উদ্বাস্তু

যে হালার পো অসমে বাঙালিরা খ্যাদানি খাওয়ায় দুইহাত তুইল্যা নাচতাছে, হেয়া য্যান নিজের এদেশীয় হওয়ার প্রমাণটা খুঁইজ্যা রাখে। নইলে বাংলায় এন আর সি হইলে হালার অবস্থা ডনের অমিতাভ বচ্চনের মত হইব গিয়া

আমার ঠাকুর্দা শচীন্দ্র কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় দ্যাশ ভাগ হইবার আগে থিকাই, জীবিকার প্রয়োজনে, উদ্বাস্তু। রেল কোম্পানিতে কাজ। টিটির চাকরি, মানে আমরা ডেলি প্যাসেঞ্জাররা যাদের “মামা” কই। ঢাকা বিক্রমপুরে তেনার পৈতৃক বাড়ি আছিল। কিন্তু মানুষ হইছেন আবার মামাবাড়িতে। আমার বাবা প্রশান্ত সে দুই বাড়ির কোনটাই দ্যাখেন নাই। কেন না তেনার জন্ম দ্যাশ ভাগের পরের বছর। তিনি সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। তবে আমার জ্যাঠা, পিসিরাও কেউ তেনাদের পৈতৃক বাড়ি দ্যাখেন নাই।
আমার বাবারে নিয়া ঠাকুর্দা শচীন্দ্র আর ঠাকুমা সুবর্ণলতার নয়টি সন্তান হয়। একটি মেয়ে অবশ্য ছোটবেলাতেই মইর‍্যা গেছিল। বাকি আটজনের কেউ তেনাদের পৈতৃক বাড়ি দ্যাখেন নাই। তাঁরা সকলে এক জায়গায় জন্মানও নাই। রেল কোম্পানির ঠ্যালায় আমার ঠাকুর্দা যহন যেহানে আছিলেন এনারা সেইহানেই হইছেন। জন্ম থিকাই উদ্বাস্তু আর কি।
কিন্তু রিটায়ারমেন্টের পর তো আর রেল কোয়ার্টারে থাকতে দিব না। নিজের বাড়ি লাগব। কোথায় যাওন যায়? ঠাকুর্দা, ঠাকুমা জানতেন দ্যাশ থিকা আত্মীয়স্বজনেরা আইস্যা হুগলী জিলায় রেললাইনের বাঁদিকে এক জায়গায় বসত করছে। এখনো সেহানে সন্ধ্যাবেলা শিয়াল ডাকে। স্টেশন থিকাও বহুদূর। কিন্তু বিদেশ বিভুঁইয়ে আত্মীয়স্বজনের আশেপাশে থাকাই ভাল। নইলে বিপদে আপদে দেখব কেডা?
তাই রিটায়ার কইর‍্যা যৎসামান্য যা টাকাপয়সা পাইছিলেন ঠাকুর্দা, তাই দিয়া নবগ্রামে আমাগো বাড়ি হইল।
সে বাড়ির জমি ঠাকুর্দায় কার থিকা কিনছিল, সে এদেশীয় নাকি হেয়াও পূর্ববঙ্গ থিকা আইছিল, সেসব জানে এমন কেউ বোধহয় বাইচ্যা নাই।
যে হালার পো অসমে বাঙালিরা খ্যাদানি খাওয়ায় দুইহাত তুইল্যা নাচতাছে, হেয়া য্যান নিজের এদেশীয় হওয়ার প্রমাণটা খুঁইজ্যা রাখে। নইলে বাংলায় এন আর সি হইলে হালার অবস্থা ডনের অমিতাভ বচ্চনের মত হইব গিয়া। ডিটেনশন ক্যাম্পের বাইরে পুলিশে কিলাইব, ভিতরে আমরা।

বিঃ দ্রঃ এই পোস্টের ভাষা নিয়া যার আপত্তি আছে তারে আমি কাঁচকলা দ্যাখাই। বাঙাল আছিলাম, বাঙাল আছি, শ্যাষ নিঃশ্বাস ফেলা অব্দি বাঙালই থাকুম। মাইর‍্যাই ফেলাও আর কাইট্যাই ফেলাও।

Author: Pratik

সাংবাদিক, লেখক। কাজ করেছেন দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ডেকান ক্রনিকল, দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য স্টেটসম্যান এবং অধুনালুপ্ত দ্য বেঙ্গল পোস্টে। বর্তমানে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও কাগজে লেখালিখি করেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিন।

Leave a Reply

%d bloggers like this: