কিছুদিন আগেই সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আমি যে কলেজে পড়েছি তার নাম জ্বলজ্বল করছিল। কারণ বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে যেখানে একজন মুসলমান অধ্যাপককে সংস্কৃত বিভাগে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পড়াতে দেওয়া হল না, সেখানে আমাদের কলেজের সংস্কৃত বিভাগে একজন মুসলমান অধ্যাপক পড়াচ্ছেন। খবরটা বেরোতে আমার বহু সহপাঠী, বহু সিনিয়র, জুনিয়র তা নিয়ে গর্ব করে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে। কোন কোন মাস্টারমশাইও করেছেন। আমি করিনি। যাঁরা করেছেন তাঁরা ভুল করেছেন মনে করি না। আজকের আবহে দাঁড়িয়ে তাঁরা সঙ্গত কারণেই মনে করেছেন আমাদের কলেজ সঠিক অবস্থানে আছে। তাই গর্বিত হয়েছেন।
কিন্তু আমি, হয়ত নিজের মুদ্রাদোষে, মনে করেছিলাম কোন ধর্মের লোক কোন বিষয় পড়াচ্ছে এটা খবর হয়ে দাঁড়ানোই দুর্ভাগ্যজনক। রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির থেকে বি এ পাশ করে যখন সাংবাদিকতায় এম এ পড়তে ঢুকেছিলাম, একেবারে প্রথম দিকের ক্লাসেই আমরা শিখেছিলাম কুকুর মানুষকে কামড়ালে তা খবর নয়। মানুষ কুকুরকে কামড়ালে খবর। সেই শিক্ষা আজও ভুলতে পারিনি বলে আমার মনে হয়েছিল মুসলমান শিক্ষকের সংস্কৃত পড়ানো খবর হয়ে দাঁড়িয়েছে — এ ভারতীয় হিসাবে আমার লজ্জা, বিদ্যামন্দিরের ছাত্র হিসাবে আমার যতই গর্ব হোক। উপরন্তু প্রতিষ্ঠান হিসাবে, যৌবনের উপবন হিসাবে আমার কলেজের প্রতি আমার যত টানই থাক না কেন, কলেজটাকে পরিচালনা করে যে প্রতিষ্ঠান, সেই রামকৃষ্ণ মিশনকে আমি কোনদিন বিশ্বাস করিনি।
বেলুড় বিদ্যামন্দিরের ছাত্র হওয়ার আগেই আমার জানা ছিল ভগিনী নিবেদিতাকে রামকৃষ্ণ মিশনের সংস্রব ত্যাগ করতে বলা হয়েছিল তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাহায্য করতেন বলে। যুক্তি ছিল মিশন রাজনীতি নিরপেক্ষ থাকতে চায়। তা ভাল কি মন্দ সে নাহয় তর্কসাধ্য। বিশেষত ধর্মীয় সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের রাজনীতিতে জড়ানোর বিষময় ফল যখন আমরা একশো বছর ধরে দেখছি। কিন্তু এন ডি এ ১ এর আমলে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের ছাত্র থাকার সুবাদে দেখেছি, কিভাবে হাওড়া থেকে বেলুড় মঠ অব্দি ট্রেন চালু হওয়ার বন্দোবস্ত হয়ে গেল মসৃণভাবে। পরে যখন সে ট্রেন চালু হল তখন আমি কোন্নগর-হাওড়া নিত্যযাত্রী। দেখতাম রামকৃষ্ণের জন্মতিথির মত দু একটা দিন বাদে সেই ট্রেনে যাতায়াত করতেন মূলত দুজন — ট্রেনের চালক আর গার্ড। অথচ শিয়ালদা-ডানকুনি পথে ট্রেন বাড়ে না বহুকাল, যদিও মানুষ বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করেন রোজ। সারা দেশে খুঁজলে অমন কয়েকশো রুট পাওয়া যেত।
আরো দেখেছি হিন্দুত্ব রাজনীতির প্রতি মহারাজদের প্রসন্নতা। ধর্মীয় ঐতিহ্যের বাধ্যতামূলক ক্লাসে অধ্যক্ষের সাথে একবার আমার আর কয়েকজন সহপাঠীর ধুন্ধুমার বেধে গেল। তিনি বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর অত্যাচারের দোহাই দিয়ে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছিলেন। ঠিক সেই কথাগুলোই বলছিলেন যেগুলো আর এস এস তথা বিজেপি সেই সময় অল্প স্বল্প বলত, আজকাল সোচ্চারে, আরো আক্রমণাত্মক ভাষায় বলে।
লক্ষ্য করে দেখবেন, বাংলার সংস্কার আন্দোলনের নেতৃস্থানীয়রা আজকের বিজেপি-আর এস এসের অতি অপছন্দের লোক৷ বিশেষত বিদ্যাসাগর আর রামমোহন। সোশাল মিডিয়ায় তাঁদের গালাগালি দেওয়া হয়, অশ্লীল মিম বানানো হয়। কোন বাঙালির চোখে যে ঐ দুজন মানুষ খলনায়ক হতে পারেন বিদ্যামন্দিরে না পড়লে আমার জানাই হত না। এক মহারাজ একবার বলেছিলেন ঐ দুজন হিন্দুধর্মের ক্ষতি করেছেন খ্রীষ্টান সরকারের সাহায্য নিয়ে। সতীদাহ প্রথার সপক্ষে আর বিধবা বিবাহের বিপক্ষে এমন ঋজু বক্তৃতা বিজেপির ট্রোলদের মুখে ইদানীং শোনা যায়। বাজপেয়ী বা আদবানি দূরের কথা, নরেন্দ্র মোদীরও আজ অবধি সাহস হয়নি এমনটা প্রকাশ্যে বলার। স্বামী সুবীরানন্দদের মত সাধুদের সমর্থনে যদি প্রধানমন্ত্রী হতে পারে তখন আদিত্যনাথ হয়ত এসব বলবে।
তা এসব অভিজ্ঞতার কারণে রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধানমন্ত্রীর জন্যে গেরুয়া কার্পেট বিছিয়ে দেওয়ায় আমি একটুও অবাক হইনি। আর মিশনে ফোন করে ধিক্কার দেওয়ার কর্মসূচীতেও সামিল হইনি। বুঝে নেওয়া জরুরী যে বিবেকানন্দ যতই এক খণ্ড জমিতে কয়েকজন গুরুভাইকে নিয়ে কষ্টেসৃষ্টে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করে থাকুন, আজকের মিশন একটি অতিকায় এন জি ও, যার দেশী ও বৈদেশিক স্বার্থ রামকৃষ্ণের দরিদ্রতম ভক্তের সাথে না-ও মিলতে পারে, হিন্দুত্ববাদী শাসকের সাথে মিলবেই। কেউ যদি ভাবে রামকৃষ্ণ “যত মত তত পথ” বলেছিলেন বলে, সত্যান্বেষীর আগ্রহে সবরকম সাধনপদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন বলে আজকের মহারাজরা হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে সদর্পে দাঁড়াবেন, তাহলে সে দিবাস্বপ্ন দেখছে।
বিবেকানন্দ বলেছিলেন ভারতে ইসলামিক শরীরে বৈদান্তিক আত্মার সমন্বয় করতে — এসব জ্ঞানগর্ভ কথা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে কোন লাভ নেই। কাজের কথা হল বাংলায় যত বাড়িতে রামমোহন, বিদ্যাসাগর বা রবীন্দ্রনাথের ছবি আছে তার চেয়ে অনেক বেশি বাড়িতে রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, সারদার ছবি আছে। তার অধিকাংশই আবার রামকৃষ্ণ মিশনের কোন বিপণি থেকে কেনা। এই কথাটা নরেন্দ্র মোদী জানেন। তিনি জানেন রামকৃষ্ণ মিশন এমন এক বিক্রেতা যাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে হিন্দুত্ব কোম্পানির পণ্য বেচলে বাংলায় সবচেয়ে বেশি ক্রেতা পাওয়া যাবে। এমনকি যারা সচরাচর কোম্পানিটাকে ভাল চোখে দেখে না, তারাও এবার এই কোম্পানির মাল কিনে ফেলতে পারে। আর যে মালটা বাজারে একদম চলছে না, বরং বেচতে গিয়ে লোকের গালাগাল শুনতে হচ্ছে, সেই সি এ এ-এন আর সি-এন পি আরও এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বিক্রি করলে বিক্রি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
এখন ব্যথিত প্রাণেরা বলবেন রামকৃষ্ণ মিশন তাদের প্ল্যাটফর্ম মোদীকে ব্যবহার করতে দিল কেন? এ প্রশ্নের কোন অর্থ নেই। ছুরি দিয়ে মানুষ খুন করা যায়। আপনি কি প্রশ্ন করেন অ্যামাজন তাদের প্ল্যাটফর্মে ছুরি বিক্রি করতে দেয় কেন?
আসল কথা গোটা দেশের মত বাংলাও একটা সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এক হাতে কার্ল মার্কস, অন্য হাতে মা কালী; একদিকে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গদগদ হওয়া আর অন্যদিকে বাংলা পরীক্ষায় রচনায় বিবেকানন্দের পুনরুত্থানবাদ (সহজ কথায় “সবই ব্যাদে আছে”) কোট করে বাঙালিদের এতকাল চলেছে। আর চলবে না। আপনাকে পক্ষ নিতে হবে। এতদিন অনেকেরই বিশ্বাস ছিল রামকৃষ্ণ মিশন যে হিন্দুধর্মের কথা বলে তা আর এস এসের হিন্দুত্ব নয়। এই ধারণার মূলে রামকৃষ্ণ স্বয়ং। আজ তাঁর ইচ্ছানুসারে প্রতিষ্ঠিত মিশন বুঝিয়ে দিল তারা দুটোকে বিশেষ আলাদা বলে মনে করে না। এবার আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি রামকৃষ্ণকে নিজের মত করে বুঝে নেবেন, নাকি তাঁর সঙ্ঘের সাধুরা যেভাবে তাঁকে দেখাচ্ছেন সেটাই শিরোধার্য করবেন।
এবার তর্ক উঠবে, রামকৃষ্ণ মিশন আবার কখন হিন্দুত্বকে (সি এ এ-এন আর সি-এন পি আর) মান্যতা দিল? বরংস্বামী সুবীরানন্দ তো বলেছেন “আমরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে”। বলেছেন বটে, কিন্তু ওটা সিগারেটের প্যাকেটে বিধিসম্মত সতর্কীকরণের মত। আমরা যারা রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুল কলেজে পড়াশোনা করেছি তারা বিলক্ষণ জানি কতটা মেধাবী হলে তবে ঐ সংগঠনের উচ্চপদে ওঠা যায়। পশ্চিমবঙ্গের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টির সমসংখ্যক বা তার বেশি পি এইচ ডি, আই আই টি পাশ ইঞ্জিনিয়ার, বিলেত ফেরত ডাক্তার, গবেষক ইত্যাদি পাওয়া যাবে রামকৃষ্ণ মিশনের উচ্চকোটিতে। সেইসব লোকেরা বোঝেননি মোদীর বেলুড় মঠে এসে থাকতে চাওয়া, বিবেকানন্দের জন্মদিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চাওয়ার উদ্দেশ্য কী — এ যিনি বিশ্বাস করবেন তাঁকে একথা বিশ্বাস করানোও শক্ত নয় যে দু হাজার টাকার নোটে মাইক্রোচিপ আছে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে প্রধানমন্ত্রীকে না বলা কি সম্ভব? মিশন কী বলে নিরস্ত করতে পারত মোদীকে? অনেক ভাবলাম এবং ভেবে দেখলাম, উত্তরটা কিন্তু খুব সোজা। মহারাজরা বলতেই পারতেন, আমরা সন্ন্যাসী, আপনি এসে থাকলে গাদা নিরাপত্তাকর্মী আসবেন, সংবাদমাধ্যম হুমড়ি খেয়ে পড়বে। এসবে আশ্রমের শান্তিভঙ্গ হবে, আমাদের সাধন ভজনের অসুবিধা হবে। অবশ্য একথা রামকৃষ্ণ মিশন বলতে পারত কিনা তার চেয়েও বড় কথা প্রশ্রয় পাওয়ার প্রত্যয় না থাকলে নরেন্দ্র মোদী এমন আব্দার করতেন না। তিনি ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে গিয়ে থাকার আব্দার তো করেননি আজ অব্দি? অতএব মেনে নেওয়া যাক যে সুবীরানন্দরা সন্ত লাল সিং নন, যিনি হিন্দু হয়ে হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন এবং অযোধ্যার রামমন্দির আন্দোলনের বিরোধিতা করার অপরাধে প্রাণ হারিয়েছিলেন। আনন্দ পট্টবর্ধনের ‘রাম কে নাম’ তথ্যচিত্রে অবশ্য তিনি অমর হয়ে আছেন।
মোদ্দা কথা হল, রামকৃষ্ণ মিশনের জন্য অশ্রুপাত করা বৃথা। যদি আপনি বিপদটা বুঝে থাকেন, যদি আপনি দেশটাকে বাঁচাতে চান, তাহলে রামের সেতু বন্ধনে কাঠবিড়ালী যেটুকু করেছিল সেটুকুই উদ্যোগ নিয়ে করুন। মিছিলে আসুন, মিটিঙে আসুন। যতটা পারেন।
পুনশ্চ: আমার মত যারা বিদ্যামন্দির, নরেন্দ্রপুর বা মিশনের অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনী, তাদের বলি, আমার কাছে কিন্তু কলেজ মানে মাস্টারমশাইরা আর ছাত্ররা। এসব বিষয়ে যে তাঁদের মতামত নেওয়া হয় না তা আমরা প্রত্যেকেই জানি। ফলে আমার তাঁদের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য নেই। তাছাড়া অ্যামাজন ক্ষতিকারক জিনিসপত্র বিক্রি করায় বলে কি আমি তার কর্মচারীদের দোষী ঠাওরাই? তবে যেহেতু আইনত কলেজ বলতে কর্তৃপক্ষকে মানতেই হয় এবং সেই কর্তৃপক্ষ হলেন মিশনের সন্ন্যাসীরা, সেহেতু কেবল ওখানে পড়তাম, এই আবেগে আর কখনো ঐ চত্বরে পা দেব না। প্রিয় মাস্টারমশাইদের সাথে বাইরে দেখা করব, বন্ধুদের সাথেও তাই। বর্তমান ছাত্রদের সাথে সম্পর্ক হলে তাদের জন্যেও একই ব্যবস্থা।
Then without proper references your allegations are not acceptable to us!
Actually RKM has invited the chair, not the person! As an ex-student you should know that!
Nehru, Indira Gandhi, Rajib Gandhi, Jyoti Basu, Manmohon Singh, Buddhadeb Bhattacharyya, Mamata Banerjee- several political leaders visited Mission in different occasions! That means Mission has shown respect to the chair, not the person! Mission already stated that they are not associated with the statements of Modi! They are an apolitical organization from 1897 and till now they are following this ideology guided by Vivekananda! As an ex-student you should know the basic principles of Mission!
Your experience(??) is not at all matching with us! Mission has taught us to respect every religion and your are saying that they are propagating communal agenda! Sorry, without proper references we can’t believe these! We know Mission and their activities quite well!
Who’s seeking your acceptance? You are free to have your opinion. That won’t change mine
Yes, in the democratic structure everyone can express his/her opinion. I respect this democratic structure. Of course you can express your statement against Mission! Simultaneously it is our democratic right to say that you are propagating baseless propaganda against Mission!
In the last hundred years several persons criticised Mission in different occasions! They have been annihilated through time but Mission is still working for the poor people! This is the historical truth!
Again, till now you have not shown a single proof regarding your demand! Is not it clearly showing that you are propagating false allegations against them?
You were not there when what I said happened. My batchmates were there and have shared my post on social media. I don’t need to show any other proof to anybody. If you are hurt, don’t read what I write. Period
We have also studied in RKM but we have not experienced this type of incident! Rather we have been taught that that every religion is true, so you should respect every religion. These different religions are different paths to achieve the same goal! My roommate was Muslim and we studied together, had food together! No discrimination was there! We have also observed many incidents like this! So it is not possible for us to believe your story! So please show proper references to prove your demand, otherwise it will be proved that you are propagating false propaganda against Mission!
Another thing should be mentioned here! Oppression of minorities in Bangladesh is not a baseless propaganda! This is true like demolition of Babri Masjid and Gujarat riot! Even RKM in Decca also received a threatening letter! I hope you should know this !
Your experience does not mean my experience is untrue. Even I had Muslim classmates. So? And where did I write oppression of minorities does not happen in Bangladesh?