
পূর্বকথা: ভোটের আগের দিন হঠাৎ বিপ্লব এসে হাজির। ওর চাকরিতে কোন গোলমাল হয়নি নিশ্চিত হওয়ার পর অসুস্থ মিনতি বৌদিকে দেখতে যায় রবীন। বিপ্লব নিজের ঘরে গিয়ে আবিষ্কার করে, বাবা এখন তার স্মৃতি আঁকড়েই বেঁচে আছে। মিনতি বৌদির বাড়ি থেকে ফিরে রবীন ঘোষণা করে, তার সন্দেহ নির্ভুল। বামফ্রন্ট সরকারের দিন শেষ।
ভোটের দিন সকাল থেকে রবীনের শরীরটা সুবিধের লাগছিল না। ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা খেয়েই বিড়ি ধরিয়ে পায়খানায় গিয়ে বসা চিরকালের অভ্যেস। চা শেষ করতে না করতেই বেগ এসে যায় বরাবর, না হলে বিড়িতে দুটো টান দিলেই কাজ হয়। কিন্তু সেদিন চায়ের পর তিনটে বিড়ি শেষ করে ফেলেও লাভ হল না। অথচ অনেক দিন বাদে বিপ্লবকে পাশে নিয়ে শুয়ে ঘুমটা বেশ ভাল হয়েছিল। ভাল ঘুমের পর সকালে এই সমস্যা কখনো হয়েছে বলে রবীন মনে করতে পারে না। অস্বস্তি নিয়েই দাঁতটা মেজে এসে ঢকঢক করে দু গ্লাস জল খেয়ে ফেলল। তবু পায়খানা পায় না। এদিকে পেটটা ফুলে ঢোল।
আজই দরকার ছিল ঝটপট প্রাতঃকৃত্য সেরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়া, আর আজই কিনা এরকম হল? রবীন নিজের উপরই বিরক্ত হল। আটটা অব্দি আরো কয়েক গ্লাস জল, ঘরের মধ্যে হনহন করে হাঁটাহাঁটির পরেও যখন পায়খানা পেল না, তখন সিদ্ধান্ত নিল এবার বেরিয়েই পড়বে। স্নান সেরে এসে পায়জামা পরতে পরতে জোনাকিকে বলল “আমার ভোটার কার্ডটা বের করে দাও, ভোটটা দিয়ে চলে যাই। সারা দিনে আর সময় পাব না।”
“খালি পেটে বেরিয়ে যাবে?”
“খাওয়ার জায়গা নেই। পায়খানাটা হল না তো।”
“তা করে বেরোও।”
“এখন হবে না। অনেক তো চেষ্টা করলাম।”
“এরকম হচ্ছে কেন? টেনশন করছ নাকি?”
রবীন থমকে দাঁড়ায়।
“না না। কিসের টেনশন? যা হবার তো হবেই। কী হবে তা তো বুঝেই গেছি।”
“আচ্ছা বেরোও। কিন্তু এখনই ভোট দিতে যেয়ো না, পরে এসে দিও। এতদিন পর ছেলেটা বাড়িতে। একসাথে ভোট দিতে যেতাম।”
“ও কি যাবে ভোট দিতে? কোনদিন তো ভোট দেয়নি?”
“যাবে, যাবে। আমাকে বলেছে। এবার ভোট দেবে বলেই তাড়াহুড়ো করে এল।”
অস্বস্তি, উৎকণ্ঠার মধ্যেও রবীনের বেশ ভাল লাগে কথাটা শুনে। ছেলে তখনো দেয়ালের দিকে ফিরে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। পিঠে হাতটা বুলিয়ে বলে “আচ্ছা। থাক তাহলে। আমি বেরোই। আসব তাহলে দুপুরের দিকে একবার।”
“খাবে কোথায়?”
“খেয়ে নেব কারো বাড়িতে।”
“কোন দিকে থাকবে তুমি?”
সাইকেল বার করতে করতে রবীন বেশ চটেই গেল। “তিরিশ বছর বিয়ে হয়েছে, এখনো এইসব প্রশ্ন করো? ভোটের দিন কি এক জায়গায় বসে থাকি?”
“আমি জানি যে তুমি টো টো করে বেড়াবে,” জোনাকিও ঝাঁঝিয়ে ওঠে। “সেটাই করতে বারণ করছি। বয়সটা যে হচ্ছে সেটা তো ভালই বোঝা যাচ্ছে। অগ্রাহ্য করলে কী অবস্থা হয় সেটা তো দেখলে কদিন আগে। শিক্ষা হবে না তোমার।”
ওসব কথায় কান দেওয়ার সময় তখন রবীনের নেই।
একটা নাগাদ ঘেমে নেয়ে বাড়ি ফিরল। বিপ্লব আর জোনাকির তখন সবে স্নান সারা হয়েছে।
“চল চল। এখন বুথটা ফাঁকা আছে দেখে এলাম। দুটো আড়াইটের পরে আবার লাইন লেগে যাবে।”
“রোদ থেকে এলে, একটু বসে নাও?”
“আরে একেবারে এসে বসব। চলো চলো, দেরী করে লাভ নেই।”
“বাবা, খুব ঘেমে গেছ। পাঁচ মিনিট বসো, তারপর যাব,” বিপ্লব প্রায় বাবার মত জোর দিয়ে বলে।
রবীনের অবাক লাগে, ভালও লাগে। মনে পড়ে, বাবা ক্যান্সার অপারেশনের পর যখন শয্যাশায়ী, তখন ডাক্তারের বারণগুলো কিছুতেই শুনতে চাইত না। রবীন, সবচেয়ে ছোট ছেলে রবীন, তখন তার বাবাকে শাসন করত। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবা রবীন কিছু বললে মেনে নিত। ধমকা ধমকি করে বাবাকে চিরতার জল বা ইসবগুল খেতে বাধ্য করে সে নিজের ঘরে গিয়ে কাঁদত। কারণ রবীনের বাবা কোনদিনই অন্য বাবাদের মত ছিল না। রবীনকে কখনো ধমকেছে বলে মনে পড়ে না। দাদাদের দু একবার ধমকাতে দেখেছে, মায়ের সাথেও কোনদিন উঁচু গলায় কথা বলতে শোনেনি। বরং মনে পড়ে, মা যখন রাতে বাবাকে খেতে দিত তখন বাবার পাশে বসে রবীন আর ওর পিঠোপিঠি ছোড়দি অনেক আবোল তাবোল প্রশ্ন করে যেত, এ ওর নামে নালিশ করত। মাঝেমাঝে মা বিরক্ত হয়ে বলত “সারাদিনের পরে মানুষটা খাইতে বইছে, এহন তগো বকবক না কল্লে হয় না?” বাবা হাত তুলে বলত “থাউক, থাউক। অগো পরানের কথাও তো শুনতে লাগব।”
রবীন যখন কাঁদত, তখন বাবার দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা বুড়িমা পা টিপে টিপে এসে পিঠে হাত বুলিয়ে বলত “কাইন্দো না, ভাই। কাইন্দো না। তুমি কোন অন্যায় করতাছ না। বাপ-মায়ের বয়স হইলে তারা পোলাপান হইয়া যায়। তহন তাগোও শাসন করতে লাগে। তুমি তো আর নিজের জন্যে করতাছ না, বাপের ভালর জন্যই করতাছ। ওতে দোষ নাই।”
রবীন ভাবল তারও তো দিন শেষ হয়ে এল। ছেলেটা জোয়ান হয়েছে, এখন তার কথা তো শুনতেই হবে। ভেবে বসেই পড়ল। পাঞ্জাবিটা খুলে রেখে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে ভারী আরাম লাগল। রবীন অনুভব করল সে ভীষণ ক্লান্ত। বিপ্লব উঠে এসে পাঞ্জাবি দিয়ে গা মুছিয়ে দিল। রবীন আরো অবাক হল। ছেলের মনে তার জন্যে এত জায়গা আছে সে ভাবেনি।
খানিকক্ষণ পাখার নীচে বসে ঘাম শুকোবার পর রবীনের মনে হল, এখানেই ঘুমিয়ে পড়তে পারলে ভাল হত। কিন্তু ভোটটা দিতে তো যেতে হবে। তিন তিনটে ভোট। এবারের নির্বাচনে পার্টির একজন ভোটারও যেন বাড়িতে বসে না থাকে সেটা দেখা খুব জরুরী। নিজেকে জোর করে ঠেলে তোলে রবীন।
“চলো, জোনাকি। শাড়ি পরা হয়েছে?”
“আমি তো চান করেই ভাল শাড়ি পরে নিয়েছি। আমরা রেডি। তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম।”
বুথের দিকে যেতে যেতে জোনাকি বলে “তুমি তো আরেকটু হলে ঘুমিয়ে পড়ছিলে, ভোট দিয়ে এসে আর বেরিয়ো না, বুঝলে? ভাত খেয়ে টেনে ঘুম দাও। সকালে তো শরীরটা ভাল ছিল না।”
“হ্যাঁ, আর বেরোব না ভাবছি।”
“বেরোবে না?” বিপ্লব খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল। “তুমি তো কোনদিন ভোটে দুপুরবেলা বাড়ি ঢুকে পড়ো না!”
রবীন বলতে চাইল না শরীরটা সত্যিই আর দিচ্ছে না। ওরা অযথা চিন্তা করবে। অবশ্য তার চেয়েও বড় কারণ একটা ছিল। সেটা বিপ্লবকে বলা চলে না।
“তবে ভাত আর খাব না, জোনাকি। খেয়েছি।”
“কোথায় খেলে?”
“মইদুলদের বাড়িতে।”
“সেই আজাদপুরের মইদুলকাকু?” বিপ্লবের চোখে একটা অনেক দিনের পুরনো ঝিলিক দেখতে পেল রবীন।
“হ্যাঁ। তোর মনে আছে ওকে?”
“ও বাবা, মনে থাকবে না? সেই আমার আঁকার খাতায় কি সুন্দর সুন্দর স্কেচ করে দিত। তারপর মইদুলকাকুকে বিয়ের পর একদিন খেতে বলেছিলে আমাদের বাড়িতে… কাকিমাকে অপূর্ব দেখতে… সে খাওয়ার পরে কিছুতেই মাকে এঁটো কুড়োতে দেবে না… তুমি তখন খুব ধমকালে। বললে ‘তোমার ভাই, ভায়ের বউ বাড়িতে খেতে গেলে কি তুমি তাদের পাত কুড়োতে দাও?’ তখন কেঁদে ফেলল। শেষে বলল ‘তাহলে আমাদের বাড়ি একদিন বৌদি, বিপ্লবকে নিয়ে খাবেন বলুন?’”
“হ্যাঁ। আমি তখন বললাম ‘তোমার শাশুড়িকে গিয়ে জিজ্ঞেস কোরো তো আমি তোমাদের বাড়ি কতবার খেয়েছি? আমরা কমিউনিস্ট পার্টি করি। আমাদের ওসব বাছবিচার কোনদিন নেই। মইদুলের যদি আমি এসব দেখি, ওকে মারব ধরে।’”
“কিন্তু কাকিমা তাও শুনছিল না। বলল ‘বৌদি তো পার্টি করে না, দাদা। ওনার তো অসুবিধা থাকতে পারে।’ তখন মা বলল ‘আমি রামকৃষ্ণের ভক্ত। আমার গুরু কলমা পড়ে মুসলমান হয়েছিলেন, খ্রীষ্টানও হয়েছিলেন। আমার ওসব বাতিক থাকতে যাবে কেন?’”
“বাব্বা! জোনাকি? ছেলের তো সবই মনে আছে গো! তখন কতই বা বয়স ওর!”
“আমি তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি।”
“তা এত মনে আছে আর আসল কথাটাই চেপে গেলি?” জোনাকি মুখ টিপে হাসে।
“কী কথা?”
“এ মা! তোমারও মনে নেই? ওদের বাড়ি আমরা যেদিন খেতে গেলাম সেদিন তোমার ছেলে মইদুলের বউয়ের গালে হাত বুলিয়ে বলল ‘তোমাকে পরীর মতন দেখতে।’ তাতে সে বলল ‘আহা রে, এমন কথা তো আমায় আর কেউ বলেনি। তুমি আগে বললে না কেন গো? আমি তা’লে তোমাকেই বিয়ে করতাম।’”
রবীনের মনে পড়ে যায়। ছেলেকে আড়চোখে দেখে নিয়ে বলে “মইদুলের মেয়ে কিন্তু ওর মায়ের চেয়েও সুন্দরী হয়েছে। তোমার মনে আছে একদিন হাওড়া স্টেশনে আমাদের সাথে দেখা হল?”
জোনাকি কোন উত্তর দেওয়ার আগেই বিপ্লব গম্ভীর গলায় বলে “বাবা, এই আলোচনাটার কোন দরকার নেই।”
রবীন চুপ করে যায়, জোনাকিও কথা বাড়ায় না। পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মত এই কয়েকটা মুহূর্ত নষ্ট করে লাভ নেই।
ভোট দিয়ে ফেরার সময় পার্টির ক্যাম্পে রবীন চেঁচিয়ে ফাল্গুনীকে জিজ্ঞেস করে “কত হল রে?”
“ষোলশো চুয়ান্ন পড়ে গেছে এর মধ্যেই।”
“তার মানে প্রায় ফিফটি পারসেন্ট। বহুত আচ্ছা।”
“মোট কত ভোট আমাদের এখানে, বাবা?” বিপ্লব জিজ্ঞেস করে।
“তিন হাজার দুশো ছাব্বিশ।”
বাড়ি ফিরে বিপ্লব আর জোনাকি খেতে বসে, রবীন বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়ে। হঠাৎ খেয়াল হতে জোনাকি জিজ্ঞেস করে “হ্যাঁ গো, তোমার আর পায়খানা হলই না?”
“হল তো। মইদুলদের বাড়িতে। ও আমাকে বলেই রেখেছিল ‘এদিকে এলে আমার বাড়িতেই খাবেন।’ তা ওর বাড়ি যেতে ওর গিন্নী আমপোড়ার শরবত দিল, সেটা খেতেই পেট গুড়গুড়, তারপর ফার্স্ট ক্লাস পায়খানা হল।”
“বাঃ! তাহলে তারপরে বেশ তৃপ্তি করে খেতে পারলে নিশ্চয়ই?”
“সে আর বলতে? রাবেয়ার তো রান্নাটা চমৎকার।”
“অনেক কিছু খাওয়াল?”
“হ্যাঁ… ভাত, মাছের মাথা দিয়ে মুগ ডাল… আলু… ভাজা… মাংস…” বলতে বলতে কথা জড়িয়ে গেল রবীনের। বহুকালের ঘুম নেমে এল চোখে।
ঘুম ভাঙল সন্ধে নামার পর। জোনাকি ততক্ষণে পছন্দের সিরিয়াল দেখতে বসে গেছে। ইচ্ছে থাকলেও খবর দেখা যাবে না। রবীন চোখ মুখ ধুয়ে এসে দেখল বিপ্লব টিভির দিকে পেছন ফিরে বসে কি একটা বই পড়ছে।
“কী রে? কী বই পড়ছিস?”
“‘তোমার জন্যে পংক্তিভোজন’।”
“ও, সেই অনিন্দ্যদার বইটা?”
“হুম। তোমাদের দুজনকে উপহার দিয়েছিল।”
“হ্যাঁ। সেসব কবেকার কথা… মনে হয় যেন গত জন্মের কথা। যত বড় কবি, তত বড় মানুষ। ভাল মানুষগুলোই সব আগে চলে যায়। আর যত আজেবাজে লোক…” দীর্ঘশ্বাসটা বেরিয়েই পড়ে। “যাক গে। আমি একটু হেঁটে আসি।”
“চলো আমিও যাই।”
রবীন আবার অবাক হয়, ভাবে এ সুখ টিকবে তো? চায়নি, তবু গেয়ে ফেলে “তুমি তো সেই যাবেই চলে / কিছু তো না রবে বাকি।” বিপ্লবের মুখটা নিমেষে কালো হয়ে যায়। ঠিক যেমনটা ওর ছোটবেলায় হত, রবীন যদি কখনো বলত “বাবা কি আর চিরকাল থাকবে রে?” মুখটা দেখে রবীনের তীব্র অপরাধবোধ হয়। ইশ! ভারী অন্যায় হল ছেলেটার প্রতি। কত বড় হয়ে গেছে, কত দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে সেসব কথা না ভেবে রবীন ঠিক তা-ই করে ফেলে যা বিপ্লবের ছোটবেলায় করত এই সময়। বুকে জড়িয়ে ধরে। “চল বাবা, ঘুরে আসি।”
রবীন আজ মোটেই হাঁটতে বেরোয়নি, বেরিয়েছে কোথায় কেমন ভোট হল কমরেডদের থেকে সেই খবর নিতে। পার্টি অফিসে গিয়ে কোন লাভ নেই। সেখানে বলরাম আর শ্যামল তাদের স্তাবকবৃন্দ নিয়ে সারা সন্ধে বসে বসে ২৪ ঘন্টা দেখবে টিভিতে, আর রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে কী হতে চলেছে তা নিয়ে মনোজ্ঞ ভাষণ দেবে। ওরা নিশ্চিত যে এই কেন্দ্রে এবং গোটা পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট হৈ হৈ করে জিতবে। কোন পোলিং এজেন্ট যদি অন্যরকম কোন খবর দেয় তাকে ওরা উড়িয়ে দেবে, ভোটারদের শ্রেণীচরিত্র বোঝাবে হয়ত। রবীন বিপ্লবকে নিয়ে গিয়ে ঢুকল বাবলুর দোকানে।
“বাবলু, চা দে।”
“আরে! বিপ্লববাবু কবে এল?”
“এই তো। পরশু।”
“তোমারও কি লাল চা?”
“না, আমার দুধ চা।”
দোকানে তখন বেশ লোকজন। রবীন জিজ্ঞেস করল “বাবলু ভোট দিলি?”
ও কেমন নিরাসক্ত গলায় উত্তর দিল “দিলাম।”
“কেমন ভোট হল তোদের এদিকে? সব ঠিকঠাক ছিল?”
“আমাগো বুথে আর ঠিকঠাক ভোট কবে হয়, মাষ্টারমশয়?” এক কোণ থেকে একজন মাঝবয়সী লোক তীব্র শ্লেষে বলল।
রবীন কিছু বলল না, কিন্তু বাবলু বলল “কেন, এই বার আর অভিযোগ কিসের? যারা ঝামেলা কত্তে আইছিল তাগো ভাগায় দিছ। একজনের তো বোধহয় ঠ্যাঙও ভাইঙ্গা দিছ। আর কী চাই?”
“তা ভাঙছি। আবার আইলে আবার ভাইঙ্গা দিমু। কিন্তু অরা আইব ক্যান? আপনেই কন মাষ্টারমশয়? আমরা বিপদে আপদে আপনাগো কাছে যাই। তা বইল্যা আপনেরা বাইর থিকা মস্তান আইন্যা ভোট দিয়া দিবেন ক্যান? আমাগো ভোট আমাদেরে দিতে দিবেন না? আমরা গরীব মানুষ বইল্যা কি আমাগো ভোটের দাম নাই?”
রবীন উত্তর দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু বাবলু প্রচণ্ড জোরে ধমকে উঠল “আরে তুমি চেনো না, শোনো না, কথা কও ক্যান? কারে কী কইতাছ? এই মাস্টারমশাই লোক নিয়া গেছিল বুথে?”
“তা তো কই নাই,” লোকটাও রুখে উঠল। “কিন্তু উনার পার্টিরই লোক তো সব। উনারে শুনতে অইব।”
“কে কইছে ওনার পার্টির লোক? গায়ে ল্যাখা আছিল?” বাবলু এবার গায়ের জোরে তর্ক করতে শুরু করল। লোকটাও ছাড়বার পাত্র নয়। হাতাহাতির উপক্রম দেখে রবীন উঠে বাবলুকে জড়িয়ে ধরল। সে চেঁচিয়েই চলল। অন্য খদ্দেররা সেই লোকটাকে ধরে ফেলে জোর করে বসাল। অনেকে ধমক ধামক দিল অপ্রিয় কথা বলার জন্যে। লোকটা সি পি এম আর বাবলুকে কাঁচা খিস্তি করতে করতে দোকান থেকে বেরিয়ে গেল।
বাবলুকে একটু ঠান্ডা করে, চা না খেয়েই রবীন বিপ্লবকে নিয়ে বেরিয়ে হরিমতীর ঝিলের ধারে এসে বসল। এতক্ষণ পরে ছেলের দিকে তাকিয়ে দ্যাখে চেহারাটাই বদলে গেছে। ফুঁসছে।
“তোমরা তাহলে এখানেও ছাপ্পা মেরে জেতো।”
রবীন চুপ করে থাকে।
“এই জন্যে। এই জন্যে আমি চলে গেছিলাম। এই জন্যে ঠিক করেছিলাম আর কোনদিন আসব না।” বলেই বিপ্লব উঠে হনহনিয়ে হাঁটা দেয় বাড়ির দিকে। রবীনের মনে হয় ও পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে গেছে। এই ঝিলের ধার থেকে উঠে আর কোনদিন বাড়ি ফিরতে পারবে না।
ভাল লাগলে টাকা দিতে পারেন Google Pay / Paytm / BHIM বা অন্য UPI অ্যাপের মাধ্যমে journopratik@okhdfcbank কে
অথবা
নেট ব্যাঙ্কিং বা অন্য উপায়ে নিম্নলিখিত অ্যাকাউন্টে
Pratik Bandyopadhyay
A/c No. 14041140002343
HDFC Bank
Branch: South Calcutta Girls’ College
IFS Code: HDFC0001404
MICR Code: 700240048