বিশ্বকাপ ফিফার সোনার ডিম পাড়া হাঁস। ২০২৬ সালে তাকে খাইয়ে দাইয়ে মোটা করা হবে আরও বেশি ডিমের আশায় – দলের সংখ্যা বাড়বে। চার বছর অন্তর হয় বলেই বিশ্বকাপ বহু অবিস্মরণীয় মুহূর্তের জন্ম দেয়, অনেক নতুন জিনিস দেখা যায়। মাঠে ও মাঠের বাইরে কী কী নতুন দেখলাম এবার? একটি অসম্পূর্ণ তালিকা:
মাঠে
১। এই প্রথম আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবল মরসুমের শেষে নয়, বিশ্বকাপ হল মাঝপথে। দামি খেলোয়াড়দের গত কয়েকটা বিশ্বকাপের তুলনায় অনেক তরতাজা দেখাল।
২। নয়ের দশক থেকে ক্রমোন্নতির পর আফ্রিকার ফুটবল ফের পিছিয়ে পড়ছে – এমন আশঙ্কার মেঘ সরিয়ে ক্যামেরুন, ঘানার মত অতীতে সাফল্য পাওয়া দেশ ব্যর্থ হলেও প্রথম আফ্রিকান দল হিসাবে সেমিফাইনালে পৌঁছল মরক্কো।
৩। অতদূর যেতে না পারলেও গতিময় ফুটবল খেলে মুগ্ধ করল জাপান। প্রথম রাউন্ডে জার্মানিকে হারানোর পর দ্বিতীয় রাউন্ডেও আগেরবারের ফাইনালিস্ট লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়াকে টেনে নিয়ে গেল পেনাল্টি শুটআউট অবধি। এশিয়ার অন্য প্রতিযোগীদের মধ্যে সৌদি আরবও চমকে দিল আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিলের কাছে শোচনীয়ভাবে হারলেও এশিয়ার অন্য দেশ দক্ষিণ কোরিয়া প্রথম রাউন্ডে হারিয়ে দেয় পর্তুগালের মত ভারি দলকে।
৪। রেফারিংয়ের মান খুশি করতে পারল না কাউকেই। প্রথম রাউন্ড থেকেই ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির অফসাইড দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন দলের সমর্থকরা অখুশি ছিলেন। কোনো দল সহজেই পেনাল্টি পেয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ ন্যায্য পেনাল্টি পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠছিল। অসন্তোষ মাত্রা ছাড়িয়ে গেল আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচে। দু দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম হল, ১৮ জনকে হলুদ, একজনকে লাল কার্ড দেখালেন স্প্যানিশ রেফারি আন্তোনিও মাতেউ লাহোস। ম্যাচের পর প্রকাশ্যে তাঁর নিন্দা করলেন মেসি।
৫। স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বিশ্বকাপ। এমনকি তৃতীয় স্থান দখলের ম্যাচেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
আরো পড়ুন কাতারে বিশ্বকাপ: নিরোর অতিথি আমরা সবাই
মাঠের বাইরে
১। ফিফা বিশ্বকাপে রাজনীতি পছন্দ করে না, কিন্তু প্রতিবাদ আটকাতে স্বয়ং ফিফা সভাপতি রাজনৈতিক বক্তৃতা দিতেও পিছপা নন। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই সাংবাদিক সম্মেলনে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
২। ইউরোপের দেশগুলো নিরাপদ প্রতিবাদে বিশ্বাসী। ফিফা হলুদ কার্ডের ভয় দেখাতেই ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেন ‘ওয়ান লাভ’ আর্মব্যান্ড পরার পরিকল্পনা ত্যাগ করলেন। জার্মানিও শুধু ম্যাচের আগে টিম ফটো তোলার সময়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে প্রতিবাদ সারল।
৩। হাজার চেষ্টাতেও বিশ্বকাপকে অরাজনৈতিক করে ফেলা যায় না। মরক্কোর ফুটবলাররা স্পেনকে হারিয়ে আনন্দ উদযাপন করলেন প্যালেস্তাইনের পতাকা হাতে।
৪। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সমেত অনেকে আবার হাস্যকরভাবে দাবি করলেন, এ জয় মুসলিম দুনিয়ার জয়। যেন বিশ্বকাপের আর কোনো দলে ইসলাম ধর্মাবলম্বী ফুটবলার নেই।
৫। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন জাতিরাষ্ট্র ব্যাপারটা কৃত্রিম, কার্ল মার্কস চাইতেন সীমান্তহীন পৃথিবী। কাতারে দেখা গেল সীমান্তগুলো ক্রমশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। বত্রিশ দলের ৮৩০ জন ফুটবলারের মধ্যে ১৩৭ জন যে দেশে জন্মেছেন সে দেশের হয়ে খেলেননি। নিকো উইলিয়ামস আর তাঁর ভাই ইনাকি খেলেছেন যথাক্রমে স্পেন ও ঘানার হয়ে।
উত্তরবঙ্গ সংবাদে প্রকাশিত