
পূর্বকথা: স্কুল থেকে অবসর নেওয়ার দিন রবীনের মনে পড়ে পাগল মহারাজের কথা। একবার বলেছিলেন যখন আর কোন কাজ বাকি নেই, চলে যাওয়ার সঠিক সময় তখনই।
সপ্তাহান্তের সন্ধেগুলোয় নেকলেস রোড গমগম করে। হুসেন সাগরের পাড়ে সেই সময় অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের ভিড়। আসলে কোন আড়াল নেই, কিন্তু প্রেমিকযুগল চিরকালই তো একে অপরের আড়াল। বিপ্লব বেশ কয়েকবার ঐ সময়ে গেছে ওখানে। কিন্তু ঝটপট খাওয়াদাওয়া সেরেই ফিরে এসেছে। ঐ পরিবেশে একা বসে থাকা অস্বস্তিকর। সেসব অবশ্য হায়দরাবাদ বাসের একেবারে গোড়ার দিকের কথা। মাস ছয়েক হল মাঝে মধ্যেই বিপ্লবকে নেকলেস রোডের সন্ধ্যায় কোন বেঞ্চে বসে থাকতে দেখা যায়। হায়দরাবাদের আলো চুঁইয়ে পড়া মল বা রেস্তোরাঁগুলোর তুলনায় এই জায়গাটা ওর ভাল লাগে। এখানে যে বিলাস খুব কম তা নয়, তবু এখানে পথ আছে, জল আছে, আকাশ আছে, রাস্তার ধারে দোকান খুলে বসা মানুষ আছে। পা দুটো মাটিতে থাকে। শুরুতে আপত্তি করলেও মালিনী এখন মেনে নিয়েছে ব্যাপারটা।
নিজেদের রাজনীতি উচ্চাকাঙ্ক্ষার পায়ে নিবেদন করে ভোগসুখের সন্ধানে জীবন কাটাচ্ছিল যে দুটো মানুষ, লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের হার তাদের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। বিপ্লব মজা করে প্রায়ই বলে “পশ্চিমবাংলার ইতিহাসে মমতার এটাই সবচেয়ে বড় অবদান হয়ে থাকবে।” মালিনীর মোটেই পছন্দ হয় না রসিকতাটা। সে বলে “এতে আবার মমতার কী ক্রেডিট? বরং প্রসূন কিছুটা ক্রেডিট দাবী করতে পারে। ও-ই তো হৈ হল্লা করে পার্টিটা অর্গানাইজ করেছিল। সেখানে আমরা গেলাম, ঝামেলা হল, তাই আমাদের মধ্যে রেগুলার কথাবার্তা আরম্ভ হল।”
সেদিন রোহিতের ফ্ল্যাট থেকে দুজনে একসাথে বেরিয়ে এসেছিল। মালিনী যে বাড়িতে মেস করে থাকত সেটা ওখান থেকে হেঁটে মিনিট পনেরো। প্রচণ্ড উত্তেজিত দুজনে হনহনিয়ে দশ মিনিটে পৌঁছে গেছিল। ঐ দশ মিনিট দুজনে যত কথা বলেছিল, এক ডিপার্টমেন্টে কাজ করা সত্ত্বেও আগের দেড় দু বছরে তত কথা বলেনি। বিপ্লবের যত রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ জমা হয়েছিল বাম রাজনীতি সম্পর্কে, বাবার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ছিল — সব ও উত্তেজনার বশে উপুড় করে ফেলেছিল মালিনীর সামনে। আর মালিনী, যে তখন মনে করত সি পি এম কখনো কোন দোষ করে না, সে গোটা রাস্তা ঝগড়া করতে করতে গিয়েছিল। ও ঝগড়া কি দশ মিনিটে ফুরোবার? অগত্যা ওদের ফ্ল্যাটের বাইরে দাঁড়িয়ে আরো কিছুটা, তারপর মালিনীর সঙ্গিনীদের ডাকে ওদের ফ্ল্যাটে কফি খেতে খেতে আরো অনেকক্ষণ সেই ঝগড়া চলেছিল। শেষে ওর এক রুমমেট ঘড়ি দেখিয়ে বলল “ভাই, এর পরে যদি তুমি থেকে যাও, বাড়িওয়ালা কিন্তু পুলিশ ডাকবে।” অপ্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল।
পরদিন ঘুম থেকে উঠে বিপ্লব দ্যাখে মেয়েটা ঝগড়া বন্ধ করতে একদমই রাজি নয়৷ সকাল সকাল এস এম এস করেছে “রাজ্যটাকে বাঁচাতে হলে ইন্ডাস্ট্রি ছাড়া চলবে না।” বিপ্লবও দাঁত মেজেই কোমর বেঁধে লেগে পড়ল শিল্প কী, শিল্পায়ন কী, সমাজতান্ত্রিক উন্নয়ন বলতে কী বোঝায়, পুঁজিবাদী উন্নয়নের সাথে তার তফাত কী — এসব বোঝাতে। দ্রুত এস এম এস করতে ও একদমই স্বচ্ছন্দ নয়। অতএব ফোন করা ছাড়া গতি নেই। যত দিন গেল ঝগড়া কমে এল। দু একটা বিষয় নিয়ে এখনো ঝগড়া হয়। যেমন বিপ্লব বলে “তোর বাবা মায়ের কিন্তু উচিৎ হয়নি তোকে কনভেন্টে ভর্তি করা।”
“কেন?”
“কেন মানে? পার্টি প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ইংরিজি তুলে দিল, আর পার্টির লোকের মেয়ে কনভেন্টে গিয়ে ইংরিজি শিখবে?”
এরকম কিছু ঝগড়া থেকেই যাবে বলে বিপ্লবের ধারণা। সে কথা বললেই মালিনী বলে “তাহলে আমার সাথে ঘুরঘুর করিস কেন? যা না, ঐ যে ফোর্থ ফ্লোরের সুন্দরী মেয়েটার সাথে প্রেম কর গিয়ে। বহু বছর ধরে তো আলাপ করার ইচ্ছা।”
“সে করতেই পারি। কিন্তু ওর সাথে এরকম ঝগড়া করা যাবে কি?”
“তুই যা ঝগড়ুটে। সবার সাথে ঝগড়া হবে।”
“ধুর। এরকম ঝগড়া করার লেভেলই নেই ঐ মেয়েটার।”
“ঝগড়ার আবার লেভেল কী?”
“ও বাবা! লেভেল নেই? সবাই তো আর তোর মত কিশোর বাহিনী করেনি ছোটবেলায়। কোলে চড়ে ব্রিগেডেও যায়নি। আর গেলেও এখন রং বদলে ফেলেছে। তাদের সাথে কী নিয়ে ঝগড়া করব?”
“ও। তার মানে তুই ঝগড়া করার জন্যে আমার সাথে ঘুরিস?”
“ঐ আর কি। ঝগড়া করতে করতে ভাল লেগে গেল। উপায় ছিল না।”
এ কথার পর আরেক চোট ঝগড়া হয়। ঠিক ঝগড়া নয় হয়ত, কারণ মালিনী রেগেমেগে চুপ হয়ে যায়, ক্রমশ লাল হয়ে ওঠে। বিপ্লব শুধু মজা দ্যাখে আর মিটিমিটি হাসে। তাতে মালিনীর রাগ আরো চড়ে যায়।
বিপ্লব আর মালিনীর হঠাৎ এতদিন পরে ভাব, এবং যাকে বলে প্রেম, সেটা নিয়ে অফিসের ওরা খুব ঠাট্টা করে। তার মধ্যে কিছুটা ঈর্ষা মিশে আছে। কারণ অমরেশ অনেকদিন চেষ্টা করেও কিছু করে উঠতে পারেনি। প্রসূনের অবশ্য মনটা পরিষ্কার। পেছনে কথা বলে না। বিপ্লব, মালিনীর সামনেই বলে “রতনে রতন চেনে, সি পি এমে চেনে সি পি এম।”
বিপ্লব হেসে জিজ্ঞেস করে “তাতে দোষ কী?”
“দোষ একটাই। সবাই বলে আই লাভ ইউ, তোরা বলিস লাল সেলাম।”
এ কথায় না হেসে উপায় নেই। অমরেশ ছাড়া সবাই হাসে। বিপ্লব, মালিনীও। প্রসূন বলে “সত্যি কথা বল, তাই কিনা?” ওদের জবাব দিতে না দিয়েই নওয়াজ বলে “ইয়ার, মুঝে তো লগতা ইনকা বচ্চা বাহর নিকলতে হি চিল্লায়গা ‘ইনকলাব জিন্দাবাদ।’”
ওরা বড্ড বাড়িয়ে বলে, তবে মালিনী আর বিপ্লব একান্তে যে অনেকক্ষণ রাজনীতির কথাই বলে তা সত্যি। দুজনের ছোটবেলা এমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রাজনীতির সাথে, ওটা বাদ দিয়ে চলবে কী করে?
মালিনীর বাবা হোলটাইমার, মা-ও পার্টি সদস্য, তবে সরকারী কর্মচারী। ওর মামাও পার্টি করতেন, সিদ্ধার্থশঙ্করের আমলে খুন হয়ে যান। মেয়েটার সাথে যে ঝগড়ার চেয়ে বেশি কিছু হতে পারে, কথাটা বিপ্লবের প্রথম মনে হয়েছিল যেদিন ওদের মেসে বসে ও গেয়ে শুনিয়েছিল “নাম তার ছিল জন হেনরি / ছিল যেন জীবন্ত ইঞ্জিন।”
প্রাথমিক ঝগড়ার পর্ব মিটে যাওয়ার পর আর কিছু নয়, শুধু কতকগুলো চেনা গান, চেনা গল্প নতুন করে শোনবার লোভেই ছুটির দিনে মালিনীর কাছে পৌঁছে যেত বিপ্লব। অনেক সময় যেতে চেয়েও যেতে পারত না। মালিনী হয়ত বন্ধুদের সাথে কোথাও বেরোচ্ছে, সিনেমায় যাচ্ছে। ভীষণ রাগ হত তখন। নিজেকে বোঝাত — এ অন্যায় রাগ। কেনই বা বন্ধুবান্ধব বাদ দিয়ে ওর জন্যে বসে থাকবে মেয়েটা? পরদিন অফিসে হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও মুখখানা হাঁড়ি হয়ে থাকত, মালিনীর দিকে তাকাতেই পারত না বিপ্লব। তারপর মালিনী একদিন বলল “অ্যাই শোন, তোর আমার উপর এত রাগ কিসের রে?”
“রাগ? কোথায়?”
“মিথ্যে কথা বলিস না। আমি কিছু বুঝি না নাকি?”
“কী বুঝিস?”
“আমি কালকে আসতে বারণ করলাম বলে রাগ করেছিস?”
“না তো! রাগ করব কেন? তোর বন্ধুদের সাথে প্রোগ্রাম করা ছিল, তাই বেরিয়েছিস। এতে আমার রাগ করার কী আছে?”
“শোন, বিপ্লব। আমি সোজা কথা পছন্দ করি। তুই আমাকে বললেই পারতিস, বেরোস না। আমি বেরোতাম না।”
“তা বলতে যাব কেন? ওটা তোর ব্যক্তিগত ব্যাপার।”
“তা বলবি কেন? একা একা সাল্ক করবি কেবল। ডিসগাস্টিং।”
“সাল্ক করলাম কখন? যাব্বাবা!”
“থাক। তোকে আর কিছু বলতে হবে না। তুই যে বলার কথাগুলোই বলে উঠতে পারিস না সেটা আমি বুঝে গেছি।”
বিপ্লব ভেবে দেখেছিল, মালিনী ভুল কিছু বলেনি। বাবার সাথেও তো কত কথা বলার ছিল। সেগুলো না বলেই চলে এসেছে। পরে মনে হয়েছে, রাগ করে চলে না এসে বরং বাবাকে চেপে ধরা উচিৎ ছিল। শুধু রিগিং নয়, সবকিছু নিয়েই।
বিপ্লবের না বলা কথা মালিনী বুঝে নিয়েছিল তাই রক্ষে। বিপ্লব তো কোনদিনই বলে উঠতে পারত না, আর নেকলেস রোডের মনোরম সন্ধ্যার কোন স্মৃতিও গড়ে উঠত না। অন্ধকারে হুসেন সাগরের ঠিক মাঝখানের বুদ্ধ মূর্তিটার দিকে নীরবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একদিন বিপ্লব বলল “মাঝে মাঝে ফিরে যেতে খুব ইচ্ছে করে, জানিস?”
“কোথায়? কলকাতায়?”
“সবুজগ্রামে। এখানে সবই আছে, তবু যেন কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে অনেক সময়। আগে তো আরো লাগত, এখন তবু তুই আছিস বলে… আসলে আমি বোধহয় খুব ঘরকুনো।”
“আমার থেকে কম। মাস তিনেক অন্তর বাবা-মাকে না দেখলে আমার চলেই না। ঐ জন্যে বারবার ওদের এখানে দৌড়ে আসতে হয়। বুঝি ওদের বয়স হচ্ছে, হয়ত কষ্টই হয়। কিন্তু কী করব? আমি তো আর ঘনঘন ছুটি পাব না।”
“তার মানে তুই চান্স পেলেই কলকাতায় চলে যাবি?”
“চান্স তো খুঁজলেই পাব। কিন্তু মা-ই তো সারাক্ষণ বলে ‘এখানে ফিরো না, এখানে ফিরো না’।”
“কেন?”
“বলে ওখানে কোন ফিউচার নেই, চাকরি বাকরি নেই…”
“সে হয়ত উনি জানেন না বলে বলেন। তুই বল যে আই টি তে কলকাতায় চাকরি পাওয়া যাবে না এমন নয়।”
মালিনী খানিক চুপ করে থেকে বলে “এখন তো আর চাইলেই যাওয়া যাবে না।”
“কেন? কে আটকাবে?”
“ওমা! সে কি রে! আমি কলকাতায় চলে যাব তোর কষ্ট হবে না? কি নিষ্ঠুর ছেলে রে বাবা!”
“কষ্ট কি আর হবে না…”
কথাটা শুনেই মুহূর্তে রাগ পড়ে যায় মালিনীর।
“তাহলে তুইও চল না রে। একটা কিছু খোঁজ। ঠিক করে খুঁজলে কয়েক মাসের মধ্যেই পাওয়া যাবে।”
“না। থাক।”
বিপ্লব এমন জোর দিয়ে বলে কথাটা যে মালিনী হতভম্ব হয়ে যায়। বিপ্লব অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়, মালিনী বুঝতে পারে না এ প্রসঙ্গে আর কথা বলা যাবে কিনা। মনস্থির করতে সময় নেয়, তারপর বলেই ফেলে “এইমাত্র তো বললি ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। তাহলে?”
বিপ্লব চোখ বন্ধ করে শরীরটা এলিয়ে দেয় বেঞ্চিতে। তারপর বলে “ইচ্ছে তো করে, কিন্তু ভরসা হয় না।”
“ভরসা হয় না? কাকে?”
“কাউকেই না। চারপাশটা অনেক বদলে গেছে। দেখে বুঝিস না? এমনকি আমরাও অনেক বদলে গেছি। নইলে কী বলে আমরা সেদিন সেলিব্রেট করতে গেছিলাম?”
“ভাল করিনি কাজটা। আসলে এইভাবে কম্প্রোমাইজ করাটা তো আমাদের অভ্যেস হয়ে গেছে। হোয়েন অ্যাট রোম, অ্যাক্ট লাইক রোমানস।”
“এক কথায় সুবিধাবাদী। তুই, আমি — সবাই সুবিধাবাদী। সুতরাং আর পাঁচজনও সুবিধাবাদী হবে এটাই তো স্বাভাবিক। সেখানে আমি কিনা ফেরত যেতে চাইছি সবুজগ্রামে। কোন সবুজগ্রামে? যেখানে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াত। কোন প্রতিবেশীর বাড়িতে রান্না হচ্ছে না জানলে তার ছেলেমেয়েদের ডেকে খাওয়াত। আমার বাবাকে পুলিশ ধরতে এলে যে পার্টির ধার কাছ দিয়েও যায় না, সে লুকিয়ে রাখত। আর পার্টিটাও তেমন ছিল। যাকগে। সে সবুজগ্রাম তো আর নেই। কী হবে ফিরে গিয়ে? শুধু কষ্ট বাড়বে।”
“এরকম বলছিস কেন? আমাদের ছেলেবেলার সবকিছুই কি বদলে গেছে নাকি?”
“বদলায়নি? তুই নিজেই বল? তোর কলকাতা সেই আগের কলকাতা আছে? গরীব লোকের শহর দিন দিন বড় লোকের শহর হয়ে যাচ্ছে না? কাঁড়ি কাঁড়ি শপিং মল হচ্ছে কেবল। আর কিচ্ছু হচ্ছে না।”
বিপ্লবের চোখ বন্ধ, তাই ও দেখতে পায় না কথাগুলো কেমন বুকে বেঁধে মালিনীর। রামধন মিত্র লেনের বাড়ি, পাশের বাড়ির জেঠিমা, জ্যাঠামশাই, ওদের পোলিও আক্রান্ত ছেলে বাবুদা, উল্টোদিকের ফ্ল্যাটবাড়ির মানাইদি, ওর বোন টুপাই, মোড়ের মুড়ির দোকানের বিহারী কাকু, তার ডালমুট, ট্রামলাইনের দু পাশের দোকানগুলো, স্টার থিয়েটারের সামনের ফুচকাওয়ালা, পাড়ার বারোয়ারী পুজোর ভাসানের সিদ্ধি — সবাইকে মনে পড়ে একে একে। তারা সবাই বদলে গেছে? বদলে যাচ্ছে? বিশ্বাস করতে একদম ইচ্ছে করে না। কিন্তু কলকাতা যে ভরে যাচ্ছে শপিং মলে, মানুষের সাথে মানুষের কথা বলার সুর যে বদলে যাচ্ছে, যাতায়াত যে কমে যাচ্ছে তা তো ঠিকই। বিপ্লব তো নেহাত ভুল বলছে না। পার্টি? হ্যাঁ পার্টিও যে বদলে যাচ্ছে তাতে সন্দেহ কী? মা তো সেই জন্যেই আজকাল আর খুব জরুরী মিটিং না থাকলে পার্টি অফিসের দিকে যায় না। মালিনী নিজের কানে দু একবার শুনেছে মা বাবাকে বলছে “এবার আর ভাবছি রিনিউ করাব না।” বাবা তাতে প্রচণ্ড রেগে গিয়ে গোটা দিন খাওয়াদাওয়া বন্ধ রেখেছিল একবার। আরেকবার ঠান্ডা গলায় বলেছিল “তাহলে আমার শ্রাদ্ধশান্তি যা করবে ঠিক করে রেখেছ সেগুলো সেরে ফেলো। দেহ দান তো করতে দেবে না।”
কান্না চেপে মালিনী বলে “আর সবাই বদলালেও বাবা-মা তো বদলায়নি।”
“তোর বাবা-মা হয়ত বদলায়নি,” বিপ্লব চোখ না খুলেই বেশ নিশ্চিন্তে বলে।
মালিনী দিশাহারা হয়ে যায়। কোন সাড়াশব্দ নেই দেখে বিপ্লব একবার মালিনীকে চোখ খুলে দেখে নেয়। তারপর বলে “এই ভাল। প্রত্যেকের ভাল স্মৃতিগুলোই বেঁচে থাক। জোয়ান বিপ্লবীদের রক্ষণশীল বুড়ো বয়স দেখার শখ নেই আমার।”
মালিনীর দীর্ঘশ্বাসের শব্দ হুসেন সাগরের অপর পাড় থেকেও বোধহয় শোনা যায়। আবহাওয়া হালকা করার জন্যে বিপ্লব মনে করায় “তুই যেন কবে থেকে ছুটিতে যাচ্ছিস?”
“২৩শে জানুয়ারী।”
“যাওয়ার সময় একটা জিনিস দেব। আমার বাড়ি গিয়ে একদিন দিয়ে দিবি? অনেকদিন ধরে পড়ে আছে, কুরিয়ারে দিতে সাহস পাচ্ছি না।”
ভাল লাগলে টাকা দিতে পারেন Google Pay / Paytm / BHIM বা অন্য UPI অ্যাপের মাধ্যমে journopratik@okhdfcbank কে
অথবা
নেট ব্যাঙ্কিং বা অন্য উপায়ে নিম্নলিখিত অ্যাকাউন্টে
Pratik Bandyopadhyay
A/c No. 14041140002343
HDFC Bank
Branch: South Calcutta Girls’ College
IFS Code: HDFC0001404
MICR Code: 700240048