আমি আজ উদ্বাস্তু বটে

নির্ঘাৎ আসামের অনেক হিন্দু বাঙালিও “বিজেপি এলে মুসলমানদের তাড়াবে” এই আনন্দে তাদের ভোট দিয়েছিলেন, এখন দেখছেন ভটচায্যি বামুনের ছেলে তপোধীর, তারও নাগরিকত্ব এরা কেড়ে নিচ্ছে

আসামে বিনাগরিকীকরণ (disenfranchisement) প্রক্রিয়া হৈ হৈ করে শুরু হয়ে গেছে। শুনছি বাতিলের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্যও আছেন। ব্যাপারটা মোটামুটি বাঙালি খেদাও হয়ে দাঁড়াচ্ছে আবার। “মুসলমান হলে বাঙালি নয়”, “বাঙালিরা কিসের ভারতীয়” এসব কথাবার্তা সঙ্ঘচালিত ভারতে প্রায়ই শুনছি। অনেক হিন্দু বাঙালিরও প্রথম বাক্যটা খুব পছন্দের। নির্ঘাৎ আসামের অনেক হিন্দু বাঙালিও “বিজেপি এলে মুসলমানদের তাড়াবে” এই আনন্দে তাদের ভোট দিয়েছিলেন, এখন দেখছেন ভটচায্যি বামুনের ছেলে তপোধীর, তারও নাগরিকত্ব এরা কেড়ে নিচ্ছে। ফেসবুকে অনেকদিন ধরেই দেখতে পাই ‘বাংলায় বিজেপিকেই চাই’ ইত্যাদি নামে অনেকগুলো গ্রুপ বেশ সক্রিয়। আমার বন্ধুবান্ধবদের কেউ কেউও তাদের পোস্ট সহর্ষে শেয়ার করে। আশা করি এরা কেউ আমার মত বাঙাল পরিবারের ছেলে নয়। কারণ আমি আজ সকালেই ভেবে দেখলাম আমার পৈতৃক বাড়িটা যে ১৯৭১ এর অনেক আগে তৈরি সেটা প্রমাণ করা বেশ দুঃসাধ্য হবে। দাদুর আমলের দলিল কোথায় আছে, আদৌ আছে না উইয়ের পেটে গেছে সে খুব শক্ত প্রশ্ন। আবার থাকলেও দিলীপ ঘোষের সরকার সেটাকে প্রমাণ বলে মানবে কিনা তা-ই বা কে জানে?

কাল আবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী জোর গলায় বলেছেন যাদের ১৯৭১ এর আগে আসামে বাস ছিল বলে প্রমাণ হবে না তাদের কোন নাগরিক অধিকার থাকবে না। উদ্বাস্তুর যেটুকু মানবাধিকার সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ স্বীকার করে সেটুকুই থাকবে। এখন কথা হচ্ছে, একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কে অধিকার দিয়েছে কে দেশের নাগরিকই নয় সেটা নির্ধারণ করার? ১৯৭১ এর আগে আসামে থাকত না মানেই ভারতে থাকত না তা তো না-ও হতে পারে। কিন্তু এসব যুক্তির কথা। যুক্তিফুক্তি হিন্দুরাষ্ট্রে চলে না। অতএব যারা যারা বাঙাল এবং বাংলায় বিজেপিকে চাও, সবাই এখন থেকে প্রমাণ যোগাড় করতে লাগ নইলে আমার মত পাপিষ্ঠ বামপন্থীর সাথে একসাথে রিফিউজি হয়ে যেতে হবে কিন্তু। আর সে রিফিউজি মানে অভিষেক বচ্চন নয়, মেঘে ঢাকা তারার বিজন ভট্টাচার্য। মনে থাকে যেন। মনে না পড়লে ইউটিউবে একবার দেখে নাও, বাবারা।
পুনশ্চ: বামফ্রন্ট সরকারের যতরকম সমালোচনা হওয়া সম্ভব এবং হয়, তারমধ্যে মরিচঝাঁপি থাকেই। অন্য বামপন্থীদের সমালোচনাতেও থাকে, বিজেপির মত দক্ষিণপন্থীদের সমালোচনাতেও থাকে। মরিচঝাঁপিতে যারা নিহত, ধর্ষিত, বিতাড়িত হয়েছিল তারা মুসলমান ছিল না, বেশিরভাগই ছিল হিন্দু। নমঃশূদ্র। বিজেপি তাহলে এতদ্বারা স্বীকার করে নিক যে মরিচঝাঁপিতে যা করা হয়েছিল ঠিকই করা হয়েছিল। অনাগরিকের আবার কিসের নাগরিক অধিকার? আর মানবাধিকার? সে তো রোহিঙ্গাদেরও আছে। তা বলে কি তাদের এদেশের মাটিতে মানুষের মত বাঁচতে দিতে হবে নাকি? অবশ্য মুসলমানদের মানবাধিকার ব্যাপারটা বিজেপির কাছে সোনার পাথরবাটি। 

Author: Pratik

সাংবাদিক, লেখক। কাজ করেছেন দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ডেকান ক্রনিকল, দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য স্টেটসম্যান এবং অধুনালুপ্ত দ্য বেঙ্গল পোস্টে। বর্তমানে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও কাগজে লেখালিখি করেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চার।

Leave a Reply

%d bloggers like this: