তীব্র মেরুকরণ হওয়া সমাজে ফ্যাক্ট চেকিং যথেষ্ট নয়: প্রতীক

স্কুল স্তর থেকে অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে অল্টনিউজ পশ্চিমবঙ্গে

সম্প্রতি অল্টনিউজের কর্ণধার প্রতীক সিনহা সোশাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেছেন, তিনি কলকাতার বাসিন্দা হয়েছেন। অল্টনিউজ এবার পশ্চিমবঙ্গেও কাজ করবে। হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের কারণ কী? এ কি কোনো স্বল্পমেয়াদি সিদ্ধান্ত, নাকি এর পিছনে আছে দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা? নাগরিক ডট নেটের প্রতীককে জানালেন অল্টনিউজের প্রতীক।

নাগরিক: প্রথমেই পশ্চিমবঙ্গে আপনাকে এবং অল্টনিউজকে স্বাগত জানাই। সেইসঙ্গে একটা অনুযোগও করব। আমাদের কিন্তু অল্টনিউজকে গত বছরের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে বেশি দরকার ছিল। কারণ নির্বাচনের সময়ে ভুয়ো খবরের উপদ্রব বড্ড বেড়ে যায়। তাই আমার প্রথম প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গে বা বাংলায় অল্টনিউজকে বিস্তৃত করার সিদ্ধান্তটা এই সময়ে কেন নেওয়া হল?

প্রতীক: আমার মনে হয় আমাদের পশ্চিমবঙ্গে আসার উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছুটা ভুল ধারণা থেকে এই অনুযোগটা তৈরি হয়েছে। দেখুন, ভুয়ো খবরের উপদ্রব দেশের সব ভাষাতেই সমান। অথচ আমরা একটা ক্রাউড ফান্ডেড ছোট স্টার্ট-আপ। সব রাজ্যে ছড়িয়ে পড়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তো আমাদের কলকাতায় আসার কারণ এটা নয় যে পশ্চিমবঙ্গ ভুয়ো খবরের সবচেয়ে বড় টার্গেটগুলোর অন্যতম। আমাদের উদ্দেশ্যটা একটু বিশদে বলি?

 নাগরিক: নিশ্চয়ই…

প্রতীক: অল্টনিউজ চালু হয়েছে পাঁচ বছর হল। যারা এটা চালু করেছিল তারা নানারকম কাজের লোক। আমি যেমন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের লোক। আগের পনেরো বছর আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারই ছিলাম। ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে এই কাজটায় এসেছি সামাজিক প্রভাব আছে এমন কিছু করব ভেবে। আমরা যারা অল্টনিউজ শুরু করেছিলাম, সকলেই চাইতাম আমাদের নিজেদের যে পারদর্শিতাগুলো আছে, সেগুলোকে সমাজের কাজে লাগাব। আর আমরা দেখেছিলাম যে ভারতীয় সাংবাদিকতায় ক্রস ডিসিপ্লিন বিশেষজ্ঞ বলে কিছু নেই। মানে ধরুন, যিনি বিজ্ঞান নিয়ে সাংবাদিকতা করেন, তাঁর কিন্তু বিজ্ঞানের ডিগ্রি নেই। বা টেক জার্নালিস্টের প্রযুক্তির ডিগ্রি নেই। আমরা বুঝেছিলাম, আমাদের যার যা টেকনিকাল জ্ঞান, সেগুলো ব্যবহার করে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এমন একটা জিনিস করতে পারি যা সেই সময়ে অন্তত এ দেশে আর কেউ করছিল না। ২০১৭ সালে আমরাই প্রথম এ দেশে মিথ্যা তথ্য চিহ্নিত করার কাজটা শুরু করি। কিন্তু সেটুকুই আমাদের লক্ষ্য ছিল না। আমরা আশা করেছিলাম সামগ্রিকভাবে সমাজে ভুয়ো তথ্যের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারব।

কিন্তু লক্ষ্য করে দেখুন, সমস্ত বড় বড় ইস্যুতে ভুয়ো খবর, মিথ্যা তথ্যকে চিহ্নিত করতে এত পরিশ্রম করি আমরা… এখন আরও অনেক সংগঠন করে… তা সত্ত্বেও কিন্তু সমাজে কোনো বদল আসেনি। সমাজ এখনো পাঁচ বছর আগের মতই মিথ্যা তথ্য গিলে চলেছে। বরং প্রতিদিন এগুলো বাড়ছে বললেও ভুল হয় না। তার ফলে সমাজে কী তীব্র মেরুকরণ হয়েছে আমরা দেখতেই পাচ্ছি। গত এক-দেড় বছরে আবার ভুয়ো খবর, মিথ্যা তথ্যের সাথে যুক্ত হয়েছে হেট স্পীচ। এ থেকে প্রমাণ হয়, এতদিন ধরে অসত্য গিলতে গিলতে সমাজ এতটাই দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে যে হেট স্পীচ হজম করতে কোনো অসুবিধাই হচ্ছে না। ছ বছর আগেও যদি হরিদ্বার বা ছত্তিশগড়ের হেট স্পীচের মত ঘটনা ঘটত, অনেক বেশি মানুষ অবাক হতেন বা ক্ষোভ প্রকাশ করতেন।

ফলে আমরা বুঝতে পেরেছি, এই যে একের পর এক আর্টিকেল প্রকাশ করে যাচ্ছি, এটা যথেষ্ট নয়। আরও বেশি কিছু করা দরকার। উন্নততর প্রযুক্তি তো দরকার বটেই, তা নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, মানুষকে এই ব্যাপারে শিক্ষিত করা বেশি জরুরি। আপনি ইউরোপের দিকে তাকান। বিশেষ করে ফিনল্যান্ড, ডেনমার্কের মত দেশে ইতিমধ্যেই ভুয়ো খবর চিহ্নিত করা স্কুলের পাঠক্রমে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানে ওরা এ সম্বন্ধে মানুষকে ছোট থেকে শিক্ষিত, সচেতন করে তোলার চেষ্টা করছে; ব্যাপারটাকে স্রেফ সাংবাদিকতার ব্যাপার বলে ভাবছে না। আমরা ওই দিকে এগোতে চাইছি। পশ্চিমবঙ্গে আসার মূল উদ্দেশ্য এই দিকটা নিয়ে কাজ করা। পাশাপাশি সাংবাদিকসুলভ যে কাজ আমরা পাঁচ বছর ধরে করছি সেটা তো করে যাবই।

নাগরিক: তা এই কাজ শুরু করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ উর্বর জমি বলে মনে হল কেন?

প্রতীক: এই কাজটা আমরা একটা ভৌগোলিক অঞ্চল বেছে নিয়ে শুরু করতে চেয়েছিলাম। আমরা দেখতে চাই যে একটা বড় অঞ্চলের মানুষকে ব্যাপকভাবে তথ্যসাক্ষর (information literate) বা মিডিয়াসাক্ষর (media literate) করে তোলা যায় কিনা। তা এটা করতে গেলে এমন একটা রাজ্য দরকার, যেখানকার সরকার আমাদের কাজটাকে সমর্থন না করলেও অন্তত আমাদের বিরোধিতা করবে না। সেদিক থেকে আমাদের তিনটে রাজ্যের কথা মাথায় ছিল — কেরালা, তামিলনাডু আর পশ্চিমবঙ্গ। এই কাজে রাজনৈতিক স্থিরতার গুরুত্বটা আশা করি বুঝতে পারছেন। মানুষকে এই ব্যাপারে শিক্ষিত করে তোলা তো দু-এক দিনের কাজ নয়, রাজনৈতিক বিরোধিতা সামলে দীর্ঘ সময় ধরে এটা করে যাওয়া মুশকিল। তো আমরা শেষমেশ এখানেই করব ঠিক করলাম, তার একটা বড় কারণ এই প্রোজেক্টটার মাথা আমি। আমি বাংলা ভাষাটা অন্তত বলতে পারি; তামিল, মালয়ালম পারি না। দ্বিতীয়ত, পূর্ব ভারতের রাজনৈতিক গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গের, তেমনি আসামের, তেমনই বিহারের। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ আর বিহারের যে বিয়াল্লিশটা করে আসন, সেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। কেরালায় হয়ত আমাদের কাজের জমি কিছুটা তৈরি ছিল। কারণ ওখানকার সিপিএম সরকার স্কুলের পাঠক্রমে তথ্যসাক্ষরতার কোর্স চালু করবে বলে ঘোষণা করেছে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু শেষ অব্দি ভাষা আর রাজনৈতিক গুরুত্ব — এই দুটো কারণেই আমরা পশ্চিমবঙ্গকে বেছে নিলাম বলা যায়।

নাগরিক: এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাথে আলাপ আলোচনা হয়েছে কি?

প্রতীক: না, এক্ষুণি সরকারের সাথে আলোচনা করার কোনো পরিকল্পনা নেই। প্রথমে আমরা নিজেরা একটা কাঠামো দাঁড় করাতে চাই। কিছু এনজিও, প্রাইভেট স্কুল ইত্যাদির সঙ্গে কাজ করে আমরা আগে একটা পাঠক্রম তৈরি করতে চাইছি। সত্যি কথা বলতে, আমাদের এই কাজটা করতে করতেই শিখতে হবে কী করে কী করা যায়। কারণ আমার তো শিক্ষাজগতের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। একেবারে শূন্য থেকে শুরু করছি। আমরা আপাতত এক বছরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। আমি নিজে এই কদিন আগেই কিছু ক্লাস ইলেভেন, টুয়েলভের ছেলেমেয়েকে একটা ট্রেনিং কোর্স করালাম।

নাগরিক: ব্যাপারটা কতটা কঠিন হতে পারে বলে মনে হচ্ছে?

প্রতীক: ব্যাপারটা অনেকটাই অন্যরকম। যেমন ধরুন, ছোটদের তথ্য সংগ্রহ করা আর বড়দের তথ্য সংগ্রহ করার ধরনটা কিন্তু আলাদা। ফলে আমাদের এমন একটা পাঠক্রম তৈরি করতে হবে যেটা ছোটদের ভাল লাগবে। বড়দের যদি আমি রাজনৈতিক ভুয়ো খবর নিয়ে বলি, তাঁরা আগ্রহী হবেন। কিন্তু ছোটরা উৎসাহ পাবে না। সুতরাং আমাদের ভাবতে হবে কী করে এমন একটা পাঠক্রম তৈরি করা যায় যা ছোটদের টানতে পারবে, তথ্য সম্পর্কে তাদের আরও বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারবে। যেসব দেশ এই কাজটা শুরু করে দিয়েছে তাদের কিছু কিছু পদ্ধতি আমরা নিশ্চয়ই অনুসরণ করতে পারি, কিন্তু বেশিরভাগটাই নিজেদের নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোর সাথে আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক তফাত বিস্তর। ধরুন ফিনল্যান্ডের সাক্ষরতার হার ৯৫%-এর আশেপাশে। তাদের মত করে এখানকার মানুষকে শেখাতে গেলে তো চলবে না। ফলে আমাদের পথ আমাদেরই আবিষ্কার করতে হবে।

নাগরিক: একটু পরিষ্কার করে নিই, তাহলে আপনারা এখানে মানুষকে তথ্যসাক্ষর করার কাজটা করবেন, কিন্তু অল্টনিউজ হিন্দির মত অল্টনিউজ বাংলা পরিষেবা চালু হচ্ছে না?

প্রতীক: না না, তা নয়। অল্টনিউজ বাংলা চালু হচ্ছে। কারণ এখানে মানুষকে তথ্যসাক্ষর করতে হলে শেখানোর ভাষাটা বাংলা হতেই হবে। একেবারে শিশু শুধু নয়, বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের কথা ভাবুন। আমি যদি তাদের শেখাতে যাই, ওদের মধ্যে যারা ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ নয় তাদের জন্যে বাংলা রিসোর্স লাগবে তো। অল্টনিউজ বাংলাকে দিয়ে সেই কাজটা হবে। মানে অল্টনিউজ বাংলা আমাদের এই বড় কাজটারই একটা অংশ হয়ে উঠবে বলতে পারেন।

নাগরিক: অদূর ভবিষ্যতে অন্য আঞ্চলিক ভাষাতেও এরকম উদ্যোগ নেওয়ার কোনো ভাবনা আছে কি?

প্রতীক: আপাতত নেই। বড়জোর গুজরাটি ভাষায় কাজ করতে পারি, কারণ আমি নিজে গুজরাটি ভাষাটা জানি, আমার অনেক সহকর্মীও গুজরাটি। আমাদের একটা ছোট গুজরাটি পরিষেবা আছেও, যেখানে সামান্য কিছু ভিডিও দেওয়া হয়। খুব বেশি হলে সেটাকে একটা পূর্ণাঙ্গ পরিষেবায় পরিণত করতে পারি। তার কারণ আমাদের মত ছোট স্টার্ট-আপের পক্ষে একেবারে নিশ এরিয়াতে কাজ করাই সম্ভব। যেমন এতদিন আমরা স্রেফ ভুয়ো খবর, মিথ্যা তথ্য নিয়ে কাজ করেছি, অন্য কিছুতে ঢুকিনি। এখন হেট স্পীচ নিয়ে কাজ শুরু করছি। সবে ‘আনহেট’ বলে একটা প্রোজেক্ট ঘোষণা করেছি। আর এই শিক্ষা নিয়ে কাজটা শুরু করছি। নিজেদের এর বেশি ছড়ানোর সামর্থ কোথায়? তাছাড়া দেখুন, আলাদা আলাদা ভাষায় পরিষেবা চালু করে যে অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খুব বেশি সুবিধা হবে তা নয়। এই যে এতদিন ইংরেজি ভাষায় আমরা কাজ করছি, এতে কজন ইংরেজি জানা লোককে প্রভাবিত করা গেছে? সমাজে মেরুকরণ এত মারাত্মক, যে বিরাট অংশের মানুষকে কিছুই বুঝিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। অতএব আমাদের অন্য রাস্তা নিতে হচ্ছে। আমি জানি না সফল হবে কিনা, কিন্তু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এখন যেভাবে আমরা এই সমস্যার সাথে লড়ছি তাতে তেমন সুবিধা হচ্ছে না।

নাগরিক: আচ্ছা, আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে? ভুয়ো খবর কি ইংরেজি ভাষায় বেশি তৈরি হয়, নাকি আঞ্চলিক ভাষাগুলোতে?

প্রতীক: সব ভাষাতেই সমানভাবে তৈরি হয় এবং অন্য ভাষায় অনুবাদ হয়ে যায়। মনে রাখবেন, মিথ্যা তথ্য কিন্তু ভুল তথ্য নয়। মানে ওগুলোর জন্ম ভুল করে হয় না, সংগঠিতভাবে তৈরি করা হয়। ফলে বাংলায় তৈরি ভুয়ো খবর মুহূর্তের মধ্যে তেলেঙ্গানায় বা গুজরাটে গিয়ে পৌঁছয়। কোন ভাষায় বেশি মিথ্যা তথ্য উৎপাদন হয় তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়াও অসম্ভব, কারণ কে যে ভুয়ো খবর তৈরি করছে তা কিছুতেই খুঁজে বার করা যায় না। আই টি সেল কি একটা ঘরে বসা কয়েকটা লোক, নাকি সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা কয়েকশো লোক? এর উত্তর কারোর কাছে নেই।

নাগরিক: বিশেষ করে উদারপন্থী বৃত্তের মধ্যে একটা কথা আজকাল খুব বলা হয়। মানুষ তা-ই বিশ্বাস করে যা সে বিশ্বাস করতে চায়। অল্টনিউজ করতে গিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা থেকে কি কথাটা ঠিক বলে মনে হয়? যেমন ধরুন, আপনাদের অ্যাপে তো সন্দেহজনক তথ্য আপলোড করে সেটা ভুয়ো কিনা তা জেনে নেওয়ার একটা ব্যবস্থা আছে। সেটা কতজন ব্যবহার করেন?

প্রতীক: ওই ব্যবস্থা তো আছেই। তা বাদে আমাদের একটা হোয়াটস্যাপ নম্বরও আছে। সেখানেও একই কাজ করা যায়। বেশকিছু লোক এগুলো ব্যবহার করেও থাকেন। তবে সব মিলিয়ে সংখ্যাটা আর কত? এই মুহূর্তে ভারতে ৫০০ মিলিয়নের বেশি হোয়াটস্যাপ ব্যবহারকারী আছেন। তার মানে এতগুলো মানুষের কাছে ভুয়ো খবর পৌঁছানোর সম্ভাবনা আছে। অল্টনিউজ মাসে এক মিলিয়ন ইউজার পায়। তো বুঝতেই পারছেন, আমরা একটা ভগ্নাংশের কাছেও পৌঁছতে পারছি না। আমার মনে হয় না ফ্যাক্ট চেকিং সাংবাদিকতা কোনোদিনই এমন জায়গায় পৌঁছবে, যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ফ্যাক্ট চেক করবেন। সেই কারণেই আমরা এই রাজ্যে যা করতে এসেছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

নাগরিক: সারা ভারতেই স্বাধীন সাংবাদিকতা যাঁরা করেন, তাঁদের অভিযোগ হল, ক্ষমতাশালীরা এই স্বাধীন সাংবাদিকদের কাজে প্যাঁচে পড়ার সম্ভাবনা আছে দেখলেই কেস ঠুকে দিয়ে কোণঠাসা করেন। আপনাদেরও তো এরকম অভিজ্ঞতা হয়। এই ঝামেলাটা কীভাবে সামলান?

প্রতীক: হ্যাঁ, আমার সহকর্মী এবং অল্টনিউজের কো-ফাউন্ডার মহম্মদ জুবেরের নামেই তো আলাদা আলাদা জায়গায় চারটে এফ আই আর হয়ে বসে আছে। সবকটাই হাস্যকর অভিযোগ। আমাদের বিরুদ্ধে দৈনিক জাগরণ কাগজের একটা মানহানির মামলাও চলছে। লিগাল নোটিস তো আসতেই থাকে। মানে যথেষ্ট হয়রানি চলে। তবে আমরা খুবই সতর্ক হয়ে কাজ করি। প্রত্যেককে বারবার বলা হয়, মাথা গরম থাকার সময়ে কিছু লিখবে না। কোনোকিছু নিয়ে উত্তেজিত থাকলে, রাগ পড়ে যাওয়ার পর লেখো। আমাদের রিপোর্টগুলোতে আমরা প্রসঙ্গ থেকে একেবারেই যেন সরে না যাওয়া হয় সেদিক কড়া নজর রাখি। নির্দিষ্ট করে বলি, আমরা লেখায় অত্যন্ত কম বিশেষণ ব্যবহার করি।

নাগরিক: ক্রাউড-ফান্ডেড ফ্যাক্ট চেকিংয়ের ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ কেমন বলে আপনার মনে হয়? মানে টাকা রোজগার করতে না পারলে তো কাজটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

প্রতীক: এই মুহূর্তে আমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। এই অতিমারী, লকডাউন ইত্যাদিতেও আমাদের মাইনে কমাতে হয়নি। যথেষ্ট মানুষই টাকা দিয়ে পড়ছেন। তবে কমবেশি তো হয়েই থাকে। কয়েকটা ফ্যাক্টরের উপর ব্যাপারটা নির্ভর করে, যেমন অর্থনীতির অবস্থা কেমন? লোকের হাতে কতটা অতিরিক্ত অর্থ আছে? তাছাড়া আমাদের একটা বড় সুবিধা হল আমরা এমন একটা ভাষায় কাজ করি, যে ভাষা ব্যবহারকারীদের মাথাপিছু আয় শুধু আঞ্চলিক ভাষা পড়তে পারেন যাঁরা, সেইরকম মানুষের চেয়ে সাধারণত বেশি হয়। ফলে আমার ধারণা, কেবল আঞ্চলিক ভাষায় এরকম কোনো ওয়েবসাইট চালানো অনেক বেশি কষ্টসাধ্য হবে।

নাগরিক: নাগরিককে সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

প্রতীক: ধন্যবাদ আপনাদেরও।

https://nagorik.net থেকে প্রকাশিত। ছবি ইন্টারনেট থেকে