
পূর্বকথা: হায়দরাবাদে বসে সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করতে গিয়ে এই উন্নত শহরের পথে এত ভিখারী কেন সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না বিপ্লব। স্থানীয় ছেলে শাহনওয়াজ বলে, যত উন্নয়ন সব রাজধানীতেই। বাকি অন্ধ্রপ্রদেশ অন্ধকারে ডুবে আছে। ভিখারীরা সেখান থেকেই আসে। উন্নয়ন মানে তবে কী? বিপ্লব নিজেকে প্রশ্ন করে। উত্তর মনকে শান্ত করে না।
জীবনটা শেষ হয়ে আসছে বোধ হলে হিসাবনিকাশ করতে ইচ্ছে করে। রবীনের এই ইচ্ছেটা ইদানীং ঘনঘন হয়। নিশ্চিন্ত সন্ধ্যায় সবুজগ্রামের শুনশান ভেতরের রাস্তাগুলো দিয়ে সাইকেল চালাতে চালাতে বা জমজমাট থান রোডে হাঁটতে বেরিয়ে, হরিমতীর ঝিলের ধারে বসে একা বিড়ি খেতে খেতে, কখনো বা বাড়িতেই আগাথা ক্রিস্টি কি বিপ্লবের তাকে রাখা পুরনো শারদীয়া আনন্দমেলার গোয়েন্দা গল্প পড়তে পড়তে একঘেয়ে লাগলে রবীন হিসাব করে। কোন ঘটনাটার কথা ভাবলে গর্ব হয়, কোন দিনটার কথা ভাবলে এখনো কান্না পায়, কোন দিনটায় আবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে, কোন রান্নার স্বাদটা এখনো মুখে লেগে আছে, কোন গন্ধটা এত বছর পরেও টাটকা — এইসব।
কোন কোন ঘটনা স্মৃতিকে বড় উসকে দেয়। সেদিন গোটা দিনটাই কেটে যায় ওসব মনে করে আর হিসাবনিকাশ করে। সেইসব দিনে রবীন বুঝতে পারে সে অকেজো হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। বুকের ভেতরে হালকা কিন্তু অবিরাম একটা ব্যথা হয়, মাথাটাও টিপটিপ করে। মনে হয়ে এ ঘর থেকে ও ঘরে হেঁটে যাওয়ার শক্তিও নেই আর। তখনই একটা বিড়ি ধরাতে পারলে ব্যথাটা কমে। তেমন দিন বেশ ঘনঘন এসেছে গত পাঁচ-ছয় বছরে। প্রত্যেকবারই নিজের শক্তির উপরে জোর আরো কিছুটা কমে গেছে রবীনের। অবশ্য সে কথা বুঝতে দেয়নি কাউকে — জোনাকিকে তো নয়ই। সবচেয়ে খারাপ দিন গিয়েছিল বছর দেড়েক আগে মার্চে। সেই যেদিন নন্দীগ্রামে মানুষের প্রাণ গেল।
স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা তিনটে অব্দি। তাই সেদিন গার্ড দিয়ে অন্য দিনের চেয়ে তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরছিল রবীন। হঠাৎ পেছন থেকে “স্যার, স্যার” চিৎকার শুনে ঘুরে তাকিয়ে দ্যাখে ছাত্র সুবিমল দৌড়তে দৌড়তে আসছে। সামনে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল “দেখেছেন স্যার? নন্দীগ্রামে কী হয়েছে?”
“কী রে?”
“ও মা! আপনি শোনেননি? পুলিশ গুলি চালিয়ে দিয়েছে। এগারো জন…”
বুকের ভেতরটা ধক করে উঠেছিল। ওখান থেকে বাড়ি পৌঁছতে মিনিট দশেকের বেশি লাগে না। সেটুকুও তর সইছিল না। ঝট করে মাথায় এল, পাশের গলিটাতেই পার্টি কমরেড বাদলের বাড়ি। “আয় তো,” বলে সুবিমলের হাতটা ধরে গলিতে ঢুকে পড়ে রবীন। বারান্দায় ওদের দেড় বছরের মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বসেছিল বাদলের বউ। রবীন গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে বলল “বৌমা, বাদল বাড়ি আছে?”
“আছে তো। আসুন না।”
বাদলের বউ ওকে ডেকে আনতে আনতে রবীন সুবিমলকে জিজ্ঞেস করে “তুই কোত্থেকে জানলি রে?”
“আমার তো আজকে পরীক্ষা ছিল না, তাই মা কাজ করে ফিরল, তারপর খেতে বসলাম। পাশের বাড়ি টিভি চলছিল, শুনতে পেলাম। গিয়ে দেখলাম একটু। দেখেই আপনার বাড়ি দৌড়েছি। জেঠিমা বলল আপনি স্কুলে। গিয়ে শুনি আপনি বেরিয়ে এসছেন…”
“আসুন, আসুন, রবীনদা।” বাদল তালা খুলতে বেরিয়ে আসে।
“তোর টিভিটা একটু দেখা যাবে রে?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।”
সুবিমলকে নিয়ে ওদের ড্রয়িংরুমে ঢুকে নরম সোফায় বসে রবীন। “খুব ঘেমে গেছেন। এসিটা চালিয়ে দিই?” বাদল জিজ্ঞেস করে।
“না রে, এসি লাগবে না। তুই টিভিটা চালা।”
“হ্যাঁ, সে তো চালাবই। কী দেখবেন? কোন খেলা টেলা?”
“সুবিমল কোন চ্যানেলে দেখেছিস বললি?”
“ঐ ২৪ ঘন্টা কি স্টার আনন্দ, কিছু একটা দিন।”
বাদল চালিয়ে দেয়। ভেতরের দরজায় দাঁড়ানো ওর বউ বলে “এসিটা চালিয়েই দাও। দাদা দরদর করে ঘামছেন।” বাদল একবার রবীনের দিকে তাকায়। ও টিভিতে চোখ রেখে অন্যমনস্কভাবে বলে “আচ্ছা, বৌমা বলছে যখন।”
সামনে তখন যা চলছে তা রবীনের বিশ্বাস হতে চায় না। মাঝেমাঝে ঘাড় ঘুরিয়ে ও সুবিমলকে দ্যাখে। শান্ত ছেলেটা ভীষণ উসখুস করছে। রবীনের মনে হয় ছেলেটার কাছে যেন ভীষণ ছোট হয়ে যাচ্ছে ও। গত এক দেড় বছরে মার্কসবাদ নিয়ে, বামপন্থী রাজনীতি নিয়ে যত কথা সে ওকে বলেছে, যত বই পড়তে দিয়েছে, সব জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। কী করে, কী করে ওকে বোঝাবে রবীন যে এটাই মার্কসবাদ নয়, বামফ্রন্ট সরকার এই জন্যে তৈরি হয়নি? এখান থেকে বেরিয়ে ওর প্রশ্নের কী জবাব দেবে রবীন? এটা প্রশাসনিক কর্তব্য ছিল বলবে? নাকি বলেই দেবে এটা অন্যায় হয়েছে? সে তো একজন পার্টিকর্মী। প্রকাশ্যে পার্টিবিরোধী কথা কি বলা উচিৎ তার? কিন্তু না বললে মাস্টারমশাই হিসাবে অন্যায় হবে না? মার্কসবাদী হিসাবেও কি দায়িত্ব পালন হবে? সুবিমল যখন আরো পড়বে, রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আরো শিখবে, তখন এই দিনটার কথা মনে করে ও ভাববে না তো, স্যার সেদিন প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ করেছিলেন? বা সত্যি কথা বলেননি? অবশ্য এসব দেখার পরে কি আর বিশ্বাস করে এই পার্টিতে আসবে ও? বিপ্লবের মত ওরও রাজনীতিতে বিতৃষ্ণা জন্মাবে না তো?
এইসব সাত পাঁচ ভাবছে, হঠাৎ বাদল বলে “এদের নিয়ে আর পারা গেল না। কবে বলে দেয়া হয়েছে ওখানে হাব ফাব কিছু করা হবে না। তাও শালারা ঝামেলা করেই যাচ্ছে। এখন হল তো?”
রবীন কিছু বলে ওঠার আগেই সুবিমল বলে “মানে? আপনি বলছেন গুলি চালানোটা ঠিক হয়েছে!”
“তা কী করবে তুমি বলো? আইন শৃঙ্খলা বলে তো আর কিছু রাখেনি ওখানে। প্রশাসন কতদিন সহ্য করবে?”
সুবিমল কী বলবে ভেবে না পেয়ে রবীনকে জিজ্ঞেস করে “স্যার, আপনিও কি তাই বলছেন?”
রবীন অস্ফূটে বলে “সবই বুঝলাম। কিন্তু… গুলি?”
“আরে রবীনদা, আপনি ভাবছেন ওরা সব নিরস্ত্র ছিল? নির্ঘাত ওরাও কিছু করেছে। পুলিশ আর এমনি এমনি গুলি চালাবে কেন?”
রবীনের তখন থেকেই শরীরটা খারাপ লাগতে শুরু করে। এসিতে বসে ঘাম শুকিয়ে এসেছিল। কিন্তু বুকের ভেতরটা কেমন ধড়ফড় করতে শুরু করে। “একটু জল… হবে রে?” খুব কষ্ট করেই করতে হয় প্রশ্নটা।
“হ্যাঁ হ্যাঁ, জল কেন? সোমা তো শরবত আনতে গেল,” বলতে বলতে উঠে পড়ে বাদল। তখুনি সুদৃশ্য কাঁচের গ্লাসে ঠান্ডা, কমলা রঙের শরবত নিয়ে বাদলের বউ ঘরে ঢোকে। ট্রেটা টেবিলে রাখতেই সুবিমল একটা গ্লাস তুলে নিয়ে রবীনের ঠোঁটে ধরে। কয়েকটা চুমুক দিয়ে একটু ভাল লাগে। চোখটা চলে যায় শেলফের ভেতরে রাখা একটা বাঁধানো সাদা কালো ছবির দিকে।
“তোর জ্যাঠার ছবি না?” রবীন আঙুল তুলে প্রশ্ন করে বাদলকে।
“হ্যাঁ। মারা যাওয়ার কদিন আগেই তোলা। বোধহয় বাবাই তুলেছিল।”
“মারা যাওয়ার আগে কী রে!” চমকে যায় রবীন। “নিবারণদা এখানকার সাড়া জাগানো সিটু নেতা ছিল। কুড়াইল জুটমিলের স্ট্রাইক ভাঙার জন্যে পুলিশ গুলি করে মেরেছিল তোর জ্যাঠাকে। লুকিয়ে চুরিয়ে নয়, দিনের আলোয়। মিছিলের মধ্যে। তোর তখন কত বয়স?”
“আমার? এগারো বারো হবে…”
“তবে? তা’লে তো ভোলার কথা না!”
“না, ভুলিনি।”
“ভুলিস না, বাবা। এইসব ভুলে যাস না। তুই পার্টি মেম্বার, তুই-ই যদি ভুলে যাস, সাধারণ মানুষকে আমরা কী বোঝাব?”
রবীন এক চুমুকে বাকি শরবতটা শেষ করে। সুবিমলকে বলে “নে, এবার তোরটা শেষ করে নে চট করে। উঠব।”
বাদল বলে “আরেকটু বসে যান না? যা রোদ।”
“রোদে আমার কষ্ট নাই। এখনো অত বুড়ো হই নাই।”
সুবিমলও ঝটপট শেষ করে ফ্যালে গ্লাসটা। দুজনে বেরিয়ে আসে রাস্তায়। আজকাল পুরনো কাঁপার রোগটাও যে বেড়েছে, সেটা উত্তেজনা হলে বেশ বুঝতে পারে রবীন। সারা শরীর কাঁপতে শুরু করে। গলাটাও কাঁপতে শুরু করেছে বলে বছর তিনেক হল ক্লাবের যাত্রায় অভিনয় করা ছেড়ে দিয়েছে। সুবিমল বোধহয় বুঝল স্যারের শরীরটা ভাল নেই। “এতটা হেঁটে যাবেন? রিকশা ডাকি, স্যার?”
অন্য সময় হলে পাত্তা দিত না রবীন। কিন্তু সেদিন কেমন ভরসা পাচ্ছিল না। “এই ভরদুপুরে কি রিকশা পাবি?”
“ঐ তো নান্টুর বাবা আসছে।” সুবিমল সহপাঠীর বাবা রিকশাচালককে দাঁড় করায়।
“মাস্টারমশাই আইজ রিকশায় উঠতাছেন? শরীলডা খারাপ নাকি?” সে জিজ্ঞেস করে।
“না রে,” রবীন উঠে বসে বলে। “আসলে বুড়ো হইতাছি। বয়স তো কম হয় নাই।”
“হ। আর যা রোদ উঠছে। বিমল, ঢাকাডা তুইল্যা দে, বাপ।”
সুবিমল হুডটা তুলে দিতেই রবীনের মনে হয় যেন জ্বলন্ত কড়া থেকে কেউ শেষ মুহূর্তে তুলে আনল। কিন্তু মাথাটা টিপটিপ করতে শুরু করে। এখুনি একটা বিড়ি ধরানো দরকার। পকেটে হাত দিয়ে দ্যাখে বিড়ি একটা আছে বটে, লাইটারটা নেই। কোথায় যে গেল!
“আগুন আছে রে, রতন?”
রিকশা চালাতে চালাতেই রতন লুঙ্গির কোমরে রাখা দেশলাই বার করে দেয়। রবীন একটা টান মারতেই সুবিমল বলে “জেঠিমা এত করে বলছে, তাও আপনি এটা ছাড়ছেন না। এটা কিন্তু শরীরের ক্ষতি করছে।”
রবীন শুধু একটু হাসে। একটা টান মারতেই এই যে মাথা ব্যথা উধাও হয়ে গেল, এই উপকারিতা যে খায় না সে বিশ্বাসই করবে না। রতনও বলে “পোলায় ঠিকই কইছে কিন্তু। আপনে য্যান আজকাল আরো বেশি খাইতাছেন। ঠিক না?”
“তুমি আমারে জ্ঞান দিতাছ, নিজে খাও ক্যান?” রবীন পালটা প্রশ্ন করে। “আমি তো শুধু বিড়ি খাই। তুমি যে আরো কী কী খাও আমি জানি না?”
রতন হেসে বলে “আপনার কাছে কি আর কিছু গোপন থাকে, মাস্টারমশাই? কিন্তু আমাদের সারাডাদিন যা খাটুনি। কোন নেশা ছাড়া কি বাঁচতে পারুম, কন? তাছাড়া আমাগো ছোটলোকের জীবনের আর কী দাম? আপনের জীবনের দাম আছে।”
কথাটা একেবারে তীরের মত এসে লাগে রবীনের গায়ে। সে বলে “কিস্যু দাম নাই। ঐসব তোমরা ভাবো। আমার কোত্থাও এক পয়সা দাম নাই।”
“আমাদের কথাই তো কইলাম,” এমনভাবে বলে রতন, যেন ও জানত রবীন কী বলবে। “আমাদের কাছে আপনের জীবনের অনেক দাম। হেইডাই কইলাম।”
“ক্যান রে?” যেন খানিকটা প্রশংসা শোনার লোভেই রবীন খোঁচায়। “আমার তো কোন ক্ষ্যামতাই নাই এহন? আমি বাইচ্যা থাকলে কী লাভ তগো?”
“ক্ষ্যামতা লাগে না তো। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াইতে কি ক্ষ্যামতা লাগে? আপনারে তো একডা সৎ পরামর্শ দ্যাওয়ার জইন্যে পাই। আর কারে পাই? আমাগো পোলা, মাইয়াগুলারে আপনে তো আলাদা কইরা, যত্ন কইরা পড়ান। আপনের জীবনের দাম কি কম?”
রবীন ভেবেছিল শুনে ভাল লাগবে। উল্টে অপরাধ বোধ হয়। কমিউনিস্ট পার্টির একজন সদস্যের কাছে এত অল্প প্রত্যাশা গরীব মানুষের! তিরিশ বছর শাসনের পরে!
বাড়িতে এসে নামতে নামতে কাঁপুনিটা কমে যায় রবীনের। বারান্দায় জামাকাপড় মেলতে মেলতে জোনাকি অবাক হয়ে তাকায়।
“কী গো! রিকশায় এলে, সাথে সুবিমল? কী হয়েছে রে, বাবা? স্যারের শরীর খারাপ?”
“আসলে ঐ… একটু বেশি উত্তেজনা হয়েছে তো..”
“কেন? কী হল?”
“ঐ যে নন্দীগ্রামে গুলি চলেছে…”
ওদের কথাবার্তায় পাত্তা না দিয়ে রবীন পাঞ্জাবিটা খুলে ফ্যানের তলায় মেলে দেয়, শরীরটা বেতের চেয়ারে ছেড়ে দিয়ে জোনাকিকে বলে “ছেলেটা এই রোদের মধ্যে দৌড়ে দৌড়ে ওদের বাড়ি থেকে স্কুল গেছে, আবার সেখান থেকে আমাকে খুঁজতে বাদলদের পাড়া অব্দি চলে এসেছিল। ওকে কিছু একটা খেতে দাও।”
“সে দিচ্ছি। কিন্তু তোমার কী হয়েছে ঠিক করে বলো।”
“আরে কিচ্ছু হয়নি। বলল শুনলে তো।”
“স্যার, আমি এখন কিছু খাব না। একটু আগেই ভাত খেয়েছি বললাম না? আমি এখন যাই।”
“দাঁড়া। একটু গ্লুকোজের জল খেয়ে যা।” জোনাকি কড়া গলায় বলে রান্নাঘরে চলে যায়।
গোটা রাস্তা কিছু জিজ্ঞেস করেনি, এবার সুবিমল বলে “স্যার, তাহলে কাজটা ঠিক হয়নি তো?”
রবীন কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকে। কিন্তু এ প্রশ্ন এড়ানোর কোন উপায় যে নেই।
“মানুষ মরেছে। সেটাকে আর কী করে ঠিক হয়েছে বলি, বল? তবে কী করে যে কী হয়ে গেল সে তো ঠিক বুঝতে পারছি না… ওরা যে দীর্ঘ দিন প্রশাসনের কাউকে ঢুকতে দিচ্ছিল না সেটাও ঠিক। তবে… একেবারে গুলি চালিয়ে দিল!”
“তাহলে বামফ্রন্ট সরকার এটা অন্যায় করল তো?”
“হ্যাঁ… তা… অন্যায় তো হলই। এতগুলো লোক মারা গেল। কারো অন্যায় নেই বললে তো চলবে না।”
বলতে বলতেই শরীরটা কেমন ছেড়ে দেয়। রবীন বলে “তুই গ্লুকোজটা খেয়ে সাবধানে বাড়ি যা, বাবা। আমি একটু শুই গিয়া।”
চেয়ার থেকে উঠতে গিয়েই ধপ করে বসে পড়ে। সুবিমল চমকে উঠে দাঁড়ায়। রবীন বলে “একটু ধর তো, বাবা। ঠিক জোর পাচ্ছি না।” ও ধরে ধরে ভেতরের ঘরে নিয়ে এসে খাটে বসিয়ে দেয়। পিঠটা বিছানায় ঠেকিয়ে রবীন জিজ্ঞেস করে “কাল কী পরীক্ষা?”
“ইতিহাস, স্যার।”
“হুম। বাড়ি গিয়ে মন দিয়ে পড়, বাবা।”
সুবিমল একটা বালিশ গুঁজে দেয় মাথার নীচে। পাশ ফিরতে ফিরতে ঘুম এসে যায় রবীনের।
ঘুম ভাঙতে কতক্ষণ কেটেছে ঠিক বুঝতে পারে না রবীন। আলোটা নেভানো বলে ঘড়িটা দেখা যায় না। পাশের ঘর থেকে টিভির শব্দ কানে আসে। আর ঘুম হবে না জেনেও উঠতে ইচ্ছে করে না। শুয়ে শুয়ে রবীন আবার ঝালিয়ে নেয় সুবিমলের প্রশ্নটা — বামফ্রন্ট সরকার কি অন্যায় করল? ভাবতেই মনে পড়ে যায় জ্যোতিবাবুর কথাগুলো। সেই সাতাত্তর সালের বাইশে জুন রেডিওতে যে কথাগুলো শুনেছিল। অক্ষরে অক্ষরে মনে আছে।
“বামপন্থী ফ্রন্ট সরকার আমলাতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা পরিচালিত হবে না। সাধারণ মানুষ এবং তাঁদের সংগঠনগুলির সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমেই কাজ করার চেষ্টা করব আমরা। এই সরকার নিপীড়ন চালিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভাঙবে না… পুলিসকে আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করার কাজে ব্যবহৃত হতে দেব না।” কথাগুলো মনে করতে করতে রবীনের মনে হয়েছিল আর বুঝি উঠে দাঁড়াতে পারবে না সে।
ভাল লাগলে টাকা দিতে পারেন Google Pay / Paytm / BHIM বা অন্য UPI অ্যাপের মাধ্যমে journopratik@okhdfcbank কে
অথবা
নেট ব্যাঙ্কিং বা অন্য উপায়ে নিম্নলিখিত অ্যাকাউন্টে
Pratik Bandyopadhyay
A/c No. 14041140002343
HDFC Bank
Branch: South Calcutta Girls’ College
IFS Code: HDFC0001404
MICR Code: 700240048