আনিতে গৌরী

আকাশটার দিকে তাকিয়ে দেখেছেন? রঙ বদলে গেছে। যেখানে একটুআধটু ফাঁকা জমিতে সুযোগ আছে সেখানেই কাশফুল ফুটেছে। আমাদের বাংলায় এই সময়টা আগমনী গাওয়ার। “যাও যাও গিরী, আনিতে গৌরী/উমা বড় দুখে রয়েছে।” আজ সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরুতে এক গৌরীর বিসর্জন সম্পন্ন হল। এখন আমরা ক্রুদ্ধ, আতঙ্কিত — আরো অনেককিছু হতে পারি কিন্তু বিস্মিত হওয়ার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।
এটাই হওয়ার ছিল। গৌরী লঙ্কেশের বদলে অন্য কেউও খুন হতে পারতেন। এমন যে কেউ যিনি হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছেন ঘাড় শক্ত করে। শুধু হিন্দুত্বও নয়, ক্ষমতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছেন যাঁরা। কয়েকদিন আগেই নাকি একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মমতার ছবিতে হিটলারি গোঁফ লাগানোর জন্যে। রাষ্ট্রশক্তির ক্ষমতার যখন সীমা থাকে তখন সে আইনকে ব্যবহার করে বিরোধী স্বরকে নীরব করে দিতে, আর যখন ক্ষমতা সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন আর ওসবের দরকার হয় না, সরাসরি গুন্ডা নামিয়ে নিকেশ করে দেওয়া যায়। ভারতীয় রাজনীতিবিদদের অনেকের মধ্যেই একনায়কসুলভ প্রবৃত্তির প্রকাশ প্রকট হলেও এই মুহূর্তে যেহেতু লাগামছাড়া ক্ষমতা হিন্দুত্ববাদীদের হাতে, তাই তারা নির্ভয়ে এরকম খুনোখুনি করবেই। এমনিতেই যারা ধর্মান্ধ তাদের সঙ্গে যুক্তি খাটে না, গণতান্ত্রিক অধিকারও তাদের দেওয়া উচিৎ না। হিন্দুত্ব যে বস্তুত আইসিস বা আল কায়দা বা বাংলাদেশের জমিয়তের মত একটি ভয়ঙ্কর কাল্ট সেটা এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কবে বুঝবেন জানি না। যতদিনে বুঝবেন ততদিনে না দেরী হয়ে যায়। সাংবাদিকরা, প্রতিবাদীরা বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন কারণে খুন হয়ে চলেন কিন্তু এদেশে খুনগুলোর মধ্যে ব্যবধান বড্ড কমে এসেছে এবং কারা খুন হচ্ছেন সে ব্যাপারেও বেশ ধারাবাহিকতা দেখা দিয়েছে। এর কোন শান্তিপূর্ণ সমাধান তো দেখছি না। এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত যোদ্ধা যারা তাদেরই এক দলের আবার সরকার কর্নাটকে। তাদের যুদ্ধ করার যা ছিরি, তাতে আমি ফ্যাসিবাদী হলে উচ্ছ্বসিত হতাম।
প্রকাশ কারাত, পিনারাই বিজয়ন! আপনারা কংগ্রেসের অযোগ্যতায় খুশি তো?
Gauri-Lankesh