১৯ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জয়ের অনেক আগে থেকেই আমরা জানি রজার ফেডরার এমন একজন পুরুষ যিনি প্রকাশ্যে কাঁদেন।
গ্রীক দেবতা আপোলোপ্রতিম চেহারা, তবু আজ অব্দি তাঁর ঢেউখেলানো পেশি আমরা কেউ দেখিনি। কারণ তিনি দেখান না।
যে যুগে সম্পর্কগুলো সুদিনের প্রতিশ্রুতির মতই ভঙ্গুর, সেই যুগে তিনি সেই কবে আলাপ হওয়া মির্কার প্রেমে আজও বিভোর। চার ছেলেমেয়ের জন্মের পরেও। আমাদের মধ্যে কেউ যদি স্ত্রীর প্রতি ভালবাসায় এর অর্ধেকও হয়, তাকে এদেশে আজও আড়ালে স্ত্রৈণ বলা হয়।
অপরকে মাড়িয়ে উপরে ওঠার দর্শনে বুঁদ হয়ে থাকা সময়ে রজার তাঁর ছোটবেলার অকালমৃত্যুর শিকার কোচকে এখনো ভোলেননি। তার বাবা-মাকে নিজের সঙ্গে রাখেন প্রত্যেক গ্র্যান্ড স্ল্যামে।
আগ্রাসন ছাড়া সফল হওয়া যায় না — শেখায় যে পৃথিবী, সেই পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে রজার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নাদাল সম্পর্কে বলেন “ওর থেকে আমি অনেক শিখেছি। রাফা, তুমি আরো অনেকদিন খেলো। টেনিসের তোমাকে দরকার।”
নিও লিবারেল অর্থনীতির স্বর্ণযুগে বিভিন্ন খেলার অতিধনী তারকারা নিজের নিজের দেশ ছেড়ে মোনাকোয় ঘাঁটি গেড়েছেন ওটা ট্যাক্স হাভেন বলে, অথচ রজার রয়ে গেছেন কল্যাণময় রাষ্ট্রের পতাকা ধরে রাখা মাতৃভূমি সুইটজারল্যান্ডে, গাদা ট্যাক্স দিয়ে।
অধিকাংশ কিংবদন্তী ক্রীড়াবিদ আমাদের দিয়ে যান শেষবার চোখ বোজার আগেও মনে পড়বে এমন কিছু শট আর অবিস্মরণীয় কিছু জয়ের মুহূর্ত। ভেবে দেখুন, রজার এরমধ্যেই তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছেন। তবু মন ভরেনি। আরো কিছুদিন থাকুন, রজার। “প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে” ফোরহ্যান্ডের অলস মায়া আরো কিছুদিন চলুক।
Category: মাঠ ঢেকেছে
দেশপ্রেম না ছাই
ভারতের হয়ে খেলতে নামা ১১ জন ক্রিকেটারকে কেন আপনার জাত্যভিমান রক্ষার দায়িত্ব নিতে হয় বলুন তো? আপনি কে? ওদের কাউকে আপনি দলে নির্বাচিত করেছেন? সে যোগ্যতা আছে? ক্রিকেটাররা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত তাদের কাছে দায়িত্ববোধ দাবী করলে, প্রত্যেকটা কাজের জবাবদিহি চাইলে তো বলবেন দেশবিরোধী কাজ হচ্ছে। তাহলে যাদের মাইনেকড়ি আপনি দেন না, যাদের যোগ্যতার বিকাশে আপনার কোন প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই, যারা জাতীয় দলে নির্বাচিত হয়েছে নিজেদের যোগ্যতায় (যদি ঘুরপথেও হয়ে থাকে তাতেও তো আপনার কোন ভূমিকা নেই) তারা কেন দেখতে যাবে ম্যাচ জিতে আপনার কোন অহঙ্কার বজায় থাকল কিনা বা হেরে গিয়ে আপনার সম্মানে আঘাত লাগল কিনা?
আপনি বলবেন “আমি দেখি, পয়সা খরচা করি, সেইজন্যই ক্রিকেটে এত টাকা। তাই ওরা ধনী।” তা দ্যাখেন কেন? কেউ আপনাকে বাধ্য করেছে দেখতে? মোদীজি মাইনে পান আপনার আমার আয়করের টাকা থেকে। আইন অনুযায়ী আমি সেটা দিতে বাধ্য, তার বিনিময়ে মোদীজির সরকার আমাকে বিভিন্ন পরিষেবা দিতে বাধ্য, আমার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। কিন্তু আইন আপনাকে ক্রিকেট দেখতে বাধ্য করে না। আপনার ভাল না লাগলে আপনি ক্রিকেট দেখবেন না। পয়সা খরচ করবেন না। চুকে গেল। এভাবে যদি অনেকেই না দেখেন তাহলে বি সি সি আই, মানে কোহলি যে কোম্পানির কর্মচারী, তাদের রোজগার নিঃসন্দেহে কমবে। বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে কোহলির দামও কমবে। ফলে তার আয় কমবে। কিন্তু কতটা আয় হলে তার মাইনে বাড়বে বা কমবে কিম্বা কমবে কিনা সেসব কিস্যু আপনার হাতে নেই। কারণ তাকে টাকা দেয় কতকগুলো কোম্পানি। কোহলির দায় অতএব তাদের কাছে, আপনার কাছে নয়।আপনি আসলে ভাবেন বি সি সি আই আপনার সম্পত্তি তাই ক্রিকেটাররাও আপনার সম্পত্তি। এরকম ভাবেন কারণ আপনাকে ভাবানো হয়। চতুর হোটেলমালিক যেমন হোটেলে পা রাখামাত্রই বলেন “নিজের মতন করে থাকবেন, স্যার। আপনাদেরই তো হোটেল।” কিন্তু বাস্তবটা হল আপনি যতবড় ক্রিকেটপ্রেমীই হোন, বি সি সি আই একটি স্বশাসিত সংস্থা। আপনি তার ঘন্টা করতে পারেন। আর ক্রিকেটাররা সেই সংস্থার বেতনভুক কর্মচারী। তারা বি সি সি আই এর কাছে দায়বদ্ধ। আপনার জাত্যভিমানের বন্দুক আপনি তাদের ঘাড়ে রাখেন কোন অধিকারে?
জাত্যভিমান না ছাই। আসলে তো জাতিবিদ্বেষ। ভাগ্যিস রবীন্দ্র জাদেজার নাম রবিউজ্জামান নয়। তাহলেই তো নিজের দেশের ক্রিকেটারকেও বাপ চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করে মীরজাফরের আত্মীয় বানিয়ে ফেলতেন। এমন ভাব করতেন যেন ঐ রান আউটটা না হলেই ভারত হৈ হৈ করে জিতে যেত। তা কোটি কোটি ভারতবাসীর অবদমিত ক্যানিবালিজম চরিতার্থ করার দায় বারবার ক্রিকেটারদের কেন নিতে হবে? শুধু ক্রিকেটারদেরই বা কেন?