একটি অঞ্চলে স্থানীয় প্রশাসনের মদতে। আর বাঙালদের দুর্দশার কারণ ছিল একটা পরাধীন দেশের দু টুকরো হওয়া। কয়েক লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এত বিপুল সংখ্যার মানুষের উচ্ছেদ হওয়ার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। এই মহাকাব্যিক ট্র‍্যাজেডিকে ১৯৮৯ এ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিপদের সাথে এক যোগে ব্যবহার করে যারা, তারা যে আসলে বাঙালদের যন্ত্রণারই লঘুকরণ করে সেই চেতনা আজকের বাঙালদের মধ্যে দেখতে পাই না। আরো যা দেখতে পাই না, তা হল দেশভাগের ফলে বহু মুসলমানকেও যে ভিটে ছাড়া হয়ে এ পার থেকে ও পারে যেতে হয়েছিল সেই স্বীকৃতি। স্বাধীনতার আগে পরে ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় সম্পত্তিহানি, প্রাণহানি, মেয়ে বউদের সম্মানহানির ইতিহাস যে তাদেরও আছে — সেই চেতনা। বোঝা যায় হিন্দুত্বের অপরবিদ্বেষী রাজনীতি আমাদের মস্তিষ্কে জাঁকিয়ে বসেছে।

আজকের বাঙাল, অর্থাৎ আমার মত ১৯৪৬-৪৭ না দেখা বাঙাল, এমনকি বাংলা ভাষার জন্যে লড়াই করে একটা আলাদা দেশ তৈরি হল যে যুদ্ধে, সেই ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধও নিজের চোখে না দেখা বাঙাল। তার কাছে গুরুজনদের মুখে শোনা “অরা আমাদের তাড়ায় দিছিল” কথাটুকুই কেবল আছে। তৎসহ ইতিহাস না পড়ার এবং ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ পড়ার অভ্যাস আছে। ফলত আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া খুব শক্ত হয় না যে ধর্মীয় নিপীড়নের বদলে পাল্টা নিপীড়নই উচিৎ কাজ। তাই সি এ এ, এন আর সি মিলিয়ে এ দেশের মুসলমানদের যদি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে দেওয়া হয় তো হোক, যদি দেশ থেকে তাড়ানো হয় তাতেও ক্ষতি নেই। “ওরাই তো আমাদের তাড়িয়েছিল” একটি যুক্তি হয়ে দাঁড়ায়। মানুষকে ভিটেমাটি ছাড়া করার সপক্ষে সাক্ষীগোপাল করা হয় ঋত্বিক ঘটককে, যিনি মানুষকে উদ্বাস্তু বানানোর বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার প্রতিবাদ করেছেন তাঁর ছবিতে।

যাক সেকথা। ইদানীং তো দেখতে পাই মানবতা কোন যুক্তি নয়। তাই যদি কেউ বলে, আমার বাপ-ঠাকুর্দা উদ্বাস্তু ছিল বলেই আমি চাই না অমন দশা আর কারো হোক — তাকে দল বেঁধে ন্যাকা বলা হয়। সৎ উদ্দেশ্য, অসৎ উদ্দেশ্যের সংজ্ঞাও আমূল বদলে গেছে। নিরস্ত্র, নিরপরাধ মানুষের উপর প্রতিশোধ নেওয়াই সৎ উদ্দেশ্য আজকাল। আমার এক আত্মীয় যেমন এন আর সি নিয়ে আলোচনায় বললেন “আমি বিজেপির সাপোর্টার নই। কিন্তু কোন কাজের উদ্দেশ্য যদি সৎ হয়, কেন সমর্থন করব না? এরা বাংলাদেশ থেকে এসে দেশের কাজকর্ম সব দখল করে নিচ্ছে। কেন অ্যালাউ করব?”

এ হেন বাঙালের কাছে মানবতার যুক্তি দেখিয়ে লাভ নেই। তাই একটা অন্য কথা বলি। আজকের বাঙালরা ভেবে দেখুন, যদি দেশভাগের সময় এ পারের মানুষরা (নেতারা তো বটেই) এই “কেন অ্যালাউ করব” কথাটা বলতেন, তাহলে কী অবস্থা হত আমাদের পূর্বপুরুষদের? আমরা এতদিনে জমিয়ে বসেছি বলে এখন যারা উদ্বাস্তু তারা চুলোয় যাক — আসামের বাঙালরা সেখানকার পূর্ববঙ্গীয় মুসলমান (ওখানে যাদের মিঞা বলা হয়) সম্পর্কে এই মনোভাব পোষণ করেই এন আর সি হয়ে বিপদে পড়লেন। একথা বললেই আমার সেই আত্মীয়ের মত অনেক বাঙালই বলেন “আমার সব ডকুমেন্ট আছে। এখানে এন আর সি হলে আমার ভয় নেই।” আপনি যদি এই ভেবে নিশ্চিন্ত থাকেন, তাহলে আপনি নিজের চারপাশ সম্বন্ধে অদ্ভুত উদাসীন। শেষ পর্যন্ত এন আর সি হোক বা না হোক, আপনার বাপ-ঠাকুর্দাকে যে “অ্যালাউ” করা হয়েছিল সেকথা বলা কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। সোশাল মিডিয়ায় দেখুন, রাস্তাঘাটে কান পাতুন। প্রকাশ্যেই অবাঙালি হিন্দুত্ববাদীরা বলতে শুরু করেছে “এরা সব ওপার থেকে এসেছিল। এদের আমরা খেতে দিলাম পরতে দিলাম থাকতে দিলাম। আর এরা এখন নিজেদের ইতিহাস ভুলে মুসলমানদের জন্যে মিছিল মিটিং করছে!”

কিভাবে ইতিহাস বিকৃত করে আপনাকে আপনার পূর্বসুরীদের মতই উদ্বাস্তু বানানোর চক্রান্ত হচ্ছে বুঝুন। তাঁরা নাকি ওপার থেকে এসেছিলেন, ওরা খেতে পরতে থাকতে দিয়েছিল। অর্থাৎ দেশটা যে এক ছিল, ঐ পারের মত এই পারটাও যে আপনার বাপ-ঠাকুর্দার দেশই ছিল সেকথা অস্বীকার করা হচ্ছে। ভাল করে খেয়াল করলে দেখবেন সুচতুরভাবে পশ্চিমবঙ্গীয়দেরও (চলতি কথায় এদেশী) বোঝানো হচ্ছে পূর্ববঙ্গীয়রা তাদের জায়গায় উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা এরকম যে স্বাধীনতার পরে বাঙালদের “অ্যালাউ” করা হয়েছিল এ দেশে থাকতে। এখন আপনাকে আবার নতুন করে নিজের জন্যে অ্যালাউয়েন্সের ব্যবস্থা করতে হবে।

এদের কথায় ভুলে দেশভাগের প্রতিশোধ নেওয়ার ঝোঁকে যদি সি এ এ, এন আর সি মেনে নেন, তাহলে সারাজীবন আপনাকে ঐ অ্যালাউয়েন্সেরই বন্দোবস্ত করে যেতে হবে। বারবার প্রমাণ করতে হবে আপনি ভারতীয়, কারণ কোন প্রমাণই সকলের চোখে যথেষ্ট হবে না।

পুনশ্চ: কোন এদেশী যদি ভেবে থাকেন তিনি তোফা থাকবেন তাহলে তিনিও মূর্খ। কারণ বাঙাল আর এদেশীর তফাত কেবল বাঙালিরাই বোঝে। অন্যদের কাছে সবাই বাঙালি, এবং হিন্দুত্ববাদ শেখাচ্ছে “বাঙালি দেখলেই জানবে অনুপ্রবেশ।” আপাতত তার ফলে মার খাচ্ছেন গরীব গুরবো মানুষ। তা বলে হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, দিল্লী, মুম্বাইয়ের উচ্চবংশীয় বহুজাতিকের কর্মী বঙ্গসন্তানরা চিরকাল সুখে থাকতে পারবেন ভাবার কারণ নেই।

আক্রমণে মৃণাল, রক্ষণে নীতা

পেশায় যৌনকর্মী হওয়ায় আত্মত্যাগের প্রাপ্য প্রতিদান হিসাবে তাঁর নামে রঙ্গালয়ের নামকরণ সে যুগে করা হয়নি। তার প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে এই দলের ক্যাপ্টেনস আর্ম ব্যান্ড নটী বিনোদিনীর পুরোবাহুতেই থাক

সোশাল মিডিয়ায় কদিন হল ভাইরাল হয়েছে একটা ফুটবল দলের ছক। যে দলের সদস্য আমাদের বাংলা সাহিত্যের কিছু জনপ্রিয় চরিত্র। হয় তারা খেলছে বা দলের সঙ্গে অন্য নানা ভূমিকায় যুক্ত আছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের ময়দান থেকে বহুদূরে থাকা আমরা এভাবেই দুধের সাধ ঘোলে মেটাই।
দলটার দিকে তাকিয়ে কল্পনার পাখা মেলে দিতে গিয়ে খেয়াল হল, ফিফা ক্রমতালিকায় ৯৭ নম্বরে থাকা ভারতের পুরুষদের জাতীয় দলের তুলনায় মেয়েদের দল কিন্তু অনেক এগিয়ে। এই মুহূর্তে আমাদের মেয়েরা ৬০ নম্বরে। উত্তর আমেরিকায় ২০২৬ থেকে পুরুষদের বিশ্বকাপ ৪৮ দলের হয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে তেমন হলে (এই মুহূর্তে ২৪ দলের প্রতিযোগিতা) ভারতের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
তখনই মনে হল, আমাদের সাহিত্যের জ্বলজ্বলে নারী চরিত্রদের নিয়েও একটা জবরদস্ত ফুটবল দল বানানো যেতেই পারে। তবে সে দল অতটা মজার হবে না, বরং লড়াকু হবে। আমাদের দেশের কজন মেয়েরই বা মজায় বাঁচার সুযোগ হয়।
এখানে স্বীকার্য যে আমার পড়ার পরিধি খুব ছোট। তার উপরে ওপার বাংলার সাহিত্য প্রায় কিছুই পড়া হয়নি। ফলে যাঁরা বেশি পড়েন তাঁরা নিশ্চয়ই আরো ভাল দল বানাতে পারবেন। আরো বলা প্রয়োজন যে খেলোয়াড় ঠিক করার সময়ে সাহিত্যের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে যেভাবে এদের কারো কারো চরিত্রচিত্রণ হয়েছে তা ভুলতে পারিনি। সার্থক বাংলা ছবির অনেকগুলোই তো সাহিত্যাশ্রয়ী। ফলে আশা করি মহাপাতক হয়নি।
গোলে রাখলাম বাণী বসুর গান্ধর্বী উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র অপালাকে। প্রতিকূল অবস্থাতেও সবদিক সামলে সঙ্গীতের প্রতি নিবেদিত প্রাণ এই মহিলাকে দুর্গ সামলানোর দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। ম্যানুয়েল নয়ারের মত মাল্টি টাস্কিং গোলরক্ষা এঁর পক্ষেই সম্ভব।
দুই সাইড ব্যাকের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথের কুমুদিনী আর আশাপূর্ণা দেবীর আইকনিক চরিত্র সুবর্ণলতা। সে যুগে দোর্দণ্ডপ্রতাপ স্বামীর সাথে দূরত্ব রেখে জীবন কাটানো ‘যোগাযোগ’ উপন্যাসের নায়িকা কুমুদিনী আর আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজির সুবর্ণলতা রক্ষণে যেমন আঁটোসাটো, তেমনি কাফু আর রবার্তো কার্লোসের মত ওভারল্যাপে গিয়ে বিপক্ষকে তছনছ করে দিতেও পারে। মনে করে দেখুন স্বদেশী আন্দোলনের সমর্থনে সুবর্ণ কেমন বাড়ির উঠোনে বিলিতি জামাকাপড় পুড়িয়ে দিয়েছিল।
সেন্ট্রাল ডিফেন্সে আমাদের দরকার তুলনায় কম দুঃসাহসী কিন্তু দৃঢ়চেতা দুজনকে। তাই রইলেন আশাপূর্ণারই ‘অনাচার’ গল্পের সুভাষ কাকিমা, যিনি অসুস্থ, মৃতপ্রায় শ্বশুরমশাইকে মানসিক আঘাত থেকে বাঁচাতে স্বামীর মৃত্যুর খবর গোপন করে সধবার জীবন কাটিয়েছিলেন দীর্ঘকাল, সামাজিক গঞ্জনা বা শাস্ত্রের ভয়কে তোয়াক্কা করেননি। ইনিই আমাদের ফ্রাঙ্কো বারেসি।
এঁর পাশেই থাকবেন শক্তিপদ রাজগুরুর নীতা, পরিবারের জন্যে যার সর্বস্ব ত্যাগকে পর্দায় অমর করে রেখেছেন ঋত্বিক ঘটক। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে এমন নিঃস্বার্থ সৈনিক আর পাব কোথায়?
মাঝমাঠে আমাদের জেনারেল হিসাবে থাকবেন নটী বিনোদিনী। ওখানে দরকার এমন একজনকে যিনি দলের স্বার্থে ডিফেন্সে নেমে আসবেন, আবার স্ট্রাইকারদের ডিফেন্স চেরা পাসও বাড়াবেন প্রয়োজনে। বাংলার সাধারণ রঙ্গালয় তৈরি করার জন্যে যিনি অভিনয় করা ছেড়ে দিয়েছিলেন প্রবল ব্যথা সহ্য করে, যিনি অমর হয়ে আছেন ব্রজেন দের নাটকে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসে, সেই নটীই এই কাজের উপযুক্ত। পেশায় যৌনকর্মী হওয়ায় আত্মত্যাগের প্রাপ্য প্রতিদান হিসাবে তাঁর নামে রঙ্গালয়ের নামকরণ সে যুগে করা হয়নি। তার প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে এই দলের ক্যাপ্টেনস আর্ম ব্যান্ড তাঁর পুরোবাহুতেই থাক।
বিনোদিনীর দুপাশে মাঠ আলো করে থাকবে পথের পাঁচালীর দুর্গা আর শেষের কবিতার লাবণ্য।
ভীষণ দুরন্ত দুর্গা এনগোলো কান্তের মত সারামাঠ দৌড়ে ব্যস্তিব্যস্ত করে দেবে প্রতিপক্ষকে। আর অকল্পনীয় পাসে মাঠে ফুল ফোটাবে লাবণ্য। দিয়েগো মারাদোনার মতই যাকে ছকে বাঁধা যায় না, যে দীঘির জল, ঘড়ার জল নয়, সে-ই তো লাবণ্য।
ত্রিফলা আক্রমণে স্ত্রীর পত্রের মৃণাল, দহনের ঝিনুক, আর বঙ্কিমের দেবী চৌধুরানি।
প্রথম জনের সাথে আজীবন শ্বশুরবাড়ির মূল্যবোধের লড়াই চলেছে। শেষে সে পুরী থেকে চিঠি লিখে স্বামীকে জানিয়ে দিয়েছে যে সে শুধু মেজোবউ নয়, জগৎ এবং জগদীশ্বরের সঙ্গে তার যে অন্য সম্পর্কও আছে তা সে আবিষ্কার করেছে। সুতরাং সে আর সংসারের শিকলে বাঁধা পড়বে না। দ্বিতীয় জন গোটা দুনিয়ার বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়ে লড়েছে পুরুষের দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে। আর তৃতীয় জন নিরীহ বধূ থেকে ডাকাত সর্দার হয়ে একদা প্রভুত্ব করা পুরুষদের পদানত করেছে। এই আক্রমণভাগ দেখে যে কোন ডিফেন্স কাঁপতে বাধ্য।
আমাদের শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চে থাকছে সামাজিক রীতিনীতির বিপরীতে দাঁড়ানোর সাহস রাখে এরকম চারজন — তারাশঙ্করের মহাশ্বেতা, চোখের বালির নায়িকা বিনোদিনী, কাপালিকের কাছে বেড়ে ওঠা বঙ্কিমের কপালকুণ্ডলা এবং শরৎচন্দ্রের রাজলক্ষ্মী।
লীলা মজুমদারের রসিক, প্রবল বুদ্ধিমতী পদিপিসী এই দলকে চালনা করবেন। টেকনিক্যাল পরামর্শ দিয়ে তাঁকে সাহায্য করবে হাঁটুর বয়সী কলাবতী — মতি নন্দীর চরিত্র। এখানে কোচ আর টিডির অশান্তির কোন সম্ভাবনা নেই। পিসী সম্ভবত ৪-৩-৩ ছকেই খেলাবেন কারণ যাদের হারাবার কিছু নেই, জয় করার জন্যে আছে গোটা জগৎ তাদের রক্ষণাত্মক হয়ে লাভ নেই।

গোলরক্ষক: অপালা। রক্ষণ: কুমুদিনী, সুভাষ কাকিমা, নীতা, সুবর্ণলতা। মাঝমাঠ: লাবণ্য, নটী বিনোদিনী, দুর্গা। আক্রমণ: মৃণাল, ঝিনুক, দেবী চৌধুরানী। অতিরিক্ত: মহাশ্বেতা (গোলরক্ষক), বিনোদিনী, কপালকুণ্ডলা, রাজলক্ষ্মী। কোচ: পদিপিসী। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর: কলাবতী।

শ্রীদেবীত্ব

এই আঁতলামিটা আসলে ঠিক সেটাই করে যেটা এড়াতে চায় সচেতনভাবে — একজন অভিনেত্রীকে শুধু মহিলা হিসাবে বিচার করা। কারণ যে ছবিতে চরিত্র দাবী করেছে, সেখানে সুপ্রিয়া দেবীর কাজই ছিল যৌন আবেদনে দর্শককে ঘায়েল করে দেওয়া। যদি সেটা করতে পেরে থাকেন, তাঁর অভিনয় সার্থক

sridevi-FI

জনপ্রিয় মানেই ভাল নয় — একথা যেমন সত্যি, তেমনি জনপ্রিয় মানেই শিল্প হিসাবে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার দাবী রাখে না — এরকম মনে করাও অকারণ আঁতলামি ছাড়া কিছুই নয়। ফেসবুক যেমন মহা বিরক্তিকর কিছু ছ্যাবলামিকে প্রশ্রয় দেয় তেমন এই ধরণের আঁতলামিকেও ইদানীং বড্ড বাড়িয়ে তুলেছে।
যেমন সুপ্রিয়া দেবী মারা যাওয়ার পর দেখলাম রাম শ্যাম যদু মধু সকলেই চিৎকার করছে “দাদা, আমি বাঁচতে চাই।” এদের অধিকাংশকে বিনা পয়সায় দেখাতে চাইলেও ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখতে চাইবে না, অনেক কষ্টে বসানো গেলেও মাঝপথে উঠে যাবে। কেউ কেউ হয়ত আদৌ দ্যাখেনি ছবিটা। কারণ সংলাপটা “দাদা, আমি বাঁচতে চাই” নয়। অথচ সকলে মিলে এমন করা শুরু করল যেন সুপ্রিয়া দেবী সারাজীবনে ঐ একটিই ছবি করেছেন। আর ঋত্বিক ঘটকের সাথে ঐ কাজটার জন্যেই সকলে চেনে ওঁকে। অধিকাংশ লোকের তো ‘কোমল গান্ধার’ এর অনসূয়াকেও মনে আছে মনে হল না, বাণিজ্যিক ছবিগুলোর কথা ছেড়েই দেওয়া যাক। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে আপামর দর্শক সুপ্রিয়াকে চিনেছে বাণিজ্যিক ছবিতে তাঁর অভিনয়ের জন্যেই। ঋত্বিকও তো সেসব অভিনয় দেখেই তাঁকে নীতা বা অনসূয়ার চরিত্রের জন্যে নির্বাচন করেন। সুপ্রিয়া তো আর গীতা ঘটক নন, যে ছোট থেকেই ঋত্বিক চিনবেন।
আসলে এদেশে অভিনেত্রীরা মারা গেলে আমাদের ঘোরতর পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একটা মজার ঘটনা ঘটে আমার মনে হয়। অভিনেত্রীকে পর্দায় দেখে কখন কখন তাঁর সৌন্দর্যে/যৌন আবেদনে আমরা মথিত হয়েছি, সেইটে চেপে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা চলে। এই একবিংশ শতাব্দীতে নারীবাদ যেটুকু জায়গা করতে পেরেছে আমাদের সমাজে, সেটা যৌনতা সম্পর্কে আমাদের চিরাচরিত ঢাকঢাক গুড়গুড়ে একটা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কোন সমালোচক কোন সংবাদমাধ্যমে প্রয়াতা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বা আমার মত সাধারণ লোক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে গিয়ে ভাবছে “সাবধানে লিখি, বাবা। যদি সেক্সিজম হয়ে যায়।” মেরিলিন মনরো বা আনিটা একবার্গ মারা গেলে পাশ্চাত্যের গণমাধ্যম বা সাধারণ মানুষকে কিন্তু এরকম অদ্ভুত আচরণ করতে দেখি না। আসলে আমাদের এখানে অধিকাংশ লোকই সেক্সিজম মানে সেক্স বোঝে তো। ফলে সুপ্রিয়াকে ‘বনপলাশীর পদাবলী’ তে (বিশেষ করে ‘দেখুক পাড়াপড়শিতে’ গানে যখন তিনি উত্তমকুমারের বঁড়শিতে গেঁথে যান) যে প্রবল আবেদনময়ী লেগেছিল, সেটা লেখাটা বড্ড uncool হয়ে পড়ে। ‘মন নিয়ে’ ছবিতে উত্তমকুমারকে নিয়ে টানাটানি করা যমজ বোনেদের চরিত্রগুলোয় সুপ্রিয়ার অভিনয় অনালোচিতই থেকে যায়। এমনকি ‘সিস্টার’ ছবির সেই চরিত্র, যে শত্রুসেনার হাত থেকে স্কুলের মেয়েদের বাঁচাতে নিজের দেহ সমর্পণ করে — সেটার কথাও নাকি খুব একটা কারোর মনে নেই। চারদিকে এত সিনেমাবোদ্ধা গিজগিজ করছে দেখলে নীলকণ্ঠ বোধহয় সেই ঢাকনাহীন বাংলার বোতলটা ছুঁড়ে মারত।
এই আঁতলামিটা আসলে ঠিক সেটাই করে যেটা এড়াতে চায় সচেতনভাবে — একজন অভিনেত্রীকে শুধু মহিলা হিসাবে বিচার করা। কারণ যে ছবিতে চরিত্র দাবী করেছে, সেখানে সুপ্রিয়া দেবীর কাজই ছিল যৌন আবেদনে দর্শককে ঘায়েল করে দেওয়া। যদি সেটা করতে পেরে থাকেন, তাঁর অভিনয় সার্থক। সেই সার্থকতা স্বীকার না করাই তো শিল্পীর পক্ষে অমর্যাদাকর। উত্তমকুমারের বেলায় আমরা শুধু ‘জতুগৃহ’, ‘সন্ন্যাসী রাজা’, ‘বাঘবন্দি খেলা’ নিয়েই আলোচনা করি? ‘সপ্তপদী’ বা ‘শঙখবেলা’ র মত যেসব ছবিতে তাঁকে দেখলেই আজও বহু মেয়ের প্রেম করতে ইচ্ছে করে —- সেগুলোকে বাদ দিয়ে ভাবি? এমনকি সত্যজিৎ রায়ও তো তাঁর সুপুরুষ চেহারার যৌন আবেদনকে ব্যবহার করেছেন। তাতে দোষ কি?
এখন এত কথা বলছি কেন? বলছি এইজন্যে যে শ্রীদেবীকে নিয়ে দেখছি আবার সেই আঁতলামো শুরু হয়ে গেছে। আসলে শ্রীদেবী সম্পর্কে ভারতীয় পুরুষের যে যৌন আবেগ সেটাকে চাপা দেওয়া আরো শক্ত। সুপ্রিয়ার বেলায় আমাদের উদ্ধার করেছেন ঋত্বিক। শ্রীদেবী যে কখনো শ্যাম বেনেগাল বা গোবিন্দ নিহালনির মত পরিচালকের সাথে অভিনয় করেননি! এখন আঁতলামোটা করা যাবে কী করে! ধরা হল দীর্ঘ বিরতির পরে করা শেষদুটো ছবিকে — ইংলিশ ভিংলিশ আর মম। এদুটোই নাকি শ্রীদেবীর অভিনয়ক্ষমতার শীর্ষ বলে শুনতে পাচ্ছি এখন। দুটোর একটাও আমি দেখিনি, তবুও শ্রীদেবীর মৃত্যুতে আমার কারো চেয়ে কম দুঃখ তো হচ্ছে না! তিনি যে শুধু সুন্দরী ছিলেন না জিনাত আমনের মত, অভিনয়টা যথেষ্ট ভাল জানতেন — সেটা ইংলিশ ভিংলিশের আগে বোঝা যায়নি! ‘আখরি রাস্তা’র মত অমিতাভসর্বস্ব ছবিতেও তো যখন পর্দায় আসেন, শ্রীদেবীর দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়। বিদ্যা বালন তো সেদিনের মহিলা, একজন নায়িকা একা একটা বাণিজ্যিক ছবিকে টেনে নিয়ে যেতে পারেন সে তো নেচে গেয়ে মারামারি করে শ্রীদেবী আশির দশকেই দেখিয়ে দিয়েছেন ‘চালবাজ’ এ। ‘চাঁদনী’ ছবিতে শ্রীদেবীর পাশে ঋষি কাপুর আর ওরকম সুপুরুষ বিনোদ খান্নাকেও নেহাত বেচারা লাগেনি কি? অতীতের এক সুন্দরী নায়িকাকে দুটো না বানালে ওয়াটার পিউরিফায়ার বেচা যায় না। শ্রীদেবী কিন্তু বরাবরই তাঁর সৌন্দর্য আর অভিনয়ের এমন কম্বো পেশ করেছেন যে আমাদের কৈশোরে তিনি ফলিডলের বিজ্ঞাপন করলে আমরা তাও কিনে ফেলতাম। তাহলে আজ আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে এসব হালের ছবির নাম কেন? ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ হয়ত শ্রীদেবীর ছবি, শ্রীদেবীকে ইংলিশ ভিংলিশের অভিনেত্রী বললে কিন্তু নেহাতই অন্যায় হবে।
বরং সত্যি কথাটা সহজ করে বলা যাক না। আমাদের প্রজন্ম বরাবর বনি কাপুরকে মনে মনে (কখনো প্রকাশ্যেও) গালাগাল দিয়ে এসেছে শ্রীদেবীর স্বামী হওয়ার সৌভাগ্যের জন্যে। বেশ মনে আছে আমার এক অতীব মেধাবী বন্ধু একবার ফুট কেটেছিল “কে বেশি বৌদিবাজ বল তো? রবি ঠাকুর না অনিল কাপুর?” চরম সত্যি কথাটা এই যে আমাদের প্রজন্মের যেসব ছেলে একদমই সুবোধ বালক ছিল, তাদের কৈশোরও স্বপ্নার্দ্র করে রেখেছিলেন শ্রীদেবী, কারণ তিনি ক্যামেরার সামনে অদৃশ্য পুরুষের সঙ্গেও প্রবল প্রেম করতে পারতেন। নীল শাড়িতে সেই শ্রীদেবীকে দেখার পর আমাদের দিন কাটত না, রাত কাটত না।
প্রকাশ্যে আজ যে যা-ই বলুক আর লিখুক, মনে মনে সবাই জানে, সৌরভ গাঙ্গুলি যেমন বলকে বলতে পারতেন “বাপি, বাড়ি যা”, শ্রীদেবীও সানি লিওনকে বলতে পারতেন “সানি, বাড়ি যা।”

%d bloggers like this: