অবিনয় নিবেদন

আপনি কে, আপনার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক না পেশাগত সম্পর্ক, আপনি লোকটা পাতে দেওয়ার যোগ্য না হলেও আপনার স্ত্রী/স্বামী নিপাট ভালমানুষ কিনা ওসব আর আমি দেখব না। “Forwarded as received” এর চালাকি আপনার রক্ষাকবচ হতে পারে কিনা সেটা তারপরে আপনি বুঝবেন আর পুলিস বুঝবে।

এবছর বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, আবার মোদীজি ধুয়ো তুলেছেন সব নির্বাচন একসাথে করা ভাল। এরাজ্যে আবার সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। অতএব যেটা না করলে বিজেপি ভোটে জিততে পারে না সেটা তো করতেই হবে। শুরু হয়ে গেছে তার প্রচেষ্টা — দেশজুড়ে। সঙ্ঘ পরিবারের হিংসাত্মক আদর্শের কথা বাদ দিলেও, কর্মসংস্থানের অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে যেখানে গুজরাটেই গদি টলে গেছিল, সেখানে বাকি ভারতে যে দাঙ্গা ছাড়া জেতা শক্ত সেটা নরেন্দ্র আর অমিত ভালই বোঝেন। সুতরাং পুরনো পদ্ধতি প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে।
কাসগঞ্জে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে ঝামেলা পাকিয়ে, মুসলমানদের দেশদ্রোহী সাজাতে গিয়ে দুটো মানুষের প্রাণ গেল — কুছ পরোয়া নেই। যত দিন যাচ্ছে, ততই প্রকাশ পাচ্ছে কাসগঞ্জের ঘটনাটা যা বলে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছিল, ব্যাপার ঠিক তার উলটো। মূলধারার সংবাদমাধ্যমকেও যে সেগুলো রিপোর্ট করতে হচ্ছে তার অনেকটা কৃতিত্ব দাবী করতেই পারে সোশাল মিডিয়া। বিভিন্ন লোকের তোলা ঐ দিনের ভিডিও সেখানেই ভাইরাল হয়ে গেছে প্রথমে।
কিন্তু সামনে যেখানে এতগুলো নির্বাচন সেখানে সঙ্ঘ পরিবারের আই টি সেল বসে থাকবে কেন? উত্তরসত্যের সুবিধা হল একবার যা বলা হয়ে গেছে, সেটা পরে মিথ্যা প্রমাণিত হলেও বারবার ফরোয়ার্ড করে মিথ্যাটাকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। বুকের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা ঘৃণাই সেটাকে সত্য বলে মেনে নেয়। ফেসবুকে তাই গত কয়েকদিন ধরে কাসগঞ্জ নিয়ে সমানে মিথ্যাচার চলার পাশাপাশি দেখছি হোয়াটস্যাপে ছড়ানো হচ্ছে চরম অসত্য, মুসলমানবিদ্বেষী বেশকিছু বার্তা। তারমধ্যে কিছু একেবারে ভিত্তিহীন, গা ঘিনঘিন করা এবং অতিপরিচিত বোকা বোকা কথা সম্বলিত। যেমন কলকাতার বিশেষ বিশেষ এলাকায় এত অস্ত্র মজুত আছে যে যে কোনদিন ১৯৪৬ এর মত দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং শুরু হয়ে যাবে। আবার কিছু বার্তা সত্যের সঙ্গে মিথ্যে মিশিয়ে এক অদ্ভুত মিশেল। সেখানে বদমাইশিটা এত সূক্ষ্ম যে সাধারণ লোকের পক্ষে ধরতে পারাই শক্ত, বিশ্বাস করে ফেলা সহজ। একটা বার্তায় যেমন দেখলাম শ্রীচৈতন্যকে ইসলামের দালাল প্রমাণ করা হয়েছে।
এসব বার্তা অনেকেই পাচ্ছেন, যত দিন যাবে আরো পাবেন। সেসবের পুনরাবৃত্তি করা আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়। আমার উদ্দেশ্য আমার যেসব বন্ধু, সহকর্মী, পরিচিত এসবে বিশ্বাস করেন এবং ফরোয়ার্ড করেন তাঁদের একাদিক্রমে জানিয়ে দেওয়া যে এরপরে আপনার থেকে ওরকম কিছু পেলে সোজা কলকাতা পুলিসে রিপোর্ট করব। আপনি কে, আপনার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক না পেশাগত সম্পর্ক, আপনি লোকটা পাতে দেওয়ার যোগ্য না হলেও আপনার স্ত্রী/স্বামী নিপাট ভালমানুষ কিনা ওসব আর আমি দেখব না। “Forwarded as received” এর চালাকি আপনার রক্ষাকবচ হতে পারে কিনা সেটা তারপরে আপনি বুঝবেন আর পুলিস বুঝবে।
এভাবে ফেসবুকে পোস্ট করলাম কারণ অনেকবার লক্ষ্য করে দেখেছি ব্যক্তিগতভাবে “আমাকে এসব পাঠাবেন না। পছন্দ করি না, একমত নই। আর পাঠালে সম্পর্ক রাখব না” বলে কোন লাভ হয় না। বোধহয় যাকে বলি সে ভাবে “এতদিনকার সম্পর্ক। ও বলছে ঠিকই, কিন্তু এই সামান্য ব্যাপারে ওরকম করবে না।” কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে সামান্য নয়। আর এইমুহূর্তে এই ঘৃণা ছড়ানোর ফলে এদেশে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। অতএব যা ফরোয়ার্ড করবেন তার ফল ভোগ করতে তৈরি থাকলে তবেই ফরোয়ার্ড করুন।

সঙ্গে রইল কাসগঞ্জ নিয়ে আজকের টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন

Author: Pratik

সাংবাদিক, লেখক। কাজ করেছেন দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ডেকান ক্রনিকল, দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য স্টেটসম্যান এবং অধুনালুপ্ত দ্য বেঙ্গল পোস্টে। বর্তমানে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও কাগজে লেখালিখি করেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছয়।

Leave a Reply

Discover more from amarlikhon

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading