‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ কথাটা কয়েক বছর আগে পর্যন্তও ভারতীয় অর্থনীতির আলোচনায় খুব ব্যবহার করা হত। কোনো বাঙালি অর্থনীতিবিদ এর বাংলা করেছেন কিনা জানি না। তবে এর মোটামুটি মানে হল, জনসংখ্যার এক বড় অংশ বয়সে নবীন হওয়ার সুবিধা। এখন আমাদের যতই ভাঁড়ে মা ভবানী হোক, নরেন্দ্র মোদী যখন ক্ষমতায় আসেন তখন সকলেই বলতেন ভারতীয়দের একটা বড় অংশ যেহেতু এখন কর্মক্ষম অবস্থায় আছেন সেহেতু এদের কর্মসংস্থান জুগিয়ে দিলেই দেশ ফুলে ফলে ভরে উঠবে। তা সে ডিভিডেন্ড গত ৮-১০ বছরে কতটা পাওয়া গেল তা নিয়ে এখন বিস্তর সন্দেহ দেখা দিয়েছে। নতুন চাকরি হওয়ার বদলে আমাদের দেশে বেকারত্ব ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে একথা ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমমন্ত্রকই বলেছিল। ছোট ব্যবসার অবস্থা কী তা পাড়ার দোকানে কথা বললেই টের পাওয়া যায়। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অবস্থাও কেমন যেন আমাদের অর্থনীতির মতই হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তরুণ প্রতিভার অভাব নেই একথা আমরা সেই মহেন্দ্র সিং ধোনির আমল থেকে শুনে আসছি। যেটুকু সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাতে সেই প্রতিভারা যে নেহাত খারাপ ফল দিয়েছে তা-ও নয়, অথচ ঘুরে ফিরে একই মুখ খেলে চলেছে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এবং একের পর এক বিশ্বকাপে ডোবানোর পর এখন দ্বিপাক্ষিক সিরিজেও ডোবাচ্ছে।
অর্থনীতির ফাঁক ঢাকতে জিডিপির মানদণ্ডই বদলে দেওয়া হয়েছিল প্রয়াত অরুণ জেটলি অর্থমন্ত্রী থাকার সময়ে। অনেক বিরোধী দল এবং অর্থনীতিবিদ সেই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এমন এক চমৎকার বাস্তুতন্ত্র তৈরি করতে সফল হয়েছে টাকার জোরে, যেখানে কোনো সমালোচক নেই। উল্টে যাদের সমালোচক হওয়ার কথা, সেই সংবাদমাধ্যম এবং প্রাক্তন ক্রিকেটাররা বোর্ডকে সাফল্যের মানদণ্ডগুলো বদলে ফেলতে সর্বতোভাবে সাহায্য করেন। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর থেকে আর কোনো আইসিসি টুর্নামেন্ট জেতেনি ভারত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেমিফাইনালও পেরোতে পারেনি (২০১৪ ওয়ার্ল্ড টি টোয়েন্টি, ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, ২০২১ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল ব্যতিক্রম। শেষেরটায় অবশ্য সেমিফাইনাল বলে কিছু ছিল না)। ২০২১ ওয়ার্ল্ড টি টোয়েন্টিতে তো সেমিফাইনালেরও আগে ঘরে ফেরার বিমান ধরতে হয়েছিল। অথচ কাগজে, টিভিতে, খেলা চলাকালীন ধারাভাষ্যে সারাক্ষণ প্রচার করা হয় আমাদের দল বিশ্বসেরা। সেখানেই থেমে না থেকে বলা হয় এই দল ভারতের সর্বকালের সেরা। কেন? না আমরা প্রচুর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জিতি। প্রায় প্রতি বছর কোনো না কোনো আইসিসি টুর্নামেন্ট থাকার কারণে গত এক দশকে দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোর গুরুত্ব যে প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে, সেকথা কেউ লেখেন না বা বলেন না। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালু হওয়ার পরে পাঁচদিনের ক্রিকেটেও দ্বিপাক্ষিক সিরিজের গুরুত্ব তো আসলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠা গেল কিনা, খেতাব জেতা গেল কিনা – তাতে। এসব বলা হয় না।
এ-ও বলা হয় না, যে সাদা বলের ক্রিকেটে ভারত আসলে গত শতাব্দীর ক্রিকেট খেলে চলেছে ২০১১ বিশ্বকাপের পর থেকেই। রোহিত শর্মা আর শিখর ধাওয়ান, পরে রোহিত আর কে এল রাহুল যেভাবে ইনিংস শুরু করতেন সেভাবে একদিনের ক্রিকেট খেলা হত প্রাক-জয়সূর্য-কালুভিথর্না যুগে। ২০১১ বিশ্বকাপে শচীন তেন্ডুলকর আর বীরেন্দ্র সেওয়াগ যেভাবে ভারতের ইনিংস শুরু করতেন সেটা মনে থাকলেও কথাটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তাঁদের অবসরের পরে তো একদিনের ক্রিকেটটা আরও বদলেছে। দু প্রান্ত থেকে দুটো বল দিয়ে খেলা শুরু হয়েছে। ফলে স্পিনারদের প্রভাব কমেছে, রিভার্স সুইং প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ বল পুরনো না হলে ও দুটো হওয়া শক্ত। সঙ্গে আছে পাওয়ার প্লে, অর্থাৎ সারাক্ষণ বোলাররা নানারকম বিধিনিষেধের মধ্যে বল করছেন। ফলে রান করার কাজটা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে। সেই কারণে ইনিংসের শুরুতে আরও বেশি রান করার রাস্তা নিয়েছে ইংল্যান্ডের মত দল, যারা সব ধরনের ক্রিকেটে গত এক-দেড় দশকে আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোতে সবচেয়ে বেশি সফল। অন্যদিকে মন্থরভাবে শুরু করব, উইকেট হাতে রেখে পরে মারব – এই নীতি অবলম্বন করে আমাদের বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মা ঝুড়ি ঝুড়ি শতরান আর দ্বিশতরান করেছেন দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোতে। গড় দেখলে চোখ কপালে উঠে যাবে, কিন্তু আসল জায়গায় চাপের ম্যাচে বারবার ব্যর্থ এবং দলও হেরেছে। রোহিত তবু ২০১৯ বিশ্বকাপে অসাধারণ ধারাবাহিকতা দেখিয়েছিলেন (৯ ম্যাচে ৬৪৮ রান, গড় ৮১; শতরান ৫), বিরাট তো বিশ্বকাপে অন্য মানুষ হয়ে যান। তিনটে বিশ্বকাপ খেলে এখন অবধি মোটে দুটো শতরান। তার কোনোটাই নক আউট ম্যাচে নয়, একটা আবার ২০১১ সালে দুর্বল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। কেরিয়ারে গড় ৫৭.৩২, অথচ বিশ্বকাপে গড় ৪৬.৮১।
রবীশ কুমার মোদীর দোষ দেখতে পায় না এমন মিডিয়ার নাম দিয়েছেন গোদি মিডিয়া, অর্থাৎ মোদীর কোলে চড়ে বসে থাকা মিডিয়া। জানি না ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কোলে চড়ে বসে থাকা মিডিয়ার কী নাম হওয়া উচিত। গোদি মিডিয়ায় কর্মরত অনেক সাংবাদিক যেমন বিবেক দংশনে ভোগেন, ভারতীয় ক্রিকেট কভার করা অনেক সাংবাদিকেরও একই অবস্থা। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে শচীন তেন্ডুলকর চরম ব্যর্থ হওয়ার পরে এবং ভারত প্রথম রাউন্ডে বিদায় নেওয়ার পরে অত বড় ক্রিকেটারেরও চরম সমালোচনা হয়েছিল। এক সর্বভারতীয় ইংরেজি কাগজে শিরোনাম হয়েছিল ENDULKAR। অথচ কোহলি বছর চারেক হয়ে গেল দলের হোমেও লাগেন না, যজ্ঞেও লাগেন না। কারোর সাধ্যি নেই সেকথা লেখে। বরং এতকাল পরে সাদা বলের ক্রিকেটে দুটো অর্থহীন ম্যাচে (১. এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে, ২. বাংলাদেশের সঙ্গে একদিনের সিরিজ হেরে যাওয়ার পর তৃতীয় একদিনের ম্যাচে) শতরান করার পর রাজার প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি লিখতে হয়েছে। আমেদাবাদ টেস্টে ঢ্যাবঢেবে পিচে শতরান করে তাঁর টেস্টের রান খরাও সবে কেটেছে। গত কয়েক বছরে গড় নামতে নামতে ৪৮.৯৩ হয়ে গেছে। অথচ কথায় কথায় তাঁকে সর্বকালের সেরাদের সঙ্গে এক পঙক্তিতে বসিয়ে দেওয়া কিন্তু থামেনি। যাঁদের সঙ্গে তাঁর নামোচ্চারণ করা হচ্ছে তাঁদের সকলের গড় পঞ্চাশের বেশি।
বলতে পারেন, এসব কথা লিখতে চাইলেই লেখা যায়? কেউ কি বারণ করেছে? তা করেনি বটে, তবে লিখে ফেললে সাংবাদিকের চাকরিটি নট হয়ে যেতে পারে। বিশ্বাস না হলে হর্ষ ভোগলেকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। তিনি কারোর সমালোচনাও করেননি। মহেন্দ্র সিং ধোনি অধিনায়ক থাকার সময়ে টুইটারে অমিতাভ বচ্চনের একটি অন্যায় সমালোচনা, যা আবার ধোনি সমর্থন জানিয়ে রিটুইট করেছিলেন, তার প্রতিবাদে ভদ্র ভাষায় জানিয়েছিলেন, সারাক্ষণ ভারতীয় ক্রিকেটারদের প্রশংসা করা একজন ধারাভাষ্যকারের কাজ নয়। সেবার ধারাভাষ্যকারদের সঙ্গে চুক্তি পুনর্নবীকরণের সময় এলে দেখা যায় হর্ষ বাদ পড়েছেন। রবীন্দ্র জাদেজাকে “বিটস অ্যান্ড পিসেজ ক্রিকেটার” বলার অপরাধে একই অবস্থা হয়েছিল সঞ্জয় মঞ্জরেকরের। তা অত নামকরা লোকেদেরই যদি ওই অবস্থা হয় তাহলে খবরের কাগজ, নিউজ এজেন্সি বা ওয়েবসাইটের একজন নগণ্য সাংবাদিকের কী অবস্থা হতে পারে ভেবে দেখুন। হর্ষ আর সঞ্জয় তবু কিছুদিন পরে, কে জানে কোন শর্তে, আবার বোর্ডের তালিকায় ফিরতে পেরেছেন। সাংবাদিকের তো একটি ফোনে চাকরি চলে যাবে এবং তারকাদের চটিয়ে চাকরি গেলে আর কোথাও চাকরি হবে না।
যাঁরা জানেন না তাঁদের জন্য বলে রাখা যাক, ভারতের মাটিতে যত ক্রিকেট ম্যাচ হয় তার টিভি সম্প্রচারের প্রযোজক ভারতীয় বোর্ড। খেলা আপনি স্টার নেটওয়ার্কেই দেখুন আর সোনিতেই দেখুন। ফলে ধারাভাষ্যকাররা অধিকাংশই বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ, সম্প্রচারকারীর সঙ্গে নয়। যাঁরা সম্প্রচারকারীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ তাঁরাও জানেন বোর্ডের অপছন্দের কথা বললে সম্প্রচারকারীও বিদায় করে দেবে, বোর্ডের সঙ্গে বিবাদ করে ব্যবসা গুবলেট করার ঝুঁকি নেবে না। এখানকার সম্প্রচার স্বত্ব পরম প্রার্থিত বস্তু। এই ব্যবস্থা ক্রিকেটবিশ্বের আর কোনো দেশে চালু নেই। সব দেশেই ক্রিকেট বোর্ড আলাদা, সম্প্রচারকারী এবং তার ধারাভাষ্যকাররা স্বাধীন। ফলে ইংল্যান্ডের খেলায় আপনি নাসের হুসেনকে জো রুট বা বেন স্টোকসের সমালোচনা করতে শুনবেন, কিন্তু ভারতীয় ব্যাটিং গোটা সিরিজে জঘন্যভাবে ব্যর্থ হওয়ার পরেও বুধবার (২২ মার্চ ২০২৩) অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তৃতীয় একদিনের ম্যাচে দীনেশ কার্তিক বলেছেন এই সিরিজে ব্যাটারদের পারফরম্যান্স “প্রিটি অ্যাভারেজ”। প্রথম ম্যাচে ভারতের প্রথম চার উইকেট পড়ে গিয়েছিল ৩৯ রানে, মাত্র ১০.২ ওভারে। পঞ্চম উইকেট পড়ে যায় ৮৩ রানে, তখন মাত্র ১৯.২ ওভার খেলা হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচে তো গোটা দল আউট হয়ে যায় ১১৭ রানে, ২৬ ওভারের মধ্যে। শেষ ম্যাচে যথেষ্ট ভাল শুরু করার পরেও শেষ সাত উইকেট পড়ে গেছে ১০২ রানে। এই ব্যাটিং যদি “প্রিটি অ্যাভারেজ” হয় তাহলে অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, ওয়েবস্টার – সমস্ত প্রামাণ্য ইংরেজি অভিধানের সম্পাদকমণ্ডলীকে সত্বর জানানো দরকার যে ‘অ্যাভারেজ’ শব্দটার মানে বদলে গেছে। অবশ্য কার্তিক তো শিশু, প্রবাদপ্রতিম সুনীল গাভস্করকেও সারাক্ষণ অত্যুক্তি করে যেতে হয়। একবার আইপিএল চলাকালীন মুখ ফুটে বলেছিলেন, লকডাউনের সময়ে কোহলি যথেষ্ট অনুশীলন করতে পাননি। হালকা মেজাজে যোগ করেছিলেন, একটা ভিডিওতে দেখলাম অনুষ্কার সঙ্গে খেলছিল। ওই অনুশীলনে কোনো লাভ হবে না। অমনি এক রাগত ইন্সটাগ্রাম পোস্ট করে ট্রোলবাহিনী লেলিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীমতি কোহলি।
এসব কথা বলছি কারণ ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের মাত্র মাস ছয়েক আগে অস্ট্রেলিয়ার কাছে সিরিজ হারের যথার্থ মূল্যায়ন করতে গেলে ভারতীয় ক্রিকেটের এই গোটা বাস্তুতন্ত্রকে বোঝা দরকার। টাকা এবং ট্রোলবাহিনীর জোরে ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রিকেটাররা সমস্ত সমালোচকের মুখ বন্ধ করে দিতে পারেন, একগাদা হোম সিরিজের আয়োজন করতে পারেন যাতে আমাদের ক্রিকেটারদের রেকর্ডগুলো ফুলে ফেঁপে ওঠে। কিন্তু রোহিত, কোহলি, রাহুল, রবীন্দ্র জাদেজাদের বয়স তো কমাতে পারেন না। প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁদের রিফ্লেক্স কমছে, লম্বা ইনিংস খেলার শারীরিক ক্ষমতা এবং মানসিক দক্ষতাও কমছে। ফলে আগে অন্তত দ্বিপাক্ষিক সিরিজে যে কৌশলে খেলে দলকে জয় এনে দিতে পারছিলেন, তা আর পেরে উঠছেন না। বুধবার যেমন ‘চেজমাস্টার’ বিরাট তাঁর চিরাচরিত রান তাড়া করার কায়দায় শুরু করেও শেষপর্যন্ত টানতে পারলেন না। রাহুল যে দ্রুত রান করতে পারেন না তা আর কতবার প্রমাণিত হলে কোচ রাহুল দ্রাবিড়, অধিনায়ক রোহিত এবং নির্বাচকরা তাঁকে অপরিহার্য ভাবা বন্ধ করবেন তাঁরাই জানেন। রাহুল এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ৭৫ রান করে দলকে জিতিয়ে দেওয়ায় আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে শোনা গিয়েছিল তিনি নাকি সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। কিন্তু ঘটনা হল সে ম্যাচে জিততে হলে মাত্র ১৮৯ রান করতে হত, কোনো তাড়া ছিল না। ফলে রাহুল আপন মনে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন। বুধবারের খেলায় লক্ষ্য ছিল ২৭০, তবুও তিনি বিরাটের মত ১-২ রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখার তাগিদ দেখাননি। বত্রিশ রান করতে নিয়ে নিলেন ৫০ বল। এইভাবে নিজেই নিজের উপর চাপ বাড়াতে বাড়াতে একসময় হঠাৎ ‘পিটিয়ে ঠান্ডা করে দেব’ ভঙ্গিতে ব্যাট করতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন। এহেন রাহুলকে আবার টিম ম্যানেজমেন্ট ঋষভ পন্থের অনুপস্থিতিতে বিশ্বকাপের পাকাপাকি উইকেটরক্ষক হিসাবেও ভাবছে। এখন উপায়?
এখানেই এসে পড়ে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড জলে যাওয়ার প্রশ্ন। হাতের কাছেই আছেন ঈশান কিষণ। যিনি এই সিরিজে অধিনায়ক রোহিত খেলেননি বলে মোটে একটা ম্যাচে খেলার সুযোগ পেলেন। তিনি এখন অবধি ১৪ একদিনের ম্যাচে ৪২.৫০ গড়ে রান করেছেন, একমাত্র শতরানটা আবার ২১০। অথচ তাঁকে মিডল অর্ডারে ভাবা যাচ্ছে না। ঈশানের বয়স তবু ২৪, তাঁর থেকে ডিভিডেন্ড পাওয়ার এখনো সময় আছে। এই সিরিজে দলের বাইরে ছিলেন আরেকজন উইকেটরক্ষক ব্যাটার, যিনি এখন অবধি ১১ একদিনের ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ৬৬ গড়ে রান করেছেন, স্ট্রাইক রেটও একশোর বেশি। অথচ কিছুতেই তাঁকে টানা সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। সেই সঞ্জু স্যামসনের বয়সে দেখতে দেখতে ২৯ হতে চলল। হয়ত এই বিশ্বকাপের দলেও তাঁকে রাখা হবে না। কারণ সাত বছর এবং একটা বিশ্বকাপ খেলে ফেলার পরেও যে ৩১ বছর বয়সীর ব্যাটিং অর্ডারই পাকা করা যাচ্ছে না, সেই রাহুল দলকে নতুন কিছু দিতে পারেন বলে বিশ্বাস করে টিম ম্যানেজমেন্ট।
পঁয়ত্রিশ হতে চলা বিরাট কোনোদিনই স্পিনের বিরুদ্ধে দারুণ ব্যাটার ছিলেন না। বছর তিনেক হল মাঝের ওভারগুলোতে কিছুতেই স্পিনারদের মেরে উঠতে পারেন না, মারতে গেলেই আউট হয়ে যান। ঠিক যেমন বুধবার হলেন। অথচ উপমহাদেশে বিশ্বকাপ, মাঝের ওভারগুলোতে স্পিনাররাই বেশি বল করবেন। বিশ্বকাপের আগেই ছত্রিশে পা দেবেন অধিনায়ক রোহিত। এই দলে একমাত্র তিনিই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে স্পিনারদের মারতে পারেন। কিন্তু তাঁর ধারাবাহিকতাও ক্রমশ কমছে। ইদানীং বল ঘুরলে বেশ অসুবিধায় পড়ছেন, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে প্রকট হয়েছে সমস্যাটা। এদিকে বল সুইং করলে তাঁকে চিরকালই কিঞ্চিৎ দিশাহারা দেখায়। সেই কারণেই টেস্ট ক্রিকেটে বিরাটের অর্ধেক সাফল্যও পাননি। এঁরা আমাদের ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ।
অবশ্য শুধু ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে দুশ্চিন্তার প্রতি অবিচার করা হবে। মনে রাখা ভাল, আমরা ডিসেম্বরে বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হেরেছি আর মার্চে অস্ট্রেলিয়ার কাছে সিরিজ হারলাম স্রেফ ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে নয়। মাঝে যে সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে ৩-০ হারিয়েছি সেখানেও প্রথম ম্যাচে তারা ৩৭৩ রানের জবাবে ৩০৬ তুলে ফেলেছিল। অধিনায়ক দাসুন শানাকা ৮৮ বলে ১০৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সুইং সহায়ক পরিবেশে ভারতের ব্যাটিং শুয়ে পড়লেও অস্ট্রেলিয়ার ১২১ রান তুলতে লেগেছে মাত্র ১১ ওভার, একটাও উইকেট খোয়াতে হয়নি। সবচেয়ে সিনিয়র বোলার মহম্মদ শামির মধ্যেও ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট। আমাদের বিরাট ভরসা যশপ্রীত বুমরা বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন কিনা এখনো অনিশ্চিত, সাদা বলের ক্রিকেটে দীর্ঘদিন নির্ভরতা দেওয়া ভুবনেশ্বর কুমারও সাম্প্রতিক টি টোয়েন্টি ব্যর্থতার পর দলের বাইরে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের নির্বাচিত দলের দিকে তাকালে কতকগুলো আশ্চর্য ব্যাপার লক্ষ করা যাবে।
এই দলে ছিলেন না ২৪ বছরের অর্শদীপ সিং, যিনি টি টোয়েন্টিতে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট পরিণতির পরিচয় দিয়েছেন এবং মাত্র তিনটে একদিনের ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। অথচ ছিলেন ৩১ বছরের জয়দেব উনড়কত, যিনি দেশের জার্সিতে শেষ একদিনের ম্যাচ খেলেছেন ২০১৩ সালে। আমাদের সবেধন নীলমণি জোরে বোলার অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া সম্পূর্ণ ফিট এবং ব্যাটে, বলে চমৎকার খেললেন। তা সত্ত্বেও দলে ছিলেন মোটামুটি একই কাজের লোক শার্দূল ঠাকুর। তাঁর বয়স ৩১। প্রথম ম্যাচে দুজনেই একসঙ্গে খেলেও ফেললেন। শার্দূলকে মাত্র দু ওভার বল করতে দেওয়া হল আর ব্যাট করার কথা ছিল আট নম্বরে। তার দরকার পড়েনি। দ্বিতীয় ম্যাচে শার্দূলের জায়গায় এসে পড়লেন অক্ষর প্যাটেল, ভারত একসঙ্গে তিনজন বাঁহাতি স্পিনারকে খেলাল। এদিকে দেখা গেল পিচ জোরে বোলারদের উপযোগী। মিচেল স্টার্ক একাই পাঁচ উইকেট নিলেন, বাকিগুলো শন অ্যাবট আর নাথান এলিস। এসব দৃশ্য বেঞ্চে বসে দেখলেন ২৩ বছরের উমরান মালিক। তিনি আজকের ক্রিকেটে বিরল সেই প্রজাতির বোলার, যাঁর গড় গতি ঘন্টায় ১৪৫ কিলোমিটার বা ৯০ মাইলের বেশি। বিশাখাপত্তনমে তিন ওভারে ২৫ রান দেওয়া অক্ষরই চেন্নাইয়ের সিরিজ নির্ধারক ম্যাচেও খেললেন। দুটো উইকেট নিলেও আট ওভারে ৫৭ রান দিলেন আর বিশেষজ্ঞ ব্যাটার সূর্যকুমার যাদব তো বটেই, হার্দিকেরও আগে ব্যাট করতে এসে চার বলে দু রান করে রান আউট হয়ে গেলেন। তিন স্পিনারই খেলাতে হলে হাতে কিন্তু অফস্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরও ছিলেন। তাঁর আর অক্ষরের মধ্যে কে বেশি ভাল ব্যাট করেন তা তর্কসাপেক্ষ। লেগস্পিনার যজুবেন্দ্র চহলও ছিলেন, যিনি কিছুদিন আগেও ছিলেন টিম ম্যানেজমেন্টের নয়নমণি। হঠাৎ ২০২১ ওয়ার্ল্ড টি টোয়েন্টি থেকে অকর্মণ্য প্রমাণিত হয়েছেন। সেবার দলেই ছিলেন না, পরের বছর অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে গিয়েও খেলানো হল না।
বুধবার চেন্নাইতে দেখা গেল ভারতের তিন স্পিনারের মধ্যে কুলদীপ যাদব ছাড়া বাকিরা অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের উপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারলেন না। অক্ষর মার খেলেন, জাদেজা উইকেট নিতে পারলেন না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জাম্পা আর অ্যাশটন অ্যাগারই আসলে ম্যাচটা জিতে নিলেন। তাঁদের দুজনের কুড়ি ওভারে মাত্র ৮৬ রান উঠল, চলে গেল ছটা উইকেট। ভারতের মাটিতে এমন ভেলকি দেখাতে স্বয়ং শেন ওয়ার্নও পারেননি। মানে এই সিরিজ হার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, ভারতীয় ব্যাটাররা বল সুইং করলেও হাবুডুবু খান, স্পিন করলেও হাবুডুবু খান। মানতেই হবে দ্বিতীয়টা নতুন লাগছে। বিশেষত ভারতের এই দলকে যেহেতু সেই রবি শাস্ত্রী-কোহলির আমল থেকে সর্বকালের সেরা দল বলে দাবি করা হচ্ছে। শাস্ত্রী টিম ডিরেক্টর থাকার সময়ে স্বয়ং এই দাবি করেছিলেন, তারপর যথারীতি ভারতের সংবাদমাধ্যম বারবার লিখে এবং বলে ব্যাপারটা সকলকে বিশ্বাস করাতে উদ্যোগী হয়েছে। অথচ দেশের মাঠে ভারতকে হারানো চিরকালই শক্ত। স্টিভ ওয়র বিশ্বরেকর্ডধারী দলও পারেনি। কোহলি, রোহিতরা ইংল্যান্ড বা নিউজিল্যান্ডে সিরিজ জেতেননি, যার একাধিক নজির ভারতীয় ক্রিকেটে আছে। এমনকি তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বল দক্ষিণ আফ্রিকা দলের কাছেও হেরে এসেছে। বস্তুত দুবার অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জেতা ছাড়া বর্তমান প্রজন্ম এমন কিছুই করেনি যা ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। তাও টেস্ট ক্রিকেটে। সাদা বলের ক্রিকেটে বলার মত একটা সাফল্যও গত দশ বছরে আসেনি। বরং ভিতরে ভিতরে যেসব বিপ্লব ঘটে গিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছিল, সেগুলোর টিকি পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
আমাদের নাকি অফুরন্ত জোরে বোলারের জোগান তৈরি হয়েছে। কোথায় তাঁরা? এক বুমরার অনুপস্থিতিতেই এত ছন্নছাড়া দেখাচ্ছে কেন বোলিংকে? টেস্টে এখনো কেন খেলিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৩৬ বছর বয়সী অত্যন্ত মাঝারি মানের বোলার উমেশ যাদবকে? যা অবস্থা তাতে আইপিএলে ভাল বল করলে হয়ত ভুবনেশ্বরকেও বিশ্বকাপের জন্য ফিরিয়ে আনতে হবে। তাঁরও তো বয়স ৩৩। মাঝে মাঝে উদয় হন খলীল আহমেদ, নভদীপ সাইনি, দীপক চহর, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর মত তরুণ বোলাররা। প্রাক্তন ক্রিকেটাররা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষণ দেখেন তাঁদের মধ্যে এবং আমাদের দেখান। তারপর সেই বোলাররা বাদ পড়েন বা চোট পান, আর ফেরেন না। কোন কৃষ্ণগহ্বরে তলিয়ে যান?
এত চোটই বা হয় কেন? শুধু তো বোলার নয়, ব্যাটাররাও দেখা যাচ্ছে বসে বসেই চোট পেয়ে যান। যে শ্রেয়স আয়ার একদিনের ক্রিকেটে মিডল অর্ডারকে ভরসা দেবেন ভাবা হচ্ছিল, হঠাৎ আমেদাবাদ টেস্টে তিনি চোটের কারণে ব্যাট করতে নামলেন না। এখন জানা যাচ্ছে সে নাকি এমন চোট যে আইপিএল খেলাও অনিশ্চিত। এর আগে এমন অদ্ভুত চোট রাহুল পেয়েছেন, রোহিত পেয়েছেন। এর কারণ কি অতিরিক্ত ক্রিকেট? যদি তাই হয় তাহলে সুরাহা কী? বুধবারের হারের পর অধিনায়ক রোহিত সাঁইবাবাসুলভ দার্শনিকতায় বলে দিয়েছেন, খেলোয়াড়দের চোট সমস্যা তৈরি করছে ঠিকই, কিন্তু আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজগুলোই সব ক্রিকেটারের মালিক। তারাই ঠিক করবে কে কতগুলো ম্যাচ খেলবে না খেলবে।
আরও পড়ুন ভারতীয় ক্রিকেট: জাহান্নামের আগুনে পুষ্পের হাসি
তাহলে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটের তরুণ প্রতিভারা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড থেকে ক্রমশ ডেমোগ্রাফিক লায়াবিলিটিতে পরিণত হচ্ছেন। যে সূর্যকুমার যাদব গত দুবছর টি টোয়েন্টিতে চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং করে একদিনের দলে জায়গা করে নিয়েছেন এবং যাঁকে দুটো ম্যাচে প্রথম বলে আউট হয়েছেন বলেই তৃতীয় ম্যাচে সাত নম্বরে ঠেলে দেওয়া হল, তিনিও কিন্তু দীর্ঘদিন ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করে যাওয়া সত্ত্বেও প্রথম সুযোগ পেয়েছেন ৩১ বছর বয়সে। কারণ তারকাদের বাদ দেওয়া বা ব্যাটিং অর্ডার বদলানো প্রায় অসম্ভব। অথচ অস্ট্রেলিয়াকে দেখুন। মিচেল মার্শ ওপেন করতে এসে ধুন্ধুমার ব্যাটিং করছেন, তাই ডেভিড ওয়ার্নারের মত সিনিয়রকেও মিডল অর্ডারে খেলতে হল। বুমরা আর আয়ার ছিলেন না বলে অস্ট্রেলিয়ার এই জয়কে তুচ্ছ করাও বোকামি হবে। কারণ বুমরা অনেকদিন ধরেই নেই, আমরা তাঁর বিকল্প তৈরি করতে পারিনি। আর আয়ারের অনুপস্থিতিই যদি ঢাকতে না পারেন তাহলে আর রোহিত, বিরাটরা, রাহুলরা কিসের বড় ব্যাটার? বরং অস্ট্রেলিয়ার দলে ছিলেন না তাদের অন্যতম সেরা দুই পেসার – অধিনায়ক প্যাট কামিন্স (মায়ের মৃত্যুর ফলে) আর জশ হেজলউড (চোটের কারণে)। মিচেল স্টার্কের সঙ্গে মিডিয়াম পেসার মার্কাস স্তোইনিস আর অজিদের দ্বিতীয় সারির শন অ্যাবটকে সামলাতেই হিমসিম খেল তথাকথিত বিশ্বসেরা ভারতীয় ব্যাটিং। তাও তো অপরিণত ব্যাটিং করে প্রথম ম্যাচটা ভারতকে প্রায় উপহার দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা, নইলে কী হত কে জানে?
আজকাল কোনো বিষয়েই দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করার চল নেই। কিন্তু বিশ্বকাপের বছর বলেই হয়ত এসব নিয়ে অনেক ক্রিকেটভক্ত একটু চিন্তিত। তবে দেশের ক্রিকেটকর্তারা মোটেই চিন্তিত নন। একটা দেশের ক্রিকেট চালাতে গেলে ন্যূনতম যে কাঠামোগুলো দরকার হয় সেগুলোকে ঠিক রাখার প্রয়োজনও তাঁরা বোধ করেন না। নইলে নির্বাচন কমিটি নিয়ে এই ধাষ্টামো চলত নাকি?
২০২২ ওয়ার্ল্ড টি টোয়েন্টির ব্যর্থতার জন্য চেতন শর্মার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিটিকে গত নভেম্বরে বরখাস্ত করা হল ঘটা করে। তারপর দুমাস কারা নির্বাচক ছিলেন কেউ জানে না। জানুয়ারি মাসে নতুন নির্বাচন কমিটি হল, যার নেতৃত্বে সেই চেতনই। একমাস পরেই আরেক নাটক। এক টিভি চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে চেতনকে বিরাটের নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়া নিয়ে কিছু ভিতরের খবর ফাঁস করতে দেখা গেল। অতঃপর ঘোষণা করা হল তিনি নাকি বোর্ড সভাপতি জয় শাহের কাছে স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তা না হয় দিলেন, কিন্তু তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন কে? কেউ না। বহুকাল হল নির্বাচন কমিটির প্রধান সশরীরে দল ঘোষণা করেন না, কাকে নেওয়া হল, কাকে নেওয়া হল না তা নিয়ে কোনো প্রশ্নোত্তরের সুযোগ থাকে না। এরপর হয়ত নির্বাচন কমিটিই থাকবে না। দরকারই বা কী? ক্রিকেটারদের মালিক যখন ফ্র্যাঞ্চাইজগুলো, জাতীয় দল নির্বাচনটাও তারাই করে দিতে পারে তো। দেশের ব্যাঙ্ক, বিমা, বন্দর, বিমানবন্দর – সবই যখন গুটি কয়েক লোকের মালিকানায় চলে যাচ্ছে, ক্রিকেট দলটাও তাই যাক না। এমনিতেও যে দল দেশ চালায় সেই দলই তো ক্রিকেট বোর্ড চালাচ্ছে। ক্রিকেটাররা জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সেই দলের নির্বাচনী পোস্টারে মুখও দেখাচ্ছেন। তাহলে এক যাত্রায় আর পৃথক ফল হবে কেন? বিশ্বকাপ ভুলে যান। আগামী শুক্রবার থেকে আইপিএল দেখুন মনের সুখে।