ওয়াসিম জাফর: ক্রিকেটের গৌরবহীন একা

ওয়াসিমের দীর্ঘ কেরিয়ারের টিমমেটদের অধিকাংশের নীরবতা দেখিয়ে দিচ্ছে, তাঁদের কাছে ওঁর শেষ পরিচয় একজন ভিন্নধর্মী মানুষের।

ওয়াসিম জাফর কিন্তু মুনাওয়ার ফারুকি নন। তিনি হিন্দু দেবদেবী বা অমিত শাহ – নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে মস্করা করতে পারেন এমন কোন সম্ভাবনা নেই। করেছেন এমন কোন ইউটিউব ভিডিও-ও নেই। কারণ ওটা ওয়াসিমের পেশা নয়। তাঁর পেশা ক্রিকেট। তিনি প্রাক্তন ক্রিকেটার, অবসর নেওয়ার পর উত্তরাখণ্ড রঞ্জি দলের হেড কোচের চাকরি করছিলেন। পদত্যাগ করেছেন, কারণ তাঁর মতে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ উত্তরাখণ্ডের (সিএইউ) কর্তারা তাঁর কাজে অন্যায় হস্তক্ষেপ করছিলেন, নিজেদের পছন্দের ক্রিকেটারদের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও দলে নিচ্ছিলেন। ব্যাপারটা এ দেশের খেলার জগতের চিরপরিচিত ঘটনাগুলোর একটা হয়েই থেকে যেত, যদি না টিম ম্যানেজার নবনীত মিশ্র ওয়াসিমের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ আনতেন।

ওয়াসিমের পদত্যাগের পর এক হিন্দি কাগজের কাছে তাঁর নামে বিষোদগার করতে গিয়ে নবনীত বলেন হেড কোচ নাকি দল নির্বাচন করছিলেন ধর্মের ভিত্তিতে। অর্থাৎ মুসলমান হলে দলে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছিল। আরো গুরুতর অভিযোগ, টিম হাডলে (পরস্পরের কাঁধে হাত রেখে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আলোচনা করার সেই যে প্রথা জন রাইট আর সৌরভ গাঙ্গুলি ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতীয় ক্রিকেটে চালু করেছিলেন) “রামভক্ত হনুমান কি জয়” বলতে বারণ করেছিলেন। শুধু কি তাই? বায়ো বাবল ভেঙে এক মৌলবীকে নিয়ে এসেছিলেন সাজঘরে। শিশুর আত্মার উপর এমন নরকের দুঃস্বপ্ন চাপিয়ে দেওয়ার পরে কি আর…?

আর কী? ওয়াসিমের প্রত্যুত্তর এই প্রশ্নটাই। বলেছেন তিনি যদি সত্যিই সাম্প্রদায়িক হয়ে থাকেন, তাহলে আগেই তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি কেন? উপরন্তু বলেছেন সাম্প্রদায়িক হলে তিনি হিন্দু জয় বিস্তাকে অধিনায়ক করতে চাইতেন না। কর্তারাই বরং তাঁর কথা না মেনে ইসলাম ধর্মাবলম্বী ইকবাল আবদুল্লাকে অধিনায়ক করেন। ওয়াসিম উল্লেখ করেছেন কোন কোন মুসলমান ক্রিকেটারকে তিনি ভাল খেলতে না পারার কারণে প্রথম একাদশ থেকে বাদ দিয়েছেন। এ-ও বলেছেন যে দলের কাউকে হনুমানের বা রামের জয়ধ্বনি দিতে তিনি শোনেননি। বরং শিখদের প্রিয় একটি জয়ধ্বনি দেওয়া হচ্ছিল। তিনি তার বদলে “গো উত্তরাখণ্ড” বা “লেট’স ডু ইট উত্তরাখণ্ড” কিংবা “কাম অন উত্তরাখণ্ড” বলতে পরামর্শ দেন। কারণ দলটা কোন সম্প্রদায়ের হয়ে খেলছে না, খেলছে রাজ্যের হয়ে। সাম্প্রদায়িক মানসিকতার লোক হলে তো দলকে দিয়ে “আল্লা হো আকবর” বলাতেন। মৌলবীকেও তিনি সাজঘরে আনেননি, এনেছিলেন ইকবাল — ওয়াসিমের বক্তব্য এই। [লিঙ্ক

ওয়াসিমের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে এখনো সিএইউ কর্তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করে উঠতে পারেননি। ইতিমধ্যে ইকবাল বলেছেন তিনিই মৌলবীকে জুম্মার নমাজের জন্য নিয়ে এসেছিলেন বটে, তবে ওয়াসিমের কাছ থেকে অনুমতি পাননি। তিনি বরং টিম ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করতে বলেছিলেন। হেড কোচের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ আনা নবনীত স্বয়ং মৌলবী সাহেবকে নিয়ে আসার অনুমতি দেন। বারণ করলে তাঁকে আনা হত না। [লিঙ্ক] । সত্যি কথা বলতে, ইকবালের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে মৌলবী সাহেবের সাথে ক্রিকেটারদের যে ছবি রয়েছে তার ত্রিসীমানায় ওয়াসিম নেই। এই প্রবন্ধ লেখার সময় পরিস্থিতি এই, যে সিএইউ সচিব মহিম বর্মা (ওয়াসিম পদত্যাগপত্রে মূলত এই ভদ্রলোকের বিরুদ্ধেই হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনেছেন) প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছেন বায়ো বাবল লঙ্ঘন করা সম্বন্ধে ম্যানেজারের থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে ওয়াসিমের কিন্তু নামগন্ধ নেই।

এতখানি এসে নিশ্চয়ই ভাবছেন, এর মধ্যে মুনাওয়ার ফারুকির কথা উঠছে কেন? উঠছে এই জন্য যে শেষ বিচারে মুনাওয়ারের দোষ যা, ওয়াসিমের দোষও তাই। মুসলমান পরিচিতি। ওয়াসিম তবু ভাগ্যবান। স্রেফ বদনামের ভাগী হতে হয়েছে, দক্ষিণপন্থী প্রোপাগান্ডা ওয়েবসাইট তার চরিত্রানুসারে ঘটনা আর রটনার তফাত না করে ট্রোলবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে। মুনাওয়ারের মত নির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও মাস খানেক হাজতবাস তো করতে হয়নি।

যদি মনে হয় তুলনাটা অহেতুক, তাহলে লক্ষ করুন ক্রিকেট প্রশাসকদের বিরুদ্ধে ওয়াসিমের পদত্যাগপত্রে লেখা অভিযোগগুলো নস্যাৎ করতে কী কী বলা হয়েছে। বলা যেতেই পারত ওয়াসিম অযোগ্য, ওঁর কোচিং-এ দল কিছুই জেতেনি, তাই উনি কর্তাদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পালিয়ে গেছেন। অথবা বলা যেতে পারত খেলোয়াড়রা ওয়াসিমকে পছন্দ করছিল না, তাই উনি পালিয়ে বাঁচলেন। কোচের চলে যাওয়ার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে এইসব কথাই ভারতের বিভিন্ন খেলার কর্মকর্তারা চিরকাল বলে থাকেন। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকদের তো এসব শুনে শুনে কান পচে গেছে। উত্তরাখণ্ডের কর্তারা তেমন বললেন না কিন্তু। বললেন এমন কিছু কথা, যা একমাত্র মুসলমানদের সম্বন্ধে বললেই মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলা যায় এবং সব প্রশ্ন ভুলিয়ে দেওয়া যায়। ভেবে দেখুন, যদি উত্তরাখণ্ডের হেড কোচের নাম ওয়াসিম জাফর না হয়ে অসীম জৈন হত, তার সম্বন্ধে যদি বলা হত, “বেছে বেছে হিন্দু ক্রিকেটারদের খেলায়”, “টিম হাডলে আল্লা হো আকবর বলতে বারণ করেছিল”, “বায়ো বাবল লঙ্ঘন করে সাজঘরে স্থানীয় মন্দিরের পুরোহিতকে ডেকে এনে প্রার্থনা করেছে” — তাহলে সবাই বলতেন না, ঠিকই করেছে? যারা “হিন্দু খতরে মে হ্যায়” বলে, শুধু তারা নয়, বাকিরাও কি মনে করতেন না বিনা দোষে লোকটার পিছনে লাগা হচ্ছে?

সদ্য সমাপ্ত অস্ট্রেলিয়া সফরেই কয়েকজন ভারতীয় ক্রিকেটার বায়ো বাবল ভেঙে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে এক ভক্তের ক্যামেরাবন্দী হয়েছিলেন এবং, ভক্তটির বয়ান অনুযায়ী, তাঁকে আলিঙ্গন করেছিলেন। সেকথা প্রকাশ্যে আসার পর এ দেশের আপামর ক্রিকেটপ্রেমী এবং ক্রিকেট সাংবাদিক ভক্তটিকেই আক্রমণ করেন। ক্রিকেটাররা নাকি অবোধ শিশু। উপরন্তু তাঁরা বৃষ্টি এসে যাওয়ায় নিরুপায় হয়ে রেস্তোরাঁয় ঢুকেছিলেন। ক্রিকেট বোর্ডও ক্রিকেটারদেরই পাশে দাঁড়ায়। বলে বাবলটি তো তেমনি আছে, কমেনি এক রত্তি। আজ হঠাৎ মৌলবী সাজঘরে আসায় সকলের খেয়াল হয়েছে সবার উপরে বাবল সত্য, তাহার উপরে নাই।

ঘটনাটায় ওয়াসিমের যোগ তো এখন অব্দি প্রমাণিতই নয়। তাঁর অন্য কথাগুলো ভেবে দেখুন। ক্রিকেটজীবনের শেষ দিক থেকে তিনি লম্বা দাড়ি রাখেন বলে তাঁকে দেখে আপনার আসাদুদ্দিন ওয়েসির কথা মনে পড়তেই পারে, পাকিস্তানি বলতেও ইচ্ছা করতে পারে, কিন্তু তিনি টিম হাডলে যে যুক্তিতে শিখ ধর্মের জয়ধ্বনিরও বিরোধিতা করেছেন, সেটাই প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা নয় কি? খেলছি উত্তরাখণ্ডের হয়ে, তাই উত্তরাখণ্ডের নামে ধ্বনি দাও, কোন ধর্মের নামে দিও না। এর চেয়ে যুক্তিযুক্ত পরামর্শ কিছু আছে? ভারত কি পাকিস্তানের মত এক ধর্মের দেশ যে এখানে কোন একটা ধর্মের জয়ধ্বনিকে দলের জয়ধ্বনি করে দেওয়া হবে, আর অন্য ধর্মের খেলোয়াড়দেরও তা মেনে চলতে হবে? উঠতে বসতে ইসলামের একেশ্বরবাদকে বলব গোঁড়ামি আর হিন্দুদের বহুত্ববাদকে বলব উদারতা, তারপর সামাজিক জীবনে নিজের ঈশ্বরকেই চাপিয়ে দেব?

সত্যি কথাটা সহজ করেই বলা যাক। এ দেশে এই মুহূর্তে একজন মুসলমানের মুসলমান হওয়াই সবচেয়ে বড় সমস্যা। তিনি মুনাওয়ারের মত দাড়ি গোঁফ কামানো হালফ্যাশানের তরুণ হলেও সমস্যা, ওয়াসিমের মত লম্বা দাড়ি রাখা, ইকবালের মত মৌলবী ডেকে জুম্মার নামাজ পড়া মুসলমান হলেও সমস্যা। একজন লোক হাসিয়ে আয় করছে, যেভাবে হাসাচ্ছে তা আমার পছন্দ নয়। আমি না শুনলেই পারি। কিন্তু তাতে আমি থামব কেন? মুসলমান পরিচিতিটাকে হাতিয়ার করি। তাহলেই তার মুখ বন্ধ করে দেওয়া যাবে। উপরি জেলের ঘানিও টানানো যাবে। একজন দেশের হয়ে দিব্যি ক্রিকেট খেলেছে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সকলের চেয়ে বেশি রান করেছে, এখন কোচিং করাচ্ছে, আবার আমার দোষও ধরছে। সেটা আমার পছন্দ নয়। কী করা যায়? খুব সোজা। মুসলমান পরিচিতিটাকে হাতিয়ার করি। তাহলেই তার মুখ বন্ধ করে দেওয়া যাবে।

এই দেশ কোনদিনই নিখুঁত ছিল না, স্বাধীন হওয়ার সময় থেকেই সহস্র স্ববিরোধিতা। সংবিধান সব নাগরিককে সমান চোখে দেখেছে, অথচ সমাজ সকলকে সমান মনে করে না। এই বৈপরীত্য সম্পর্কে স্বয়ং ভীমরাও আম্বেদকর সচেতন ছিলেন। সংবিধান সভার শেষ বক্তৃতায় তিনি সেকথা উল্লেখও করেছেন। এই বৈপরীত্য দূর করার দায়িত্ব যাঁদের হাতে ন্যস্ত ছিল, তাঁরা দায়িত্ব পালন করেননি। ফলে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের থানায় কালীপুজো হয়েছে, আমরা শিখেছি এটা সাম্প্রদায়িক নয়, কারণ অন্য ধর্মের লোকেরা তো আপত্তি করেনি। স্কুলে সরস্বতীপুজো হয়েছে, আমরা জেনেছি এটাও সাম্প্রদায়িকতা নয়। কই অন্য ধর্মের ছাত্রছাত্রী বা তাদের বাবা-মায়েরা তো আপত্তি করেনি? ময়দানে ফুটবল মরসুম শুরু হয়েছে বারপুজো দিয়ে, আমরা সাম্প্রদায়িকতা দেখিনি। আই পি এল ফ্র্যাঞ্চাইজ ক্রমাগত হারের দোষ কাটাতে স্টেডিয়ামে পুজো করেছে, তাতেও কেউ সাম্প্রদায়িকতা দেখেনি। ২০১৫-১৬ মরসুমে দিল্লীর রঞ্জি দলকে দিয়ে প্রতিদিন খেলার আগে সূর্য নমস্কার করাতেন কোচ বিজয় দাহিয়া আর অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর। যুক্তি ছিল “A team that prays together stays together.” [লিঙ্ক] । তখনো কারোর মনে হয়নি ব্যাপারটা সাম্প্রদায়িক।

আসলে বরাবর আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা এবং মানদণ্ড ঠিক করেছে সংখ্যাগুরু। আজ অবস্থার এমন অবনতি হয়েছে যে দেশের যে জায়গাটায় ধর্ম বা জাতপাতের পরিচিতি কোন ইস্যু ছিল না বলে আমরা জানতাম, সেই খেলার মাঠেও তফাত করা শুরু হয়েছে।

যদি কেবল কর্মকর্তারাই এমনটা করতেন, তাহলে তবু কথা ছিল। কারণ ভারতের খেলাধুলো চালান আসলে রাজনীতির ব্যাপারীরা। আর এই মুহূর্তে যাদের পাল্লা ভারী, তাদের তো মানুষে মানুষে ভেদ করাটাই রাজনীতি। আমরা অন্তত এই ভেবে সান্ত্বনা পেতাম যে আমাদের খেলোয়াড়রা এভাবে ভাবেন না। তাঁদের কাছে সহখেলোয়াড়ের একটাই পরিচয় — খেলোয়াড়। কিন্তু এখন আর তেমনটা ভাবা যাচ্ছে না। এই লেখা শেষ করা পর্যন্ত অনিল কুম্বলে ছাড়া এ দেশের প্রবাদপ্রতিম ক্রিকেটারদের একজনও ওয়াসিমের পক্ষ নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি। প্রাক্তনদের মধ্যে দোদ্দা গণেশ, অমল মজুমদার, ইরফান পাঠান আর বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে মনোজ তিওয়ারির মত দু একজন ছাড়া সবাই চুপ। ইকবাল আবদুল্লা, বা ওয়াসিমের বিদর্ভের হয়ে খেলার সময়কার টিমমেট ফয়েজ ফজলের সহমর্মিতায় কী-ই বা এসে যায়? ওয়াসিমের দীর্ঘ কেরিয়ারের টিমমেটদের অধিকাংশের নীরবতা দেখিয়ে দিচ্ছে, তাঁদের কাছে ওঁর শেষ পরিচয় একজন ভিন্নধর্মী মানুষের।

মনে রাখা দরকার, ওয়াসিম জাফর যে সে ক্রিকেটার নন। বেশিরভাগ ম্যাচ খেলেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের কুলীন দল মুম্বাইয়ের হয়ে। শুধু যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর তর্কাতীত সাফল্য তা নয়, ভারতের হয়ে ৩১টা টেস্ট ম্যাচে প্রায় ৩৫ গড়ে হাজার দুয়েক রান করেছেন। মাত্র চারজন ভারতীয় ওপেনার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দ্বিশতরান করতে পেরেছেন। ওয়াসিম তাঁদের একজন। অন্যরা সুনীল গাভস্কর, দিলীপ সরদেশাই আর নভজ্যোৎ সিং সিধু। এ হেন ক্রিকেটারকে তাঁর ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য কোণঠাসা করা হচ্ছে, আর চুপ করে আছেন মুম্বাইয়ের মহীরুহেরা। তাঁদের একজন অজিঙ্ক রাহানে এখন ভারতীয় টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক। চেন্নাইতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট শুরুর আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন এই নিয়ে। রাহানে বলেছেন তিনি ব্যাপারটা ঠিক জানেন না। এই রাহানেই সপ্তাহ খানেক কৃষক আন্দোলন সম্বন্ধে যথেষ্ট জানতেন। দেশকে এক থাকার বার্তা দিয়েছিলেন আরো অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে মিলে। এঁরা সবাই এখন স্পিকটি নট। রোহিত শর্মা চুপ, গাভস্করেরও সাড়াশব্দ নেই।

এবং শচীন তেন্ডুলকর। আজও ইউটিউবে দেখা যায় নব্বইয়ের দশকে তৈরি একটা ভিডিও ক্যাম্পেন। সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার আবেদন করতে গিয়ে শচীন সেখানে বলছেন “When we play for India, we’re a team. It doesn’t matter if you’re a Hindu or a Muslim on the field. Don’t let it matter off the field.” সেই ভিডিওতে অমিতাভ ও অভিষেক বচ্চন, অপর্ণা সেন, অনুপম খের, শাবানা আজমির মত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সাথে শচীনও যে অভিনয়ই করছিলেন তা কে জানত?

নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না। সুতরাং ধর্মীয় বিভাজন মাঠে নেমে পড়ায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে কষ্ট হয় মহম্মদ সিরাজের মত যাঁরা একসাথে পিতা আর পিতৃভূমির জন্য কাঁদেন, তাঁদের জন্য। ভারতীয় ক্রিকেট ঐ অশ্রুর যোগ্য থাকবে তো?

https://nagorik.net এ প্রকাশিত।ছবি টুইটার থেকে।

Author: Pratik

সাংবাদিক, লেখক। কাজ করেছেন দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ডেকান ক্রনিকল, দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য স্টেটসম্যান এবং অধুনালুপ্ত দ্য বেঙ্গল পোস্টে। বর্তমানে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও কাগজে লেখালিখি করেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছয়।

Leave a Reply

Discover more from amarlikhon

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading