
পূর্বকথা: রবীনের প্রিয় ছাত্র সুবিমল যাদবপুরে এস এফ আই করে না, অন্য সংগঠন করে। সেই সংগঠনের হয়ে লালগড় যাচ্ছে শুনে রবীন বলে দেখে আসতে, জেনে আসতে মানুষ কেমন আছে। সত্যিই কি তারা রবীনের পার্টির বিরোধিতা করছে? কেন করছে?
“কি গো, সরকার বাঁচবে? কী মনে হচ্ছে এখন? তুমি তো লোকসভা ভোটের আগেই বলে দিয়েছিলে আমরা হারব। তারপর এক বছর হতে চলল। এখন কী বলছ? অবস্থা বদলেছে? একজন নেত্রী, যে শুধু ভাঙতে জানে, কোন বিকল্প কর্মসূচী নেই, মানুষ তাকেই ভোট দেবে? কী কাণ্ড করছে! এখনো মানুষ জাগবে না?” ফাল্গুনী চায়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে।
কদিন হল রবীনের শরীরটা একেবারে ভাল যাচ্ছে না। সারাক্ষণই কেমন দুর্বল লাগছে, কেবল ঘুম পাচ্ছে। সঙ্গে কাশি। তাই হাঁটতে বেরোনো বন্ধ, শুয়ে শুয়েই কাটছে। জোনাকি বলছে একবার ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়ার কথা, রবীন মনে করছে কদিন বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। পরপর তিন দিন বিকেলে ঝিলের ধারে রবীনকে দেখতে না পেয়ে ফাল্গুনী এসেছে বাড়িতে। রবীনের আজ চা খাওয়ারও ইচ্ছে নেই।
“একখানা বই পড়লাম, বুঝলি?” রবীন কেশে নিয়ে বলে। “লিখেছেন আজিজুল হক। বইটার মোদ্দা কথা হচ্ছে মানুষকে জাগানোর জন্যে, বিপ্লব করার জন্যে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির লোকেরা প্রথম দিন থেকে পরিশ্রম করেছে, ত্যাগ করেছে। এমনকি তাই নিয়ে চৌষট্টি সালে পার্টি ভাগ হয়েছে। কিন্তু তাতে ফল হল না সি পি এমের জন্যে। যখন সময় এল, মানুষ যখন জাগল, তখন এই শালারা সংসদীয় পথে চলে গেল।”
“আজিজুল হক? মানে সেই যে নকশাল নেতা?”
“হ্যাঁ।”
“তা সে তো ওরকমই বলবে। তুমি বিশ্বাস করছ? তোমার মনে হচ্ছে ঠিক লিখেছে? নকশালরা ঠিক সময় বেছেছিল বিপ্লব করার জন্যে? তাহলে ঐভাবে ভেঙে পড়ত আন্দোলন?”
“কী জানিস? বিশ্বাস করতে ঠিক পারছি না, আবার কথাটা ফেলে দিতেও পারছি না।”
“তা হলে নকশালরাই ঠিক বলে ধরে নিতে হবে, রবীনদা? আমাদের কথা নয় ছেড়েই দিলাম। তুমিই বলো, গত তিরিশ চল্লিশ বছরে ওরা কোন বৈপ্লবিক কাজটা করেছে? এখন বরং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির হাত শক্ত করছে। মমতার সঙ্গেও তো ভিড়েছে।”
“ধুর। এহন যেগুলা আছে ঐগুলার কথা ছাড়ান দে। আমাদের এখানে যেগুলারে দেখিস ওগুলান আবার নকশাল নাকি? এগুলার তো একমাত্র কাজ আমাদের হারানোর লগে গোঁজ প্রার্থী দেয়া। তেমন তেমন নকশাল আদ্ধেক মইরা গ্যাছে সেই সময়। আর আদ্ধেক পুলিশের টর্চারে পঙ্গু হয়া গ্যাছে। আজিজুল হকের উপর কম টর্চার হইছে? কিন্তু লোকটার কি মেরুদণ্ড দ্যাখ। ওরা ভুল করছিল, কিন্তু সবডাই কি ভুল? সেইডাই ভাবতাছি।”
“অ্যাই রবীনদা, তুমি আমার প্রশ্নটার উত্তর দিলে না। এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে এটা সেটা বলছ।”
রবীন মিটিমিটি হাসে।
“না রে, এড়িয়ে যাচ্ছি না। আসলে সরকার টিকবে কি টিকবে না সেটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না। আসল কথা হচ্ছে সরকারে থেকে আমরা কী করতে পারব? এখন তো আর তেমন কিছুই করতে পারছি না। এর চেয়ে মনে হয় ক্ষমতা চলে যাওয়াই ভাল। আবার মানুষের পাশে ফেরা যাবে।”
“কী বলছ! তুমি বুঝতে পারছ না। সময়টা ভীষণ খারাপ। লোকে কিরকম ভোগবাদী হয়ে যাচ্ছে দেখছ? বিশেষ করে জোয়ানরা? এই প্রজন্ম নিজেরটুকু ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। এই সময় যদি মমতার মত কেউ ক্ষমতায় আসে, সর্বনাশ হয়ে যাবে। তুমি শুধু রাজ্যটার কথা ভাবছ। বড় পিকচারটা ভাবো। কংগ্রেস যতই কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাক, পশ্চিমবঙ্গে তো ওরা হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। মমতা আরো হাওয়া করে দেবে। সেই সুযোগে বিজেপি ঢুকে পড়বে।”
“সে তুই ভুল বলছিস না,” রবীন বিড়ির প্যাকেটটার জন্যে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বলে। “কিন্তু আমরা ক্ষমতায় থেকেই বা ছেলেমেয়েদের ভোগবাদী হওয়া আটকাতে পারলাম কই?”
শেষ অব্দি ড্রেসিং টেবিলের উপর প্যাকেটটা দেখতে পেয়ে রবীন নিয়ে এসে ফাল্গুনীর হাতে দেয়। নিজে একটা নিয়ে, রবীনেরটা ধরিয়ে দিতে দিতে ফাল্গুনী বলে “পারলে আমরাই পারব, রবীনদা। অন্য কেউ পারবে না। আমাদেরই চেষ্টা করতে হবে। বেনো জল যা আছে সেটা আগে বের করতে হবে।”
“সে তো বুঝলাম। কিন্তু করবি কী করে? সেই শৈলেন দাশগুপ্ত বেঁচে থাকতে একবার পার্টি চিঠি এল। শুদ্ধিকরণ চালু হল। মনে আছে? তাতে কি লাভ হল কিছু? ধান্দাবাজরা এমনভাবে ছেয়ে গেছে, যে কিস্যু করে উঠতে পারবি না। নেতাদের ইচ্ছে থাকলেও হবে না।”
“কিন্তু ক্ষমতা চলে গেলে কী সুবিধে হবে?”
“আর কিছু না হোক বেশ কিছু বাজে লোক এমনিই কেটে পড়বে দেখবি। বাকিগুলোকেও তাড়াতে সুবিধা হবে। এখন কে কত ভোট এনে দেয় সেই ইকুয়েশন চলে আসে। তখন তো আর সেটা থাকবে না।”
ফাল্গুনীর মুখ দেখে রবীন বোঝে, ও মোটেই সন্তুষ্ট হল না ব্যাখ্যাটায়। কিন্তু পাল্টা যুক্তি খুঁজে পাচ্ছে না।
বিড়িটা শেষ করার আগেই কাশির চোটে দম বন্ধ হয়ে আসে। ফাল্গুনী ব্যস্তসমস্ত হয়ে বলে “দাঁড়াও, দাঁড়াও। আমি একটু জল নিয়ে আসি।” ওর আগেই কাশির আওয়াজে জোনাকি জলের গ্লাস নিয়ে ছুটে আসে। কোন মতে গলাটা একটু ভেজাতে স্বস্তি মেলে। জোনাকি অভিযোগ করে, এত কাশি সত্ত্বেও লোকটা কিছুতে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে না। রবীন যথারীতি “কিচ্ছু হয়নি” বলে উড়িয়ে দেয়। জোনাকি গজগজ করতে করতে টিভির সামনে ফিরে যায়।
“তোমার কাশিটা কিন্তু খুব জোরদার হয়েছে এই বারে। অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে, রবীনদা। বেশ কয়েকদিন তো হল। এবার একবার ডাক্তার দেখিয়েই নাও।”
“আরে ধুর। জ্বর জারি নয়, হাতে পায়ে ব্যথা নয়, খামোকা ডাক্তারের কাছে যাব কী করতে? দেখি কাল সকালে মান্তুর দোকানে বলে কাশির ওষুধ নিয়ে আসবখন। বিড়িটা কোথায় পড়ল দ্যাখ তো।”
ফাল্গুনীর পীড়াপীড়িতে রবীন বাকি বিড়িটা আর খায় না, অ্যাশ ট্রেতে ফেলেই দেয়। তার বদলে বাকি জলটা খাইয়ে দিতে বলে ফাল্গুনীকে।
“তুই ইয়াং জেনারেশনের কথা বলছিলিস না?” রবীন জল শেষ করে বলে। “তাদের কাছে টানতে হবে, বুঝলি? ভোগবাদ হাজারটা জিনিস নিয়ে লোভ দেখাচ্ছে তাদের। আমরা যদি আমাদের দিকে টানতে না পারি, পরের পর প্রজন্মকে গিলে খেয়ে ফেলবে। আমাদের এখন সেই কাজেই মন দেয়া দরকার।”
“সেটাও ক্ষমতা ছাড়া তুমি পারবে না, রবীনদা। এই জেনারেশনটা ভীষণ সুবিধাবাদী। এদের দোষ না। বাবা-মায়েরা এরম করেই তৈরি করেছে। এরা লাভ ক্ষতির অঙ্ক কষে সবেতেই। আমাদের স্কুলের ছেলেদের দেখি তো। ক্লাসের ফার্স্ট বয় আর সেকেন্ড বয়ের মধ্যে কি রেষারেষি! কম্পিটিশন নয় তো, যেন যুদ্ধ। আমাদের পার্টি ক্ষমতায় না থাকলে এরা আমাদের কথা শুনবেই না। যারা ক্ষমতায় থাকবে তাদের দিকেই দৌড়বে। তুমি দেখে নিও। এরা সেই সত্তর দশকের ছাত্রদের মতন নয় গো।”
রবীন কিছুতেই মানতে চায় না, সজোরে মাথা নাড়ে। ফাল্গুনী বলেই চলে “সবচেয়ে বড় কথা মমতা ক্ষমতায় এসে আমাদের কচুকাটা করবে, রবীনদা। পার্টিটাকে টিকতেই দেবে না ও। ভেঙে যাবে পার্টি।”
“এই এতক্ষণে একটা কথা বলেছিস যেটা আমি মানতে বাধ্য। ঠিকই বলেছিস। মমতা তাই-ই করবে। এখনই যা আক্রমণাত্মক, হাতে ক্ষমতা পেলে কী করবে সে তো বোঝাই যাচ্ছে।”
“তবে? তবে যে তুমি বলছ ক্ষমতা গেলেও পরোয়া নেই?”
“পরোয়া করব কেন? মার আমরা কোনদিন খাইনি? তখনও মানুষ বাঁচিয়েছে, আবারও মানুষই বাঁচাবে।”
“মানুষের উপরে এখনো এত বিশ্বাস তোমার!”
“মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ। শুনিসনি কথাটা? ঐটেই তো সার কথা। মানুষকে বিশ্বাস না করলে আর কিসের জন্যে লড়বি?”
“বুঝলাম। কিন্তু মানুষ তো ভুলও করে?”
“তা অবশ্য করে।” এতক্ষণে রবীনের কপালে ভাঁজ পড়ে। “কোনটা যে ভুল কোনটা যে ঠিক সেটা গুলিয়ে যায় অনেক সময়। বিশেষ করে যুগান্তরের সময়। ‘ফেয়ার ইজ ফাউল অ্যান্ড ফাউল ইজ ফেয়ার।’ সেই ইংলিশ অনার্স পড়ার সময়ে পড়েছিলাম। কোথায় আছে বল দেখি লাইনটা?”
“ম্যাকবেথ তো?”
“হ্যাঁ। তুই পড়েছিস?”
“আমি না। আমার মেয়ে।”
“ও হ্যাঁ, ও তো ইংলিশ অনার্সই পড়ছে।”
“আমার অবশ্য জানতে পারার কথা না। এ তো আমার সাবজেক্ট না, আমি কোন হেল্প করতে পারি না ওকে। সেদিন ঝন্টুর মেয়ে এসছিল ওর কাছে। ও পড়াচ্ছিল, তাই শুনতে পেলাম।”
“বাঃ, তোর মেয়ে এখন থেকেই টিউশন করছে? খুব ভাল অভ্যেস।”
“না না। ঝন্টুর মেয়েটা তো ওদের কলেজেই ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে, মাঝে মাঝে একটু দেখিয়ে দিতে বলে আর কি। আমি মেয়েকে বলেছি, যতটা পারা যায় সাহায্য করিস। ইংলিশের প্রাইভেট টিউটরগুলোর যা দর… ঝন্টুদের পক্ষে তো সম্ভব না। কুলাঙ্গারটা তো কিস্যু করে না। ওর বউ শাড়িতে ফলস লাগানো, ব্লাউজ বানানো, সোয়েটার বানানো — এসব করে কোন মতে সংসারটা চালায়।”
“ঝন্টুটা কিন্তু একই রকম রয়ে গেল, না?” রবীন সকৌতুকে প্রশ্ন করে।
ফাল্গুনীর কিন্তু একটুও মজা লাগে না। সরোষে বলে “হ্যাঁ, সঙ্গটা তো আর বদলাল না। আমাদের জন্যে প্রাণে বাঁচল, অথচ আমাদেরই গালাগাল দিয়ে বেড়ায় এখনো। মমতাকে আসতে দাও, দেখবে আবার সেই একই কাজগুলো করবে শুয়োরটা।”
রবীন শুধু হাসে।
গিন্নীকে নিয়ে কোথায় একটা যাবে বলে উঠে পড়তে হয় ফাল্গুনীকে। রবীন দরজা অব্দি এগিয়ে দেয়।
আর শুয়ে থাকতে ভাল লাগে না। বাইরের ঘরের আলমারি থেকে ‘দ্য মিরর ক্র্যাক’ড ফ্রম সাইড টু সাইড’ নিয়ে এসে বালিশ কোলে হেলান দিয়ে জমিয়ে বসে খাটে। ঝন্টুর ব্যাপারে ফাল্গুনীর কথাগুলো মনে করে হাসি পায়। ঠিকই বলেছে। ঝন্টুর চরিত্র বুঝতে ওর ভুল হয়নি। কিন্তু কী আর করা যাবে? হত্যার বদলে হত্যা যদি সেই সময় রুখে না দেওয়া হত, আজও এর শেষ হত না। পুরো এলাকাটাই ধীরে ধীরে সমাজবিরোধীদের হাতে চলে যেত। সেটা তো হতে দেওয়া যায় না।
শাসনের অভাবে ঝন্টু যে বাঁদর হয়ে যাচ্ছে, সেটা পাড়াসুদ্ধ লোক জানত। যখন প্রথম ওকে পাগলা সুরেনের দলের ছেলেদের সাথে ঘুরতে দেখা যায়, তখন পাড়ার বড়রা গিয়ে ওর বাবাকে বলেছিল ছেলেকে সামলাতে। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। বাবা একদিন ধমকেছে বলে ঝন্টু বাবাকে দরজার খিল দিয়ে পিটিয়েছিল।
ক্রমশ সে সুরেনের জামাই ন্যাড়ার কাছের লোক হয়ে যায়। কোথায় সি পি এমের কোন মিটিং হচ্ছে, কোন নেতা কোথায় লুকিয়ে আছে — এসব খবর পুলিশ আর কংগ্রেসী গুণ্ডাদের কানে তুলে দেওয়া ওর প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়। রবীন যে ওর মা মারা গেছে বলে বাড়ি এসেছে, সে খবরও ও-ই পুলিশের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। বাড়িতে বেশ দু পয়সা আসছিল বলে ওর মা, ভাইরাও বিশেষ আপত্তি করেনি৷ তাছাড়া ওরা বরাবর কংগ্রেস সমর্থক।
চলছিল ভালই, কিন্তু সুরেনের সাম্রাজ্যের দখল নিয়ে যখন ন্যাড়া আর জগার মধ্যে লেগে গেল, তখন ঝন্টু পড়ল বিপদে। ন্যাড়ার লোকেরা সুযোগ বুঝে জগার দিকে ভিড়ে যাচ্ছিল। সেটা আটকাতে ন্যাড়া জগার লোকেদের খুন করা শুরু করল। জগাও বসে থাকার ছেলে নয়। এই করতে করতে একদিন প্রকাশ্য দিবালোকে ন্যাড়াকে জগার লোকেরা গুলি করে মেরে দিল।
সে এক কাণ্ড হয়েছিল। রাস্তার উপর লাশ পড়ে আছে, লোকে দূর থেকে দেখছে। পুলিশে খবর দিতেও ভয় পাচ্ছে। এম পি, এম এল এ কে ফোন করা হয়েছে, তাঁরাও এড়িয়ে গেছেন। শেষে রবীন গিয়ে দাঁড়ায় বডির পাশে। বাজারের বড় মুদির দোকানে ফোন ছিল। তার মালিককে বলে “মদনপুর থানায় আমার নাম করে ফোন কর। বল রবীনদা বলেছে ন্যাড়া মস্তান খুন হয়ে গেছে, এক্ষুণি আসতে।” পুলিশ আসে, বডি নিয়ে যায়। সেই সময় সবুজগ্রাম, ক্ষেত্রগ্রাম, বড়িহাটাকে শান্ত রাখা খুব বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
যেদিন ন্যাড়া খুন হয়, ঠিক তার পরের দিন রাতে যখন রবীন খেতে বসেছে, ঝন্টুর মা কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসেন। “আমার পোলাডারে পুঁইত্যা ফ্যালাইব, রবীন। তুমি বাঁচাও।” হাউ হাউ কান্নার মধ্যে দিয়ে রবীন যেটুকু বুঝতে পারে, তা হল একটু আগে ওদের দলের একজন এসে ঝন্টুকে বলে গেছে ‘এক্ষুণি পালাও। জগাদা নিজে আসছে।’
বাড়া ভাত ফেলে উঠে রবীন ঝন্টুকে ফাল্গুনীদের বাড়িতে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। সে একাই দেখে নেবে বলে অহঙ্কার করছিল, অগত্যা ঠাটিয়ে চড় মারতে হয় গোটা দুয়েক। চিলেকোঠার ঘরে ওকে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দেন ফাল্গুনীর বাবা। রবীনের ডাকে সবুজগ্রামের পার্টির ছেলেরা ঘিরে রাখে ওদের বাড়ি আর ঝন্টুদের বাড়ি। জগা দলবল নিয়ে এসে নিষ্ফল আক্রোশে কাঁচা খিস্তি আর দু তিনটে বোমা ছুঁড়ে কেটে পড়ে। ফোন করা হয়েছিল রাত এগারোটায়, ক্ষেত্রগ্রাম ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এসে পৌঁছয় পরদিন সকাল সাতটায়। রবীনের কাছে ধমক খাওয়া ছাড়া আর বিশেষ কাজ ছিল না তখন। ওরই পরামর্শে ওরা ঝন্টুকে গ্রেপ্তার করে। কারণ তখন পুলিশ হেফাজতেই ও নিরাপদ।
ভাগ্যিস হীরুদা মদনপুর থানায় জয়ন্ত ভৌমিকের মত একজন কড়া ও সি এনে দিয়েছিলেন তার পরে পরেই। নইলে শান্তি ফেরানো যেত না এখানে। আবার সব অশান্ত হয়ে উঠলে কী হবে? রবীন কিছুতেই আগাথা ক্রিস্টির রহস্যোপন্যাসে মন টিকিয়ে রাখতে পারে না।
*এই উপন্যাসের সমস্ত ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। কোন সত্যি ঘটনা বা জীবিত/মৃত ব্যক্তির সাথে মিল পাওয়া গেলে তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। কিছু বাস্তব চরিত্রের নাম এসেছে কেবল সময়কাল বোঝাতে
ভাল লাগলে টাকা দিতে পারেন Google Pay / Paytm / BHIM বা অন্য UPI অ্যাপের মাধ্যমে journopratik@okhdfcbank কে
অথবা
নেট ব্যাঙ্কিং বা অন্য উপায়ে নিম্নলিখিত অ্যাকাউন্টে
Pratik Bandyopadhyay
A/c No. 14041140002343
HDFC Bank
Branch: South Calcutta Girls’ College
IFS Code: HDFC0001404
MICR Code: 700240048