শুনুন ধর্মাবতার

কোটাল বলিলেন “ধর্মাবতার, আমরা গোমাতার সুরক্ষার চিন্তা ত্যাগ করিয়া পাদুকার শুকতলা ক্ষয় করিয়া অনুসন্ধান করিয়া দেখিয়াছি যে ইহাই ঐ রাজ্যে এহেন একমাত্র ঘটনা নহে।”
বিচারকের রক্ত সাইক্লোনকালে ভারত মহাসাগরের ন্যায় উত্তাল হইয়া উঠিল। তিনি উত্তেজনার বশে দাঁড়াইয়া পড়িয়া বলিলেন “বল কি! আরো আছে!”
কোটাল উত্তর করিলেন “তবে আর বলিতেছি কি। আরো দুটি ঘটনার সন্ধান পাইয়াছি যেখানে পিতামাতার প্রতি রুষ্ট হইয়া অবোধ মেয়েটি ভিন্ন ধর্মের এক নরাধমকে বিবাহ করিয়াছে এবং ধর্মান্তরিত হইয়াছে।”
“দু-দুটি ঘটনা! তবে তো এ বড় ভয়ঙ্কর চক্রান্ত, কোটাল মহাশয়! আপনার বাহিনীকে বলুন মাতারক্ষা আপাতত স্থগিত রাখিয়া কন্যারক্ষায় মনোযোগ দিতে।”
এক্ষণে আলোচ্য কন্যার কৌঁসুলি আর্তনাদ করিলেন “ধর্মাবতার, আমার মক্কেল একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা। এ সম্বন্ধে তাঁহার মতামতটা একবার শুনিয়া দেখুন। তিনি বলিয়াছেন তিনি স্বেচ্ছায় এই বিবাহ করিয়াছেন এবং ধর্মান্তরিত হইয়াছেন।”
বিচারকের সহকারী তাঁর কানে কানে বলিলেন “বাইজোভ, ছোকরা বলে কি! মহিলার আবার স্বেচ্ছা! কোনদিন শুনিব দুগ্ধ দোহনের জন্য গোমাতার অনুমতি প্রয়োজন। তিনি স্বেচ্ছায় দিলে তবেই নেওয়া চলিবে।”
একথায় দুজনে খুব হাসিলেন। হাসির কারণ বুঝিতে না পারিয়া কন্যার কৌঁসুলিদ্বয় একে অপরের পানে ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিলেন। অতঃপর বিচারপতি তাঁহাদের বলিলেন “প্রাপ্তবয়স্ক তো কী হইল? আপনারা দ্যাখেন নাই ইদানীং প্রাপ্তবয়স্করা কেমন শিশুদের মতন আহাম্মকি করিতেছেন? প্রবীণ প্রাক্তন ক্রিকেটার উদ্ভিন্নযৌবনা অনুষ্ঠান সঞ্চালিকাকে দেখিয়া নিজেকে ডিস্কো ড্যান্সার মনে করিতেছেন, সাংবাদিক নিজেকে বিচারক ভাবিতেছেন, অসংখ্য নরনারী মোবাইলকে জীবন আর জীবনকে মোবাইল ভাবিতেছেন, খেলা নিয়ে মেলা অনর্থ ঘটিতেছে এমনকি প্রাণ যাইতেছে। এসব কী করিয়া সম্ভব হইতেছে? না মগজধোলাই করিয়া। অতএব মগজধোলাই করিলেই যে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দিয়া যা খুশি করাইয়া নেওয়া যায় ইহা বুঝিতে আপনাদের অসুবিধা হওয়া উচিৎ নহে।”
কন্যার কৌঁসুলি মাথা নাড়িয়া বলিলেন “যথার্থ, ধর্মাবতার। আপনি নির্ভুল। সত্যই আজকাল ভূমিকাগুলি বড্ড গুলাইয়া যাইতেছে। মন্ত্রীদের বিচারক মনে হইতেছে, বিচারককে প্রচারক মনে হইতেছে। তেনাদেরও মগজধোলাই হইয়াছে কিনা তাহাও তদন্ত করিয়া দেখা দরকার।”

*উপরের কথোপকথনটি কাল্পনিক। কোন বাস্তব ঘটনা বা চরিত্রের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া গেলে তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয়

Author: Pratik

সাংবাদিক, লেখক। কাজ করেছেন দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ডেকান ক্রনিকল, দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য স্টেটসম্যান এবং অধুনালুপ্ত দ্য বেঙ্গল পোস্টে। বর্তমানে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও কাগজে লেখালিখি করেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিন।

Leave a Reply

%d bloggers like this: