লক্ষ লক্ষ অন্য শুক্রাণুর সঙ্গে লড়াই করে আপনাকে মায়ের জরায়ুতে ঢুকতে হয়েছিল। তারপর আট-ন মাসের নিশ্চিন্ত বিশ্রাম, মায়ের শরীর থেকে পুষ্ট হওয়া, অবশেষে ভূমিষ্ঠ হওয়া। তারপর অন্তত এক-দেড় দশক জীবনযুদ্ধ কী আপনি টের পাননি কারণ আপনার হয়ে যুদ্ধটা করেছেন আপনার বাবা-মা, নিকটাত্মীয় — যদি আপনি পুরুষ হন। যদি আপনি ভারতে জন্মানো মহিলা হন, তাহলে কিন্তু আপনার লড়াইটা মায়ের জরায়ুতে ঢুকে পড়েই শেষ হয়নি। আপনি যে ভূমিষ্ঠ হবেনই তার কোন নিশ্চয়তা ছিল না। দেশের আইন আছে, তার ফাঁকও আছে। সেই ফাঁক দিয়ে কোন অসাধু ডাক্তারের সাহায্যে আপনাকে যে কোনদিন হত্যা করা হতেই পারত। এরকম রোজ, প্রতি সেকেন্ডে ভারতে ঘটছে। এখনো ঘটছে।
অর্থাৎ কাল লর্ডসে আপনি যে এগারোজনকে আকাশনীল জার্সি গায়ে লড়তে দেখলেন, তারা আসলে এগারোটি কন্যাভ্রূণ যাদের হত্যা করা হয়নি। এগারোটি শিশুকন্যা যাদের জন্মানোর পরেই মুখে ধান পুরে দিয়ে বা গরম দুধে চুবিয়ে মেরে ফেলা হয়নি। এগারোটি শিশু যারা, কি ভাগ্যিস, তিনবছর বয়সেই কোন তথাকথিত বাবার লালসার শিকার হয়ে প্রাণ হারায়নি। এগারোটা মেয়ে যারা ঋতুমতী হওয়ার আগে থেকেই ট্রেনে বাসে বাপের বয়সী লোকের কনুইয়ের গুঁতো খেয়েছে। এগারোটা মেয়ে যাদের খেলোয়াড় হয়ে ওঠা দেখে কেউ না কেউ বাপ-মাকে বলেছে “কেমন ব্যাটাছেলেদের মত চেহারা হয়েছে। এর আর বিয়ে দিতে পারবে?” এগারোটা মেয়ে যাদের নিয়ে গত পরশু অব্দি আমাদের কারো তেমন আগ্রহ ছিল না কিন্তু কাল জিতে গেলে “আমাদের মেয়েরা” বলে দাবী করতাম এবং এখন উড়িয়ে দিতে গিয়ে বলছি “কেন নিন্দে করব না? এটা একটা টিম? এখানেও মেয়ে বলে রিজার্ভেশন নাকি?”
নিশ্চিত জানবেন, মিতালী, ঝুলনরা জিতলে আমাদের অবদান তাতে ঘন্টা আর হারলেও আমাদের কোন অধিকার নেই নিন্দা করার। কারণ আমরা এরপরেও বাড়ির মেয়েটা ক্রিকেট খেলতে চাইলে বলব “ছেলেদের সঙ্গে মেয়েরা খেলে না।”