প্রতিবাদের অধিকার

আপনি সমর্থন করেন না এমন একটা বিষয় নিয়ে আন্দোলন হলেই আপনি বলবেন “আমার টাকায় এসব করা চলবে না। যে পাতে খাচ্ছ, সে পাতেই হাগছ” ইত্যাদি। তাহলে তো মশাই যে পাড়ার লোক সরকারী দলের প্রার্থীকে জেতায় না সে পাড়ায় রাস্তা না বানানোটাই সঠিক রাজনীতি। আপনি মমতার রাজ্যে থেকে বি জে পি, সি পি এম, কংগ্রেস এদের ভোট দেবেন আর দিদির ভাইয়েরা আপনার জন্য ক্যাটরিনার গালের মত রাস্তা বানিয়ে দেবে! আপনিও তো যে পাতে খাচ্ছেন সে পাতেই হাগছেন

JNUSU President Kanhaiya Kumar at JNU

হোক কলরব আন্দোলনের সময় দেখেছি, এখন আবার দেখছি যে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একটা যুক্তি দেওয়া হয় — আয়করদাতাদের টাকায় যেহেতু তারা ভর্তুকিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে অতএব তাদের প্রতিবাদ-টতিবাদ করার অধিকার নেই। এগুলো করা মানে আয়করদাতার টাকা নষ্ট করা। এই যুক্তি যুগপৎ বোকার যুক্তি এবং গা-জোয়ারি যুক্তি।
কেন এটা বোকার যুক্তি সেটা আগে বলি।

ভারতবর্ষে কয়েক কোটি আয়করদাতা। তারা সকলে প্রায় কোন বিষয়েই একমত নয়। হওয়ার দরকারও নেই। তাহলে কি করে ধরে নেওয়া হয় যে সব আয়করদাতাই মনে করে ছাত্রছাত্রীদের কোন বিষয়ে প্রতিবাদ করা উচিৎ নয় বা আদৌ রাজনীতি করা উচিৎ নয়? যিনি এরকম ভাবেন তিনি ভাবুন কিন্তু আমার আয় বা ভাবনার মালিকানা আমি আপনাকে দিইনি। উপরন্তু যারা আন্দোলন করছে তাদের বাবা-মায়েরাও অনেকে আয়করদাতা। দেশগঠনে তাঁদের আয় কিছু কম পরিমাণে ব্যবহার হয় না। যাদবপুরের যেসব মাস্টারমশাই, দিদিমণি ছাত্রদের সমর্থন করেছিলেন এবং জে এন ইউ এর যাঁরা আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরাও শুধু আয়করদাতার টাকায় মাইনে পান তা নয়, নিজেরাও আয়কর দেন। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, যাঁরা এদেশে থাকেন, তাঁরাও আয়করদাতা। স্পষ্টত, যে কোন ছাত্র আন্দোলনই বহু আয়করদাতার স্নেহধন্য।

এবার আপনি বলবেন, তাহলে যেসব আয়করদাতা আন্দোলনকারীরা তাদের টাকা নষ্ট করছে মনে করে তাদের মতামত কি মূল্যহীন? একেবারেই না। এখানেই আসছে গা-জোয়ারির প্রশ্নটা। আপনি সমর্থন করেন না এমন একটা বিষয় নিয়ে আন্দোলন হলেই আপনি বলবেন “আমার টাকায় এসব করা চলবে না। যে পাতে খাচ্ছ, সে পাতেই হাগছ” ইত্যাদি। তাহলে তো মশাই যে পাড়ার লোক সরকারী দলের প্রার্থীকে জেতায় না সে পাড়ায় রাস্তা না বানানোটাই সঠিক রাজনীতি। আপনি মমতার রাজ্যে থেকে বি জে পি, সি পি এম, কংগ্রেস এদের ভোট দেবেন আর দিদির ভাইয়েরা আপনার জন্য ক্যাটরিনার গালের মত রাস্তা বানিয়ে দেবে! আপনিও তো যে পাতে খাচ্ছেন সে পাতেই হাগছেন। আমি বামপন্থী। তা বলে আমি একথা বলতে পারি না যে আমি আয়কর দিই বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু এস এফ আই আর এ আই এস এফ কে রাজনীতি করতে দিতে হবে। ছাত্র পরিষদ, টি এম সি পি, এ বি ভি পি সকলেরই অধিকার আছে। আমি এদের অপছন্দ করি বলেই এরা আন্দোলন করলে বলতে পারি না “আমার টাকায় এসব করা চলবে না। যে পাতে খাচ্ছ, সে পাতেই হাগছ”।

যদি বলি তাহলে আমি গুন্ডা। স্বাধীন দেশের নাগরিক-ফাগরিক কিস্যু নই। যে অন্যের স্বাধীনতা মানে না তার নিজের স্বাধীনতাও বাঁচে না।

পুনশ্চ — বিদেশবাসী প্রাক্তনীদের কথা এখানে বললাম না। কারণ তাঁদের মধ্যে যাঁরা ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে যান তাঁরা অত্যন্ত দেশভক্ত। নিশ্চয় এসব দেশদ্রোহী আন্দোলন কোন যুক্তিতেই সমর্থন করেন না। আর যাঁরা ঐসব অনুষ্ঠানে যান না তাঁরা তো একেবারে দেশদ্রোহী। তাঁরা কি ভাবেন সেই নিয়ে আলোচনা করলে যদি পুলিশে ধরে!

Author: Pratik

সাংবাদিক, লেখক। কাজ করেছেন দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ডেকান ক্রনিকল, দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য স্টেটসম্যান এবং অধুনালুপ্ত দ্য বেঙ্গল পোস্টে। বর্তমানে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও কাগজে লেখালিখি করেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছয়।

Leave a Reply

Discover more from amarlikhon

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading