রাজদীপের দ্বীপান্তর: নিরপেক্ষতার পুরস্কার?

মনে করা হত নিরপেক্ষ থাকলে তবেই সত্য উদ্ঘাটন করা যায়; পক্ষপাতিত্ব করলে মিথ্যা প্রশ্রয় পায়। উত্তরসত্য (post truth) আর ভুয়ো খবরের যুগে এই সহজ সমীকরণ যে বাতিল হয়ে গেছে।

“সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আর সাংবাদিকের স্বাধীনতা সমার্থক নয়। কোন দেশেই নয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কিংবা যাকে বলা হয় মুদ্রাযন্ত্রের স্বাধীনতা তার জন্য লড়াইটা এযাবৎ প্রধানত চলেছে রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে, স্বৈরতান্ত্রিক শাসন-নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে। এ লড়ায়ের মোটামুটি মানে, স্বাধীনভাবে মতামত এবং সমকালীন ঘটনাবলীর বিবরণ প্রকাশের অধিকার দাবি করেছে খবরের কাগজ। সে অধিকার মোটের উপর স্বীকৃত হয়েছে অনেক দেশে। কিন্তু খবরের কাগজের স্বাধীনতা মানে, সাংবাদিকের, এমন কী সম্পাদকেরও স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার নয়, এই সোজা কথাটা পরিষ্কারভাবে না বোঝার ফলে অনেক ক্ষোভ এবং অভিযোগ জমে উঠেছে। ক্ষোভ সাংবাদিকের মনে, অভিযোগ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে।”

‘সাংবাদিকতা ও কিংবদন্তী’ প্রবন্ধে কথাগুলো লিখেছিলেন অধুনালুপ্ত ‘হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড’ কাগজের একদা অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর সরোজ আচার্য। হকি খেলায় যেমন সবুজ কার্ড দেখিয়ে খানিকক্ষণের জন্য কোন কোন খেলোয়াড়কে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তেমনভাবে ইন্ডিয়া টুডে কর্তৃপক্ষ অভিজ্ঞ সাংবাদিক রাজদীপ সরদেশাইকে দু সপ্তাহের জন্য চ্যানেল থেকে নির্বাসন দিয়েছেন, উপরন্তু তাঁর মাইনে কেটে নিয়েছেন। এই ঘটনা নিয়ে ভাবতে গিয়ে সরোজ আচার্যের এই প্রবন্ধের কথা মনে পড়ল। সরোজবাবুর জীবদ্দশায় এ দেশে নিউজ চ্যানেল বলে কোন বস্তু ছিল না, কিন্তু এখানে সংবাদপত্রের জায়গায় অনায়াসে সংবাদমাধ্যম শব্দটা বসিয়ে নেওয়া যায়। তাতে অর্থের হেরফের হবে না, আমাদের কাজও হয়ে যাবে। জানি না রাজদীপবাবু বাংলা পড়তে পারেন কিনা, পারলেও সরোজবাবুর লেখা চোখে পড়ার সম্ভাবনা কম। কারণ ইনি পশ্চিমবঙ্গেই অধুনা বিস্মৃত একজন লেখক-সাংবাদিক। বাংলার দিকপাল সাংবাদিকরাই কজন এঁর নাম জানেন সন্দেহ আছে। কিন্তু ভারতীয় সাংবাদিকতার বর্তমান অবস্থা যাঁদের হতাশ করেছে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে যাঁরা চিন্তিত, তাঁদের জন্য এই প্রবন্ধ চিন্তার খোরাক হতে পারে।

রাজদীপবাবুর ট্র্যাজেডি হল, তিনি অর্ণব গোস্বামী ও সম্প্রদায়ের মত দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে সরাসরি সরকারি দলের মুখপাত্র হয়ে উঠতে পারেননি। আবার রানা আয়ুব বা সিদ্ধার্থ বরদারাজনের মত বিজেপিকে প্রকাশ্যে দেশের শত্রু আখ্যা দিয়ে প্রতিষ্ঠানবিরোধী সাংবাদিকতা করার সাহস দেখাতে পারেননি। ফলে অর্ণববাবু যেখানে টাইমস গ্রুপের মত বিরাট কর্পোরেট সংস্থার চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের মালিকানায় চ্যানেল খোলার রেস্ত পেয়ে গেছেন; সিদ্ধার্থবাবু যেখানে ওয়েব মাধ্যমে চলে গিয়ে মূলত পাঠকের অনুদানের উপর ভিত্তি করে সরকারি আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়েও নিজে সাংবাদিকতা বলতে যা বোঝেন তা চালিয়ে যাচ্ছেন; সেখানে রাজদীপবাবুকে নিজের হাতে তৈরি চ্যানেল সস্ত্রীক ছেড়ে আসতে হয়েছে কয়েক বছর আগে। ২০০২-এর গুজরাট দাঙ্গা যেভাবে রিপোর্ট করেছিলেন, তার জন্য বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা তাঁকে নিত্য গাল পাড়ে, বাগে পেয়ে আমেরিকার রাস্তায় কয়েক ঘা বসিয়েও দিয়েছিল। অথচ এখন রাহুল কাঁওয়াল, গৌরব সাওয়ান্তের মত ব্যাজহীন বিজেপি মুখপাত্রের সাথে বসে সাংবাদিকতার ভান করতে হয়। আর সেজন্যে এমনকি বিজেপি বিরোধী সাধারণ মানুষও রাজদীপবাবুর উপর রুষ্ট। প্রবীণ সাংবাদিকের লাঞ্ছনার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করার বদলে অনেকেই বলছেন, যে জন আছে মাঝখানে, তার ঠাঁই নাই কোনখানে — একথা রাজদীপবাবুকে বুঝতে হবে।

পুঁজিবাদী আনন্দবাজার গ্রুপের কাগজের সাংবাদিক অথচ মার্কসবাদী সরোজবাবু তাঁর প্রবন্ধে সারা পৃথিবীর একাধিক প্রবাদপ্রতিম সংবাদপত্র ও সম্পাদকের উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন “ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ভীরুতা, কপটাচরণ, দাস-মনোভাব ইত্যাদির অভিযোগ আনবার কোনো অর্থই হয় না। অন্য সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের যেমন তাদের কাজ সম্পর্কে কতকগুলি নির্দেশ মেনে চলতে হয় সাংবাদিকদেরও তেমনি। অন্য সব প্রতিষ্ঠানেও কাজের নীতি নির্ধারণ এবং দায়ভাগটা সাধারণ কর্মীর ইচ্ছা অনুযায়ী হয় না, হওয়া সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব গণতান্ত্রিক উপায়ে সমানভাবে ভাগ করে দেবার পদ্ধতি সোভিয়েট ইউনিয়নেও আবিষ্কৃত হয়নি। ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’ যেমন কলকারখানায়, তেমনই খবরের কাগজেও…”

এই কথাটা উপলব্ধি করতে পারলে রাজদীপবাবুর ত্রিশঙ্কু অবস্থা নিয়ে রাগ করা অযৌক্তিক হয়ে পড়ে। কিন্তু সেক্ষেত্রে সঙ্গতভাবেই এই প্রশ্ন আসে, যে একই যুক্তিতে রাহুল, গৌরব, হিন্দি চ্যানেলগুলোর আরো উগ্রভাষী রুবিকা লিয়াকত, রোহিত সারদানাদের বা বিভিন্ন কাগজের সম্পাদকদের ছাড় দেওয়া হবে না কেন? তাঁদেরও তো মালিকের মর্জি মেনে চলতে হয়। যদি রবীশ কুমার এনডিটিভি-তে চাকরি না করে রিপাবলিক টিভিতে চাকরি করতেন, তাহলে কি তাঁর পক্ষে এখনকার মত সাংবাদিকতা করা সম্ভব হত?

এতক্ষণ সরোজ আচার্যের প্রবন্ধের প্রাসঙ্গিকতা আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে গেলে অপ্রাসঙ্গিকতার দিকগুলো বুঝতে হবে। এর জন্য প্রবন্ধকার দায়ী নন, দায়ী সময়।

প্রথমত, সরোজবাবু যে সময়ের লোক, সেই সময়ের সংবাদমাধ্যমের মালিকরা যেরকম পুঁজির প্রতিভূ ছিলেন, তার সাথে আজকের পুঁজির চরিত্রগত ফারাক অনেক। সেই সময় আমাদের দেশের কাগজের মালিকরা, সে আনন্দবাজার পত্রিকার মালিক সরকারবাবুরাই হোন আর হিন্দুস্তান টাইমসের মালিক বিড়লা কিংবা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের গোয়েঙ্কা, ব্যবসায়িক স্বার্থে কাগজ চালিয়েও মনে করতেন কাগজের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের কথা বলা, রাষ্ট্রশক্তির গলদ প্রকাশ করা। স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তরাধিকার এই চিন্তাভাবনার পিছনে অবশ্যই বড় কারণ ছিল। ১৯৯১ পরবর্তী নিও-লিবারাল পুঁজি কিন্তু লাভের কড়ি ছাড়া কিছু নিয়েই ভাবতে রাজি নয়। ফলে এখন তার স্বার্থ আর রাষ্ট্রশক্তির স্বার্থ অভিন্ন, কারণ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা পরিত্যক্ত। রাষ্ট্রের উপর অতি ধনীদের নিয়ন্ত্রণ গত তিরিশ বছরে বাড়তে বাড়তে এখন চূড়ান্ত। অতএব আগে সংবাদমাধ্যমের মালিকরা অনেক বিষয়ে সম্পাদককে স্বাধীনতা দিতেন, এখন আর দেন না। সচেতন সাংবাদিক অস্বীকার করতে পারবেন না, যে এখন স্রেফ প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ মেনে চলা মানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাংবাদিকতা বলতে যা বোঝায়, ঠিক তার উল্টোটা করা। এ অবস্থা সরোজ আচার্যের প্রবন্ধের কালে ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, ঘুষখোর সাংবাদিক চিরকাল ছিল। পি সাইনাথের পেইড নিউজ নিয়ে কাজ এবং কোবরাপোস্টের স্টিং অপারেশন দেখিয়ে দিয়েছে, এখন ঘুষ নেয় খোদ সংবাদমাধ্যম। অতএব এ যুগে সম্পাদক প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে চলাকেই যদি চূড়ান্ত মনে করেন, তাহলে স্বীকার করে নেওয়া ভাল যে তিনি সাংবাদিকতা করছেন না, মালিকের ব্যবসার প্রচারাভিযান চালাচ্ছেন।

দ্বিতীয়ত, বিংশ শতাব্দীতে স্বাধীন সাংবাদিকতা, ইংরেজিতে যাকে বলে ফ্রিলান্স জার্নালিজম, তার পরিসর ছিল নিতান্ত সংকীর্ণ। সঠিক অর্থে স্বাধীনতাও তাতে ছিল না। কারণ খবর প্রকাশের জন্য কোন না কোন সংবাদমাধ্যমের দ্বারস্থ হতেই হত। অতএব বিবেক দংশন মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় কী? এখন ইন্টারনেট, সোশাল মিডিয়ার যুগ। নয় নয় করে কম সাংবাদিক ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে সাংবাদিকতা করছেন না। রোজগারের নিরিখে কর্পোরেট সংবাদমাধ্যমের চাকরির তুলনায় এখনো সেসব নগণ্য, কিন্তু কর্পোরেট যথার্থই বুঝেছে যা বলে দেওয়া হচ্ছে, হুবহু তাই লিখতে বা দেখাতে সাংবাদিকের দরকার হয় না। তাই ছাঁটাইয়ের হিড়িক পড়েছে। এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে সাংবাদিকতা করা না হয় না-ই গেল, নিজের চাকরিটা বাঁচানো যাবে কি? যাবে না। এখানে আমরা অবশ্যই সম্পাদক স্তরের সাংবাদিকদের কথা বলছি, কারণ যে সাংবাদিকরা কর্পোরেট মইয়ের নীচের দিকে আছেন, তাঁদের সামনে বিকল্প নেই। কোন পেশাতেই তাঁদের স্তরের লোকেরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বে থাকেন না। কিন্তু উপরতলার লোকেরা স্রেফ চাকরি বাঁচানোর জন্য দিনকে রাত, রাতকে দিন করেন — এমন ছেঁদো যুক্তি আর হয় না। এ হেন সম্পাদকদের শরীরী ভাষাও প্রমাণ করে, তাঁরা যা করছেন সোৎসাহে করছেন। কথাটা যেমন টিভি সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে সত্যি, তেমন কাগজের সম্পাদকদের ক্ষেত্রেও সত্যি। কাগজের সম্পাদকদের পাঠক দেখতে পান না, এই যা।

রাজদীপ সরদেশাই ঠিক এখানেই মার খেয়ে গেলেন। এনডিটিভি বা সিএনএন-আইবিএন আমলে যিনি ছিলেন পরিপাটি সাংবাদিক, ইন্ডিয়া টুডের বিভিন্ন শো-তে প্রায়শই তাঁকে অপটু জোকার বলে মনে হয়, কারণ রাহুল বা গৌরবের স্বতঃস্ফূর্ততা তাঁর মধ্যে থাকে না। স্টুডিওর অতিথিরাও লাইভ অনুষ্ঠানে তাঁকে বিজেপি বিরোধী বলে ঠেস দেন, আর তিনি প্রাণপণে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন তিনি নিরপেক্ষ। ভুল হোক আর ঠিক হোক, মানতেই হবে, সাংবাদিকতায় সারা পৃথিবীতেই দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত ধারণা ছিল, সাংবাদিকের একমাত্র দায়বদ্ধতা নিরপেক্ষতার প্রতি। কারণ মনে করা হত নিরপেক্ষ থাকলে তবেই সত্য উদ্ঘাটন করা যায়; পক্ষপাতিত্ব করলে মিথ্যা প্রশ্রয় পায়। উত্তরসত্য (post truth) আর ভুয়ো খবরের যুগে এই সহজ সমীকরণ যে বাতিল হয়ে গেছে, অনেককেই তা এখনো বোঝানো যায় না। রাজদীপবাবু তেমন লোকেদেরই একজন। এঁরা এখনো বোঝেননি, সাংবাদিকের একমাত্র দায়বদ্ধতা সত্যের কাছে, যা এখন অধিকাংশ সময়ে রাষ্ট্রের বিপক্ষে যাবে। কারণ মিথ্যা এখন তার অন্যতম হাতিয়ার। ফলে মতামতহীন সাংবাদিকতার এখন জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ।

লক্ষ করলে দেখা যাবে, রাজদীপ মতামতহীন হয়েই ডুবলেন। ২৬শে জানুয়ারি দিল্লির রাজপথে যে কৃষকের মৃত্যু হয়, তাঁর সম্বন্ধে নিজের চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে উনি পুলিসের বক্তব্য (ট্র্যাক্টর উল্টে মৃত্যু) আর আন্দোলনকারী কৃষকদের বক্তব্য (পুলিশের গুলি ট্র্যাক্টর উল্টে যাওয়ার কারণ) — দুটোই বলেন। আসলে সাংবাদিকের ঠিক তাই করার কথা। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি, তাঁর চ্যানেলের মালিক তা চাইছেন না। তিনি চাইছেন কেবল পুলিসের বক্তব্যটাই প্রচারিত হোক। দেরিতে উপলব্ধি করে রাজদীপ কৃষকদের বক্তব্য জানিয়ে যে টুইট করেছিলেন তা মুছে দেন এবং কারণ হিসাবে পুলিসের বক্তব্য লেখেন। তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। কেবল মালিক শাস্তি দিয়েছেন তা নয়, দুটো রাজ্য সরকার রাজদীপের বিরুদ্ধে (সঙ্গে আরো পাঁচজনের বিরুদ্ধে) রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে এফ আই আর করেছে। এর চেয়ে তিনি কেবল পুলিসের বক্তব্যই বলতে পারতেন।

নির্বাসন এবং মাইনে কাটা যাওয়ার পর, ২৯শে জানুয়ারি হিন্দুস্তান টাইমসে নিজের কলামে রাজদীপ ২৪ বছর বয়সী নবরীত সিং-এর মৃত্যুর জন্য ফের ট্র্যাক্টর উল্টে যাওয়াকেই দায়ী করেছেন। এই শুভ বুদ্ধির উদয়ে তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয় কিনা সেটাই এখন দেখার। ভবিষ্যতে তিনি সরোজ আচার্যের নিম্নলিখিত কথাগুলো মনে রেখে এগোলে হয়ত উভয়সঙ্কট এড়াতে পারতেন। অন্তত যে বাংলা জানা দর্শকরা রাজদীপের নিরপেক্ষতা নিয়ে রুষ্ট, তাঁরা পড়ুন। সমস্যাটা বুঝতে পারবেন। এই কথাগুলো আজও একইরকম সত্যি:

“খবরের কাগজ [পড়ুন সংবাদমাধ্যম] জনসাধারণের সেবক হোক বা না হোক, গোড়ার কথা হল খবরের কাগজ আর পাঁচ রকম জিনিসের মতই ‘প্রপার্টি’ অর্থাৎ সেই প্রপার্টির স্বত্ত্বাধিকার যতক্ষণ সব বিষয়ে শেষ কথা বলতে অধিকারী ততক্ষণ সংবাদপত্রের [সংবাদমাধ্যমের] স্বাধীনতা, জন স্বার্থরক্ষা ইত্যাদি বিষয় প্রপার্টির স্বার্থদ্বারা নিয়ন্ত্রিত।”

https://nagorik.net/ এ প্রকাশিত। ছবি ইন্টারনেট থেকে।

নেমে আসুন ভোটারের সমতলে

ভারতের উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে যখন একজন মানুষ ভোট দিচ্ছেন বা কলকাতার কোন বস্তিবাসী যখন ভোট দিচ্ছেন, তিনি ফ্যাসিবাদের পক্ষে বা বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছেন না।

কিছুদিন পরে পরেই, বিশেষ করে কোন নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে, বিজেপি-বিরোধী মানুষজন সমাজ মাধ্যমে, একান্ত আলাপচারিতায় এবং লিখিত রাজনৈতিক বিশ্লেষণে বিস্ময় প্রকাশ করেন “এত কিছুর পরেও লোকে ওদের সমর্থন করছে!” বা “এত কিছুর পরেও বিজেপি জিতে গেল!” এত কিছু, অর্থাৎ অর্থনীতির ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া; সংখ্যালঘু ও দলিতদের উপর পরিকল্পিত, রাষ্ট্রের আশীর্বাদপুষ্ট হিংসা; আইনশৃঙ্খলার অবনতি; গরীব ও মধ্যবিত্ত মানুষের চরম আর্থিক দুর্দশার পাশাপাশি অতি ধনীদের আরো ফুলে ফেঁপে ওঠা; দুর্বার গতিতে একের পরে এক রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রি হওয়া; দুর্নীতির বৈধতা পেয়ে যাওয়া; সাংবিধানিক অধিকারের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি। ২০২০-তে এর সাথে যোগ হল কোরোনাভাইরাসকে প্রথমে সরকারের পাত্তা না দেওয়া, পরে আচমকা লকডাউন, তার ফলে গরীব দিন আনি দিন খাই মানুষের অবর্ণনীয় জীবনযাপন ও মৃত্যু। তার সাথে যোগ হল চিকিৎসার অব্যবস্থা সম্বন্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের থালা বাজানো, মোমবাতি জ্বালানোর মত গিমিক। কম পরীক্ষা করে রোগীর সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হয়েছে বলেও অনেকের অভিযোগ।

এত কিছুর পরেও বিজেপি নির্বাচনে জেতে। অন্তত উড়ে যায় না। কেন হয় এরকম? দেখা যায় বিজেপির বিরুদ্ধে যাঁরা — রাজনৈতিক দল, চিন্তাবিদ, সাধারণ মানুষ — তাঁরা সকলেই এর কতকগুলো সাধারণ কারণ খুঁজে পান। সেগুলো মোটামুটি এরকম — ১) সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের মুসলমান বিদ্বেষ, ২) বিজেপির অসম আর্থিক প্রতিপত্তি, ৩) বিজেপি আই টি সেলের প্রোপাগান্ডার তীব্রতা এবং ৪) নির্বাচন কমিশনের গান্ধারীবৃত্তি। কেউ কেউ মূল ধারার সংবাদমাধ্যমের বৃহদংশের নির্লজ্জ চাটুকারিতা এবং ক্ষেত্র বিশেষে সরকারের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করাকেও সঙ্গে যোগ করেন।

সব সত্যি। কিন্তু কবির ভাষায় বললে “সত্য, তবু শেষ সত্য নয়।”

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এন ডি এ সরকারের কর্মতৎপরতার যে তালিকা সকলের সামনে রয়েছে, তাতে গত কয়েক মাসে যোগ হয়েছে নতুন কৃষি আইন। এই আইন পাশ করা হয়েছে অভূতপূর্ব অগণতান্ত্রিক উপায়ে এবং এর বলে ভারতীয় কৃষকদের একেবারে কর্পোরেট গোলামে পরিণত করা যাবে। গরীব, নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ভাত ডাল আলুসেদ্ধটুকুর নিশ্চয়তাও উধাও হবে। এর পরেও কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজেপির জনপ্রিয়তায় ধস নামতে দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যে বিজেপির জনপ্রিয়তা যেন ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে বলে অনেকের আশঙ্কা। ফলে যাঁরা দক্ষিণপন্থার ঘোষিত বিরোধী — রাজনৈতিক দলের সদস্য বা পার্টি আনুগত্যহীন ব্যক্তি — যা-ই হোন না কেন, তাঁদের মধ্যে প্রথম অনুচ্ছেদে উল্লিখিত বিস্ময় ক্রমবর্ধমান। এমনকি সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীরাও বলে থাকেন “এত কিছুর পরেও…!” ফলত হতাশা। আর সেই হতাশার কারণে নির্বাচনের ফল বেরোবার পর বিজেপি-বিরোধীরা কিছু ভয়াবহ দক্ষিণপন্থী আচরণ শুরু করেন। যেমন অনেকে বলতে শুরু করেন “মুসলমানগুলো কেন অমুক পার্টিকে ভোট না দিয়ে তমুক পার্টিকে ভোট দিল?” কেউ আবার সমস্ত দোষ ইভিএমের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন (যদিও মনে করার কারণ নেই যে ইভিএম সম্পূর্ণ নির্দোষ)। এই আচরণ সাধারণ সমর্থক থেকে উচ্চস্তরের পার্টি নেতা পর্যন্ত সকলকেই করতে দেখা যায়। এই বিশ্লেষণে “সবাই বিজেপি হয়ে গেছে” — এই বিশ্বাস ক্রমশ ঘাড়ে চেপে বসে, বিজেপির লাভ হয়। কিন্তু এই বিশ্লেষণ একমাত্রিক। বিরোধী বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা ভেবে দেখবেন, নির্বাচনে (বিশেষ করে বিধানসভায়) যে মাইক্রো ইস্যুগুলো কাজ করে, সেগুলোকে এই বিশ্লেষণে অগ্রাহ্য করা হয়। সে কারণেই বিজেপিকে আটকানোর উদ্দেশ্যে বলা হয় “আর যাকে ইচ্ছা ভোট দিন, বিজেপিকে দেবেন না।”

একথা যাঁরা বলেন, বা বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের রামধনু জোটের কথা যাঁরা বলেন, তাঁরা সকলেই ন্যূনতম লেখাপড়া জানেন। শ্রেণীর দিক থেকে মধ্যবিত্ত বা তদূর্দ্ধ। প্রায় সকলেরই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে; নিদেন পক্ষে রাজনীতি, সমাজনীতি, ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান এবং স্পষ্ট মতামত আছে। এঁরা জানেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের মতবাদ ও কার্যকলাপ কতটা ভয়ঙ্কর। ফলে তাঁদের কাছে সব নির্বাচনই হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে ভারতীয়ত্বের লড়াই। বিজেপি যেমন বাইনারি তৈরি করেছে সারা দেশে — দেশদ্রোহী আর দেশপ্রেমিক — অনেকটা একই আদলের আরেকটা বাইনারি এঁদের মনেও তৈরি হয়ে রয়েছে। ভারতের উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে যখন একজন মানুষ ভোট দিচ্ছেন বা কলকাতার কোন বস্তিবাসী যখন ভোট দিচ্ছেন, তিনি যে ফ্যাসিবাদের পক্ষে বা বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছেন না, দেওয়া সম্ভব নয় — একথা বুঝতে সারা দেশের বিজেপি-বিরোধীদের কেবলই ভুল হয়ে যাচ্ছে। এ ভুল না করলে কত দূর লড়া যায়, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে বিহারের নির্বাচনে।

কোন সন্দেহ নেই, যদি দেশের সর্বত্র সবকটা নির্বাচন ভারত ধর্মনিরপেক্ষ থাকবে কি থাকবে না, গণতান্ত্রিক থাকবে নাকি একদলীয় একনায়কতন্ত্র হয়ে যাবে — কেবল এই ইস্যুতে লড়া যেত, তবে চমৎকার হত। দুঃখের বিষয়, তা সম্ভব নয়। তেমন দেশ তৈরি করার জন্য আমরা সঙ্ঘবিরোধীরা ৬৭ বছর (১৯৪৭-২০১৪) সময় পেয়েছিলাম। পারিনি। এখন রাতারাতি ভারতেরে সেই স্বর্গে জাগরিত করতে চেয়ে অ্যালার্ম ঘড়ি বাজিয়ে দিলেই রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে না। আপনি জানেন হিটলার কে, নাজি কারা, ফ্যাসিবাদ কী ক্ষতি করে। আপনার বাড়ির কাজের মেয়ে জানে না। এখন যদি ন্যুরেমবার্গ ল-এর সাথে সাদৃশ্য আছে বলে মোদী সরকারের পাশ করা নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করতে বলেন, সাবধান করেন “আর যাকে ইচ্ছে ভোট দাও, বিজেপিকে দিও না”, তার বয়ে গেছে আপনার কথা শুনতে। কেবল গ্রামের গরীব মানুষ, শহরের বস্তিবাসী বা কাজের মেয়ের কথাই বা কেন? নিজেদের লেখাপড়া জানা আত্মীয়স্বজনদেরই জিজ্ঞাসা করে দেখুন না, ফ্যাসিবাদ কী কজন জানে? যে চেতনা তৈরিই হয়নি, সে চেতনার কাছে আবেদন করে কোন সাড়া পাওয়ার আশা করা কি উচিৎ?

সত্যি কথা বলতে, পৃথিবীর কোথাও কোন নির্বাচনই সম্পূর্ণত মতাদর্শের লড়াই হয় না। হওয়া উচিৎ কিনা তা-ও ভেবে দেখা দরকার। ধরা যাক, একটা দেশের সরকার রাস্তাঘাট সারায়নি পাঁচ বছর ধরে, রোজ দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ তারা দেশের বিজ্ঞানীদের প্রতি মাসে সংবর্ধনা দেয়। এই দলের কি ভোট পাওয়া উচিৎ? গণতন্ত্রে নাগরিকের ভোট দেওয়ার অধিকারই শিরোধার্য, রাজনৈতিক দলের ভোট পাওয়ার অধিকার নয়। ভোটার ঠিক করবেন তিনি কোন কোন ইস্যুর ভিত্তিতে ভোট দেবেন। রাজনৈতিক শক্তিগুলো, সে কোন দল হোক বা ব্যক্তি, ভোটারের মত পাওয়ার জন্য অন্যদের চেয়ে উন্নত হওয়ার চেষ্টা করতে পারে। “আমরা বিজেপি নই, অতএব আপনার ভোট পাওয়া আমাদের অধিকার” — কোন দল এমন বলতে পারে না। বললে সেটাই অগণতান্ত্রিক। যদি কেউ বলে “অমুক দল বিজেপি নয়, অতএব ওকে ভোট দেওয়া আপনার কর্তব্য”, তাহলে তা-ও অগণতান্ত্রিক। কারণ রাজনৈতিক দলের কর্তব্য ভোটারের চোখে নিজেকে অন্যদের চেয়ে উন্নত (অন্তত স্বতন্ত্র) হিসাবে প্রমাণ করা। তা করতে না পারলে, বিজেপির চেয়ে ভাল কোন বিকল্প দিতে না পারলে, ভোটার কেন ভোট দিতে যাবেন?

দেশের অধিকাংশ নির্বাচনেই কিন্তু বিজেপি-বিরোধীরা বিকল্পহীন হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। ভোটারের সামনে বিজেপির অন্যায়গুলোর তালিকা প্রস্তুত করছেন কেবল। নিজেরা তার বদলে কী কী সদর্থক কাজ করবেন, তা বলছেন না। অনেক ক্ষেত্রে আবার বিজেপির রাজনীতিই অনুসরণ করে নির্বাচনে লড়ছেন। মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে যেমন কংগ্রেস গোশালা বানিয়ে দেওয়া, রাম পথ তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জিতেছিল। সরকারটা স্বভাবতই বেশিদিন টেকেনি। আমরা যারা ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, তারা কংগ্রেসের সেই জয়ে উল্লসিত (অন্তত আশ্বস্ত) হয়েছিলাম। গণ্ডগোলটা ওখানেই। বিজেপির নীতি কংগ্রেস নিলে যদি আমাদের আপত্তি না থাকে, কার্টুনিস্টকে তামিলনাড়ু সরকার গ্রেপ্তার করলে যদি আমরা হট্টগোল না করি, আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের উপর তৃণমূল কংগ্রেস সরকার জলকামান চালালেও যদি আমরা চুপ করে থাকি এবং বলি ওরা বিজেপি নয়, তাই ভোট ওদেরই প্রাপ্য, তাহলে বিজেপির হাতই শক্ত হয়। কথাটা আরো বেশি করে সত্যি পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যে, যেখানে বিজেপি কখনো ক্ষমতায় আসেনি। জলকামানে ভিজে যাওয়া ছেলেমেয়েগুলো বা তাদের পরিবার ফ্যাসিবাদ দ্যাখেনি, জলকামান দেখেছে। ত্রিপুরা রাজ্যের চাকরি চলে যাওয়ায় আত্মঘাতী শিক্ষক উত্তম ত্রিপুরার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে তাদের বিজেপিকে ভোট দেওয়া থেকে নিরস্ত করা কি সম্ভব তখন আর?

এ রাজ্যে এখন পর্যন্ত লড়াইটা বিজেপির ইউটোপিয়া বনাম বিরোধীদের ইউটোপিয়া। বিজেপি সোনার বাংলার কথা বলছে। সে বাংলায় কর্মসংস্থান কী করে হবে বলছে না। আলটপকা ৭৫ লক্ষ চাকরির কথা বলেই ঢোঁক গিলেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের সমস্যা জানতে এবং মেটাতে সরকারকে দুয়ারে দুয়ারে নিয়ে গেছে, অথচ কর্মসংস্থানের সমস্যা নিয়ে মুখে কুলুপ। বহুকাল ধরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে নিয়োগ নিয়ে চলতে থাকা অচলাবস্থার কোন স্থায়ী সমাধানের কথা সরকার বলছে না। কেবল এক প্রস্থ নিয়োগের ঘোষণা হয়েছে। তৃণমূল বরং বিজেপির ইউটোপিয়ার বিপক্ষে দাঁড় করিয়েছে এমন এক বাংলার ইউটোপিয়া, যার ইতিহাসে কেবল রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, রামমোহন, নজরুল, লালন, ডিরোজিও, মাইকেল মধুসূদনরা আছেন। একে ইউটোপিয়া বলছি, কারণ বাংলায় এঁদের পাশাপাশি তারাও ছিল যারা রামমোহনের বিরোধিতা করেছিল, বিদ্যাসাগরকে খুনের চেষ্টা করেছিল, নজরুল সম্বন্ধে বলত “ফার্সি শব্দে কবিতা লেখে! সবে দাও পাজিটার জাত মেরে।” ডিরোজিওকে হিন্দু কলেজ (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে তাড়িয়ে ছেড়েছিল বাঙালিরাই। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির কথা তো সকলেই জানে। এই ইউটোপিয়ার লড়াইয়ে বিজেপিকে পরাস্ত করা শক্ত। এমনিতেও এই ইউটোপিয়াগুলো অধিকাংশ মানুষকে ছুঁতে পারছে না।

তৃতীয় পক্ষ বাম-কংগ্রেস জোট এসবের বাইরে গিয়ে বলবেন কি, কী হবে রাজ্যের ধুঁকতে থাকা স্কুলশিক্ষার? স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা কি আবার স্বমহিমায় ফেরত আসবে তাঁরা ক্ষমতায় এলে? রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের পাওনাগন্ডারই বা কী হবে? সারা দেশের কৃষকদের সাথে এদেশের কৃষকরাও তো স্বখাতসলিলে ডুবছেন। তাঁদের জন্যই বা কী পরিকল্পনা? শিল্পায়ন নিয়ে কী চিন্তা ভাবনা তাঁদের? ওটা না হলে গরীব মানুষের কর্মসংস্থানের কী হবে? কেন্দ্র যেভাবে রাজ্যের প্রায় সব ক্ষমতাই কেড়ে নিচ্ছে, সরকারে এলে কিভাবে লড়বেন তার বিরুদ্ধে?

শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সর্বত্রই বিজেপি বিরোধীদের বিকল্প কর্মসূচী হাজির করতে হবে, নতুন দিনের স্বপ্ন দেখাতে হবে। সরকারের অন্যায় তুলে ধরা, সমালোচনা করা বিরোধীদের একটা কাজ। একমাত্র কাজ নয়। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ নিরাশ হয়ে পড়তে পারেন। বিরোধী রাজনীতি কিন্তু নৈরাশ্যবাদের জ্বালানিতে চলে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। ভোটারের চারপাশের বাস্তব পরিস্থিতি, তার কাছে জরুরী ইস্যুগুলো কী, সেসব না ভেবে যদি লাল, সবুজ, ধূসর সব রং মিলে গিয়ে এমন একটা ইস্যুতে লড়াই করে — যা অধিকাংশ ভোটারের কাছে কোন ইস্যুই নয়, তাহলে দক্ষিণপন্থা জিতেই চলবে। আমি ইউটোপিয়ায় প্রাণপণে যা-ই চাই না কেন।

%d bloggers like this: