যারা ইতিহাস বিস্মৃত হয়

যদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা আলাদা করে বলেন তাহলে বলি ভারতবর্ষে ঐ অপরাধে কঠোর শাস্তি কারোরই হয় না। উল্টে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোক হলে নায়ক হয়ে যাওয়া যায়, মন্ত্রীও হওয়া যায়। বলুন তো বাল ঠাকরে শিয়া না সুন্নি? বাবু বজরংগি কি মুসলমান? মায়া কোদনানি? জগদীশ টাইটলার? সজ্জন কুমার? লালকৃষ্ণ আদবানি? উমা ভারতী?

আমি হিন্দু। কিন্তু আমি আজহারের ব্যাটিং দারুণ ভালবাসতাম। ও ফিক্সিং করেছে শুনে ভীষণ দুঃখ পেয়েছিলাম। মহম্মদ রফি আমার খুব ভাল লাগে, অনেকসময় কিশোরের চেয়েও বেশি। বিরিয়ানি আমার সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য। আমার অনেক মুসলমান বন্ধু আছে। অতএব প্রমাণিত হল যে আমি সাম্প্রদায়িক নই। সুতরাং আমি একথা বলতেই পারি যে আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর থেকে সব রাজনৈতিক দলই সংখ্যালঘু তোষণ করে এসেছে। সবেতেই ওদের বেশি সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে, ওদের দোষগুলো সব ঢেকে রাখা হয়। এখনো ওরা যা ইচ্ছে মারদাঙ্গা করে, তাতে দোষ হয় না। মিডিয়া পর্যন্ত ওদের দোষ চেপে দেয়।

উপর্যুক্ত কথাগুলো যদি আপনার মনের কথা হয় তাহলে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনি মোটেই অসাম্প্রদায়িক নন। বরং আপনি যুক্তি বা তথ্যের ধার না ধারা একজন মানুষ যিনি আবেগ দিয়ে সবকিছু বিচার করেন। আর্থসামাজিক মানদন্ডগুলোর প্রায় সবকটাতে মুসলমান সম্প্রদায় দেশের সবথেকে পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়। সরকারী চাকরিতেও। আমি বলছি না। ভারতের একমাত্র প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ পার্টির মন্ত্রী সংসদে বলেছেন। এই দেখুন https://www.google.co.in/…/muslim-working-proportion…/lite/…

এই যখন ঘটনা তখন সংখ্যালঘু তোষণটা হল কখন আর তার সুবিধাটা পেল কে?
এই যে বলছেন ওরা মারদাঙ্গা করলে কোন দোষ হয় না সেই নিয়েও বলা যাক তাহলে। ২০০১ এর জনগণনা অনুযায়ী আমাদের জনসংখ্যার ১৩% মুসলমান অথচ ঐসময়ে বিভিন্ন জেলে বন্দী ছিল যারা তাদের ২২% মুসলমান। নিজেই পড়ে দেখুন http://m.timesofindia.com/…/Muslim…/articleshow/45253329.cms

যদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা আলাদা করে বলেন তাহলে বলি ভারতবর্ষে ঐ অপরাধে কঠোর শাস্তি কারোরই হয় না। উল্টে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোক হলে নায়ক হয়ে যাওয়া যায়, মন্ত্রীও হওয়া যায়। বলুন তো বাল ঠাকরে শিয়া না সুন্নি? বাবু বজরংগি কি মুসলমান? মায়া কোদনানি? জগদীশ টাইটলার? সজ্জন কুমার? লালকৃষ্ণ আদবানি? উমা ভারতী?

এবার আসুন মিডিয়ার কথায়। প্রথমত মিডিয়া কোন একটি সংস্থা নয়। প্রত্যেক মিডিয়া হাউসের নিজস্ব মতামত, কার্যপদ্ধতি, স্বার্থ আছে। সকলেই সেই অনুযায়ী খবর পরিবেশন করে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বলতে সেটাকেই বোঝায়। ফলে খবরের সত্যতা যাচাই না করে যা ইচ্ছে লিখে, দেখিয়ে বাজার গরম করে এমন কাগজ এবং চ্যানেল যেমন আছে তেমনি দায়িত্বশীল গণমাধ্যমও আছে। ভারতীয় সাংবাদিকতার যে অবনমন হয়েছে তা নিয়ে আজ কোন ঢাকঢাক গুড়গুড় নেই। তবু এখনো প্রায় সব কাগজ বা টিভি চ্যানেলই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ক্ষেত্রে কয়েকটা নিয়ম মেনে চলে। যেমন কোন সম্প্রদায়ের লোক কোন সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করেছে তা উল্লেখ না করা, কাদের বেশি ক্ষয়ক্ষতি, কাদের কম এসব আলোচনা না করা, সর্বোপরি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ পরিস্থিতি যতক্ষণ না প্রশাসনের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে ততক্ষণ তেমনভাবে রিপোর্টই না করা। কারণ দেখা গেছে তাতে উত্তেজনা নতুন নতুন এলাকায় ছড়ায় এবং দাঙ্গাবাজদের কাজ সহজ হয়। আজকাল অবশ্য অনেকেই মনে করছেন সোশাল মিডিয়ার এই যুগে এই পদ্ধতি অচল। এতে বরং যা নয় তাই গুজব ছড়ানোর ফাঁকা ময়দান তৈরি হয়। এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। কিন্তু মনে রাখবেন মিডিয়া দেখাচ্ছে না মানে কিন্তু শুধু সংখ্যালঘু নয়, সংখ্যাগুরুদের কুকর্মগুলোও চাপা পড়ে থাকছে। আপনি হোয়াটস্যাপে যে ভিডিওটা দেখে লাফাচ্ছেন সেটাই একমাত্র সত্য নয়।
এত কথা বলছি মানে যে আমি আপনাকে দাঙ্গাবাজ বলছি তা নয়। এমন হতেই পারে যে আপনি যা বলছেন সরল বিশ্বাস থেকেই বলছেন। মানে আপনি সত্যিই বিশ্বাস করেন যে কথাগুলো সাম্প্রদায়িক নয়। আমি আপনার সেই বিশ্বাসটাকেই প্রশ্ন করছি। ভেবে দেখুন তো আপনি সেই জার্মানদের মত হয়ে যাচ্ছেন না তো যারা নাজিদের এই প্রোপাগান্ডায় বিশ্বাস করেছিল যে ইহুদীরাই জার্মানির সমস্ত দুর্দশার কারণ? তারপর কী হয়েছিল সেটা ইতিহাস। রক্তাক্ত, লজ্জাকর ইতিহাস। সে ইতিহাস ভুলে যাচ্ছেন না তো? জার্মান ভাষায় একটা প্রবাদ আছে “যারা ইতিহাস বিস্মৃত হয়, তারা অভিশপ্ত। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি তারা করবেই।”